মঙ্গলবার ৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২
রবিবাসরীয়...
প্রকাশ: রোববার, ৪ মে, ২০২৫, ১:২৮ এএম আপডেট: ০৪.০৫.২০২৫ ২:১০ এএম |




দিগন্তবিস্তারী এক নিভৃতচারী




রবিবাসরীয়...










।। ইয়াসমীন রীমা ।।


জাকির আজাদ। এক মেধাবী সদা হাস্যজ্জ¦ল মিষ্টভাষী হিসেবে সুখ্যাত। আমাদেরএই ভুখন্ডে যে ক’জন লেখক ছড়াসাহিত্যকে তাঁদের লেখনির মাধ্যমে জনপ্রিয় করেতুলেছেন তাদের একজন জাকির আজাদ। বিষয়ের অভিমত্বে এবং প্রকাশভঙ্গির সাবলীলতায়তিনি অনেকের প্রিয় ছড়াসাহিত্যিক। তিনি যেমন ছোটদের জন্য অসংখ্য ছড়ালিখেছেন তেমনি লিখেছেন সামজমনস্ক প্রচুর ছড়া দুঃখ,বাস্তবতা উপদেশেরমিথস্ক্রিয়ায় বিস্ময়কর প্রতিভা আর লাগাতার সাধনা প্রতিমুর্তি জাকির আজাদ।দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকার সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনসহ ডেইলি বাংলাদেশটুডে, ডেইলি স্টার দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র। নব্বইয়ের উত্তাল সেই সময়ে নিজের শহরকুমিল্লা থেকে বন্ধুবরেষু নিজামউদ্দিন মোল্লাস পুথিপত্র প্রেসের তত্ত্বাবধানে একটিজনপ্রিয় প্রকাশনা বের করে। আটপৃষ্টার অফসেটে ট্যাবলয়েড পত্রিকা পাক্ষিক সচিত্র ”আবহমান-এর প্রধান সম্পাদক হিসাবে আর্বিভাব ঘটে। নতুন ধারারসাংবাদিকতায় পত্রিকাটি হয়ে ওঠে তারুণ্যের সম্মিলন স্থল। অর্থনৈতিক দৈন্যতায়১৯৯৪সালে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হলেও ৯৫সালের শুরুতে অভিমত প্রকাশের উন্মুক্তসাপ্তাহিক শ্লোগান নিয়ে তার তরুণ-তুর্কী সাঙ্গপাঙ্গসহ একটি লিমিটেডকোম্পানির তত্ত্বাবধানে পাঠক নন্দিত সাপ্তাহিক পাঠক বার্তার পত্রিকার প্রধানসম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৪ সাল পর্যন্ত। বাংলাসাহিত্যের খ্যাতিমানছড়াশিল্পী জাকির আজাদ। তাঁর জীবন আলোকিত হয়েছে সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে।জনপ্রিয় পদবী তার ছড়াকার হিসেবে। কিন্তু সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই তার সমানবিচরণ। তাছাড়া যেমন সর্বত্রগামী হৃদয়গামী সহজবোধ্য, জনসচেতনামূলক,সংগ্রামী,প্রতিবাদী, শিশু মনজয়ী সাহিত্যের অন্যান্য শাখাগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা বলাযায়। তাঁর একটা বিশাল গুণ-আশেপাশে যতই কোলাহল থাকুক না কেনো তিনি যেকোনো জায়গায় বা পরিবেশে বসে গভীর মনোযোগ সহকারে লিখতে পারেন।ছড়া, কবিতা বিচিত্র উপলদ্ধি আর অনুভবের গভীরতা এবং নানা অনুষঙ্গেরসংমিশ্রনে অনুরাগের এক ভিন্ন আবহ নির্মিত হয়। উপলদ্ধির দেয়াল ছাপিয়ে জাকিরআজাদ তার সৃষ্টির পথ চলায় নির্মানের বাঁকে বাঁকে কাব্যময়তা ছড়িয়ে অনন্য সবসৃষ্টি নির্মান করেন যা আমাদের শ্রবনশক্তিকেই শুধু পরিশীলিত মনের আরধ্য সব ভাবনা,অনুভবের সংবেদনশীল নানা ইমেজ সেইখানেই জাকির আজাদ স্বতস্ত্র। ছড়া সমাজের দর্পণ। সময়ের দর্পণও। লোকদর্পনেও বটে। সমাজ ও সময়ের নানাঘটন,অঘটন,শোষন,নিপীড়ণ, বঞ্চনা সংঘাত দ্বন্দ্ব ও বিরোধ সবই উৎসারিত হয়েছে তারছড়ায়। ছড়ার প্রতি তার দরদ ও আন্তরিকতা এতো বেশি যে , তিনি গল্প কবিতা উপন্যাসের চেয়ে ছড়াই বেশি রচনা করেছেন।মানুষ মানুষের জন্য। ছড়া লেখকও মানুষ। সুতরাং ছড়া মানুষের জন্যে। তাছাড়া আরএকটি দিকও ভাববার আছে। ছড়ার আবেদন সর্বজনীন। ছড়ার অসীম ক্ষমতা। ছড়া মানুষকেহাসায়,কাঁদায়,ঘুম পাড়ায়। আবালবৃদ্ধবনিতার বিনোদনও বটে। সময়ের বিশেষ বার্তাউচ্চরিত হয় তাঁর ছড়ায়। আম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঁেবচে থাকার লড়াইঅনিয়মেরপ্রতিবাদ রাজনৈতিক টানাপেড়েন এসবের প্রতিফলন ঘটেছে। ছড়াগুলোতে ভাষাআকর্ষনীয়। এই উৎকটের ওপরে শিল্পমান নির্ভর করে। জাকির আজাদের ছড়ায় বিষয়উপযোগী আঙ্গিক। নির্মানের দিকটি বিশেষ গুরুত্ব পায়-

“কিছু কিছু মানুষ আছে
এই সমাজে যুইতে,
বসতে দিলে চাইবে আবার
আরাম করে শুইতে।...( দৈনিক যুগান্তর)’

জাকির আজাদ নিজেই বলেন-আামর ছড়া,কবিতা,প্রবদ্ধ,নিবন্ধ তা আমাকে নিয়েবলা যায় কেউই তেমন মন্তব্য করেনি। তবে আচানক আমার কাছে চিঠি আসে,ফোনআসে, অচেনা প্রিয় পাঠকের। তাদের প্রশংসা, সমালোচনার মধ্যে আমি ঋদ্ধহই।”একটি ব্যতিক্রম দিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি লেখালেখি। জীবনের শুরুতেই শুরুকরেছিলেন ছোটদের গল্প,বড়োদের সাহিত্য। তারপরই পথ পরিবর্তন করে চলে এসেছেন ছড়াসাহিত্যে।
জনপ্রিয়তার জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে চাননি তাঁর এই সচেতনতাপাঠকমাত্রই বুঝতে পারেন। এখন পর্যন্ত ডুয়েট ছাড়া কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। আরব্যক্তি জাকির আজাদকে যারা চিনি তারা একেবারে নিঃসন্দেহে বলতে পারি সবাই যে পথধরে এড়িয়ে গেছেন। তিনি কেবলমাত্র বাংলাদেশ ,দেশের প্রকৃতি ও মানুষের কাছে ভালোবার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন একদম জাকির আজাদীয় ঢঙে। তার সাহিত্যকর্ম তাঁরসাহিত্যকর্ম তাই তারই স্বাক্ষরময়।,পাঠক সহজেই নিতে পারেন। তবুও তিনি কী প্রগাঢ় অভিমানে ফিলিস্তনের সপক্ষে উচ্চারণ করেন-
হে ইতিহাস
আর কতো কান্নার জল চাও
আর কতো নিষ্ঠুরতার শিক্ষায় শিক্ষিত ক্রু হতে চাও
আর কতো ক্ষুধার্ত হাহাকার শ্রবনে রাখতে চাও
আর কতো মা হারানো বেদর্নাত মুখ দেখতে চাও
আর কতো পিতার নিখোঁজ সংবাদের খবর জানতে চাও
আর কতো দুধের শিশুর কংকাল দৃকপাত করতে চাও
আর কতো গণকবর দৃষ্টিতে রাখতে চাও
আর কতো মানুষের হত্যাষঙ্গের সামিল হতে চাও
আর কতো বিভৎস্য ছবি সংগ্রহে নিতে চাও”...(দৈনিক নয়াদিগন্ত)
ফেইসবুকের কল্যাণে জাকির আজাদের কবিতা প্রায় প্রতিদিন পড়ি এ আমারসৌভাগ্য। কী সুন্দর হয়ে যায় দিন! আন্তরিকতা শব্দটি ব্যক্তি জাকির আজাদের সাথে খুবযায়। তিনি লেখায় আন্তরিক অন্যের কলমকে সাঠিক পথে চলতে দেখার ক্ষেত্রে আন্তরিক মানুষমানবতার প্রতি আন্তরিক। আন্তরিকতার স্পর্শ আমার মতো যারা পেয়েছেন,তাঁরাবুুঝতে পারেন জাকির আজাদের প্রয়োজন কতখানি। কেননা, এই আন্তরিকতায় তিনি
বুনেছেন লেখাকে ভালোবাসার বৃক্ষ। কেননা এই লেখনীই বদলে দিতে পারে জমিনেররক্ষ্মতা,অমানবিকাতায় অভ্যস্থ রাষ্ট্রযন্ত্রের চেতনা আর মানুষের স্বার্থপরতাকে। ছড়াকার বলছিবটে,তিনি কি শুধুই ছড়াকার ? না তিনি শুধু ছড়াকার নন। তিনি একই সঙ্গেকবি,সাংবাদিক,গল্পকার প্রাবন্ধিক। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক আমার সাথী বাংলা বইয়ের পাঠ্যসূচিতে জাকির আজাদের কিশোর কবিতানিবন্ধন রয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। তাছাড়া ময়মনসিংহ হিজলতলী সাহিত্য সংঘের গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ১৯৮২সালে। লেখার ক্ষেত্রে তিনিকখনোই ফাঁকির আশ্রয় নেন না, দায়সারা গোছের কিছু একটা দেওয়ার মতোদায়িত্বহীনতার পরিচয় তিনি কখনো দেননি। তাঁর পরিচিতি দেশ জুড়ে এবং দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে অনুরোধ আসে লেখার। তিনি লেখেন। প্রতিনিয়ত তাঁর লেখার এই যেজগৎ এই জগৎটিকে তিনি গ্রহণ করেছেন অনুধ্যান হিসেবে। তাঁর লেখার এই জগতেসবচেয়ে সমৃদ্ধতর অধ্যায় মানুষও নিসর্গ। আমি মুক্তিযুদ্ধ ,ভাষা আন্দোলন কিংবা
শিশুতোষ গল্পের কথা বলতে পারতাম কিন্তু তা বলিনি। কারন ওইসব প্রতিপাদ্যর ভেতরে সহজাতএকটি শক্তির মতো মানুষ ও তার মানবিকতা আপন স্বভাবে উন্মোচিত হয়ে ওঠে জাকিরআজাদের লেখায়। সুতরাং নির্দ্ধিধায় বলা যায় মানব-ছন্দ কবি। জীবন ও জগতের সবচেয়েসুন্দর সবচেয়ে লাবণ্যময়,সবচেয়ে সহজ ও রহস্যময় মানুষ ও মননশীল মূল্যবোধ এবং তাঁরভালোলাগার জগৎ ,আনন্দের জগৎ। নিজেকে নিবিষ্টভাবে নিমজ্জিত রাখার জগৎ। সুতরাংজাকির আজাদ বলেছিলেন-পৃথিবীর সব দেশের লেখকরাই লেখালেখির গুরুতে কবিতা দিয়েশুরু করেন। তারপর সময়ের সাথে সাথে যে লেখালেখির বিভিন্ন শাখায় ঘুরে বেড়ায়। একসময় তাঁর ভালোলাগা একটা জায়গায় স্থির হয় । তিনিও তেমনি ছোটদের বড়দের গল্পকবিতা বিভিন্ন রঙ্গিন শাখায় ঘুরে বেড়িয়ে ছড়ায় আনন্দ পেয়েছি, নিখাদ ভালোলাগা।তাই এখানে আমি স্থির হয়েছেন। বর্তমান সময়ের অনেক ছড়াকারকে তিনি হাতে ধরেছড়া শিখিয়েছেন। নবীন কবি ও ছড়াকার পান্ডুলিপি সম্পাদনার জন্য তার দ্বারস্থ হলেতিনি অত্যন্ত দরদ ও মমতায় সম্পাদনার কাজ করেন। তাঁর সম্পাদনার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা নিঃসন্দেহে প্রশংসা।
আমাদের সাধারনের ধারণা সৃজনশীল ব্যক্তি মানেই উন্নত মানুষ।কবি,সাহ্যিতিকের মন মহানুভব প্রানবন্দ। তাদের ব্যক্তিত্ব অনুসরনীয়। প্রতিভাবনাকেউপরে ওঠার সিড়ি দেখিয়ে দেওয়ার মতো উদারতা,বন্ধুর পথ থেকে সাবধান করে দেওয়ারমানসিকতা। কবির সান্নিধ্য পাওয়া মানে ধন্য হওয়া । কবিরা নীতিকথা লিখেন,মানুষেরকথা লিখেন,পাখপাখালীর কথা লিখেন সুতবাং তাদের মানুষিকতা স্বচ্ছ নৈতিকতায়আবৃত। অনন্য তাদের বিশেষত্ব এবং কবিরা শ্রেষ্ঠ মানুষ।বিজ্ঞানের অগ্রগতি আবেগের পথ তেমনি রুদ্ধ করেছে। একইভাবে মানুষেরঅর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মানুষকে ভোগবাদী করে তুলেছে। বিলাসী এক জীবনের সঙ্গেতাদের গাটঁছড়া। এতে একদিকে যেমনি বিচ্ছন্নতা বোধ মানুষকে আচ্ছন্ন করেছেজীবনবিমুখ ছন্দহীন এক জীবনে চার দেয়ালে তারা বন্দি থাকছে। এ বন্দিত্ব তাদেরবিচ্ছিন্ন করেছে মানব-ছন্দ সান্নিধ্য থেকে মনের চাতাল ঢেকে দিচ্চেইট,পাথর,সুড়কির কঠিন আবরনে। রাগ, অনুরাগ কিংবা মায়ার আচ্ছাদন সেখানেঅনুপস্থিত। জীবনবোধের বেলায় মানবিকতা উপেক্ষিত। এ আর্তি কবি মনকে কতোটাব্যাকুল করে কতোটা পীড়িত করে মানবিক সত্তাকে তা কবি জাকির আজাদের নির্মিতকবিতা থেকে অনুভব করা যায়। নাগরিক জটিলতায় আবদ্ধ জীবনের বিপরীত শিল্পীত মনেরমাধুরী মিশ্রিত কবি আসলে কী বলতে চান মরমিয়া সুরে তা এক জটিল প্রশ্ন বটে।
জীবনের মূল তাৎপর্য কি, জীবনের আনন্দ কিসে ও সুখের মূল সুর মানুষেরঅন্তর্নিহিত শক্তি কোন পলে লুকায়িত? সে কথা তিনি বলতে চেয়েছেন তার নির্মিতিরমধ্য দিয়ে মানব-ছন্দ তারঁ প্রাণ। যেখানে সাদা কালোর তফাতের মতো সুখ-অসুখেরপার্থক্য কোথায়,সুখের মূলসূত্র কী সে কথা বলেছেন তিনি অত্যন্ত সাবলীবভাবে।
জাকির আজাদ মানে সার্বক্ষণিক সাহিত্যচর্চায় এক সিরিয়াল কুশীলব। সেখানেপুরো জীবনে তার ছড়া সংখ্যা অগনিত। বৈচিত্র্যের এতটাই বিস্তৃতি, অনুমান করাওকঠিন। তার ছড়ায় যেমন ভর করে কৌতুক,তেমনি গুরুগম্ভীর বক্তব্য সমসাময়িক বিষয়কেওতিনি হালকাভাব মিশিয়ে দেন বেলুনের মতো। দেখবার তিনিই দেখেন কোথায় যাচ্ছেবেলুন,কিংবা আসলে তার ভেতরে যা তার কিরূপে হওয়া।

রবিবাসরীয়...ইয়াসমীন রীমা ।।









পত্রিকা ও ছড়ার মানুষ বাবু ভাই


।। কাজী মোহাম্মদ আলমগীর ।।


নব্বই দশকের কোন একদিন  কুমিল্লা শাসনগাছার হোসেন মঞ্জিলে গিয়ে হাজির হলাম। ছোট কাগজ বের করতে হবে। সংগঠন সেঁজুতি। সেঁজুতি তখন এড. আবুল কাশেম সাহেবের বাসায়, মৌলভি পাড়ায়। হোসেন মঞ্জিলে যেতে আমাকে কে বলেছে আজ আর মনে নেই। তোরণ পাড় হয়ে দু’তলায় উঠার জন্য যিনি বললেন তাঁকে আমি বলেছিলাম, ‘ আমি জাকির আজাদ বাবু ভাইকে চাই। আমার নাম....। দুতলায় গিয়ে বাবু ভাইয়ের কক্ষে বসলাম। একবারে ছিমছাম কক্ষ। টেবিলের উপর একটা অভিধান। অভিধানটি আমাকে চৌম্বকের মতো টানছিল। কিন্তু আমি ধরছিলাম না। মনে আছে অভিধানটি বাংলা থেকে রুশ ভাষার অর্থ বের করার অভিধান। এমন অভিধান আমি আজ পর্যন্ত আর কোথাও দেখিনি। অন্য যে কারো থাকতে পারে , কিন্তু আমি দেখিনি। বাবু ভাই চা আপ্যায়ন করলেন। আমি চা খেলাম। তারপর আমার আগমনের উদ্দেশ্য বিস্তারিত বললাম। বাবু ভাই সহজে দায়িত্ব নিলেন। ঢাকা থেকে ছাপা হবে। আমি পান্ডুলিপি বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসলাম। বাবু ভাইয়ের কণ্ঠের একটা মিষ্টি ঘুর মাথায় নিয়ে হাঁটছিলাম। কোন প্রকার কৃৎকৌশল ছাড়াই বাবু ভাই প্রাকৃতিক ভাবেই এমনি। গলাকে মোটা করা চিকন করা একটু ভাব করা এসব কোনটার বালাই নেই। প্রাকৃতিক সম্মোহন তাঁর সমস্ত আচরণে  লেপ্টে আছে। জন্মগতভাবে মা বা বাবা থেকে পাওয়া।
তারপর নির্দিষ্ট সময়ে সেঁজুতি ছোট কাগজ হাতে পেলাম। সবুজ রংয়ের প্রচ্ছদ, শেষ পৃষ্ঠায় অনেকের ছবি। এটাকে ছোট কাগজ বলা যায় না। সংঘটনের পরিচয়পত্র বলা যায়। কিন্তু ভেতরে সব লেখা। তখন কুমিল্লার ফিন্যন্স ম্যাজিস্ট্রেট (পদবি ভুল হতে পারে) ছিলেন আফরোজা পারভিন। বিখ্যাত কৃষি বিজ্ঞান বইয়ের লেখক সাঈফ ফাতেউর রহমানের ছোট  বোন। তিনি মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক  গল্প লিখে ছিলেন। সম্ভবত তাঁরা নড়াইলের বাসিন্দা।
এরপর বাবু ভাই আমাকে টান দিলেন ‘ আবহমান ’  দিয়ে। ডিমাই সাইজ কাগজে অপূর্ব এক পত্রিকা। সাহিত্য নির্ভর পত্রিকা। চিরায়াত গল্পে- মুলক রাজ আনন্দের এক গল্প পড়ে ‘থ’ হয়ে রইলাম। চৌধুরী মার্কেটের পত্রিকা প্রকাশের অংশে বাবু ভাইয়ের উদ্দেশ্যে গিয়ে হাজির হলাম। দেখা হলো। কথা বললাম। কথা শোনলাম।
লেখা প্রসঙ্গে একদিন স্মৃতিচারণ করছিলেন বাবু ভাই। দেশ পত্রিকায়  লেখা পাঠিয়েছেন কবে, আশা ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। বলতে গেলে ভুলে গেছেন। তবে দেশ সংখ্যা এলে চোখ বুলিয়ে দেখেন। তারপর একদিন বিদ্যুৎএর শক্ খেলেন। পড়া বন্ধ করে মুখের উপর পত্রিকা চেপে রাখলেন অনেকক্ষণ। বিশ^াস হচ্ছে না। লেখা ছাপা হয়েছে।
কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় বাবু ভাইয়ে নাম উঠলে শ্রদ্বা মিশ্রিত ভালোবাসা প্রকাশ করেন। কৃতজ্ঞতা জানান।
আর আমি তো রীমা আপার কথা মনে করি প্রায়, প্রথম গল্পের বই দেয়ার কিছুদিন পর ইয়সমীনরীমা বলে ছিলেন- ‘ আরো ভালো হতে পারতো।’ আমার প্রথম বইয়ের জন্য সঠিক মূল্যায়ন। আমি নত শিরে স্বীকার করে নেই।
উভয়ের দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।






সময়ের প্রত্যয়

জাকির আজাদ ।।

একদিন সবকিছুর জানাজানি হয়ে যাবে নিশ্চিত,
কিছুই থাকবে না লুকোছাপা চরম গোপন
ওয়াকিবহাল হয়ে যাবে তামাম
কে, কাকে মিথ্যাচার করেছে প্রতারিত বেশুমার।
কথার আদলে রঙ্গ মেখে মোহিত করছে অনুবার,
ভুল ঠিকানায় পাঠিয়ে লজ্জায় উলংগ করে হয়নি তৃপ্তি
তিরস্কারের ব্যারো মিটার গগনে তোলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত
কত উদ্যোমী ছিলো স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত করার।

একদিন সবকিছুর দেখাদেখি হয়ে যাবে শতভাগ,
জীবনের হিসাবের গড়মিলের টানাপোড়েন অস্থিরতা
ফাঁকি দেয়ার চর্চাগুলো কিংবা পরিচর্চাগুলো
উৎগীরণে কতটা প্রহসন মুদ্রিত করে চলমান প্রেক্ষাপট প্রচার করা।
নিশ্চিত নিদ্রায় রাখা যায় মিথ্যা অভিনয়ের স্পর্শে,
প্রমাণিত হবার প্রতারকের শক্তিমত্তাকে
ছুঁয়ে দেখার আগে যে শক্তি ভূলুণ্ঠিত হবে পুরোপুরি
সব অনুনয় বিফলে যাবে সমূলে।

একদিন সবকিছুর চিরচিহ্নিত হয়ে যাবে অপামর,
সত্য মিথ্যার জন্য মিথ্যা সত্যের জন্য সফল সহযোগী হবে না
কোথায় ছুটে পালিয়ে থাকবে কোন বিবরে
বিত্ত পৃথিবীর অধর থেকে ছিটকে পড়বে।
কিংবা তোমার অন্দরে তুমি ঢুকে তোমাকেই খুঁজবে
ধরা পড়ার ভয় আতংকের কম্পনে
পাহাড়ের নিস্তব্ধতা সাগরের গর্জন।
এসে যাবে অবিলম্বে নিজস্ব বলয়ে।












সর্বশেষ সংবাদ
‘কুমিল্লায় দানবীয় শাসন আর দেখতে চাই না’ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ
আজ দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া
কুমিল্লায় রাতের অন্ধকারে আক্রমণের শিকারএনসিপি নেতা জুয়েল
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুমিল্লা আদালতে দুই দফা দাবিতে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের কর্মবিরতি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ
যুবলীগ সভাপতিকে কারাগারে প্রেরণ
চৌদ্দগ্রামে আ’লীগ নেতার ছেলেসহ আটক ৩
হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা
আবরার হজ্ব এয়ার এভিয়েশনের দোয়া অনুষ্ঠান
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২