সকালে
কড়া রোদ, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই শুরু বৃষ্টি। দমকে দমকে চলতে থাকল। সাথে
বজ্রপাত, ঝড়ো বাতাসও। শিলংয়ে এমন বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেই ভারতের বিপক্ষে
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচের প্রস্তুতি সারল বাংলাদেশ।
এখনও
অবশ্য মূল মাঠে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ মেলেনি জামাল-হামজাদের। ভারত
জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামেই প্রস্তুতি নিয়েছে বরাবরের মতো। স্বাগতিকদের
জন্য এই স্টেডিয়ামের দুয়ার খোলা, অতিথি বাংলাদেশের জন্য বন্ধ! তাই বরাবরের
মতো স্টেডিয়ামের লাগোয়া শিলং স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের টার্ফে অনুশীলন করতে
হয়েছে বাংলাদেশকে।
টার্ফে প্রস্তুতি নেওয়া কিছুটা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ।
টার্ফের নিচে কনক্রিটের শক্ত স্তর থাকায় এখানে চোট পাওয়ার প্রবণতা বেশি।
তাছাড়া খেলা হবে ঘাসের মাঠে। তাই মূল মাঠে প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা চলছে,
কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি বলে জানালেন টিম ম্যানেজার আমের খান। তবে নানা
প্রতিকূলতায় দলের মনোবলে চিড় ধরছে না বলে আশ্বস্ত করলেন তিনি।
“আমাদের
যে গেম প্ল্যান, তা ঠিক আছে। দলের সকলে সুস্থ আছে। ম্যাচ খেলার জন্য যে
অবস্থা থাকা প্রয়োজন, আমরা সে অবস্থায় আছি। সকালে ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে
কথা বলেছি। তাকে জানিয়েছি যে, প্রতিপক্ষ দল অনুশীলন করছে মূল গ্রাউন্ডে,
আমরাও করতে চাই।”
“এ নিয়ে আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি
ভারতীয় ফুটবল সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন, তারপর আমাদের এ গ্রাউন্ড দেওয়া
হয়েছে অনুশীল করতে।”
এবার দলের অনুশীলন থেকে শুরু করে অনেক কিছুই
অন্যরকম! ২০১৯ সালে সবশেষ ভারতে যখন খেলেছিল বাংলাদেশ, তখন অনুশীলন
সুযোগ-সুবিধা ছিল অসাধারণ। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামের আউটডোরে ঘাসের মাঠে
প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ মিলেছিল।
তখন গণমাধ্যম কর্মীদের জন্যও সবকিছু
ছিল উন্মুক্ত। অনুশীলন দেখার, খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলার দরজা ছিল খোলা।
এবার সব দরজা-কবাট বন্ধ। এমনকি হোটেলের লবিতেও গণমাধ্যমকর্মীদের যাওয়ার
অনুমতি দেননি বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তাতে অবশ্য অখণ্ড মনোযোগের
সাথে ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন খেলোয়াড়েরা।
কাবরেরা
তাও ‘উদারতা’ দেখিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য মূল অনুশীলন শুরুর আগে ১৫
মিনিট বরাদ্দ রেখেছেন। তাতে কিছু প্রশ্ন করার, হামজাদের গা গরম করার দৃশ্য
অন্তত দেখার সুযোগ মিলছে সবার। ভারতের বেলায় তাও জুটছে না। দলটির কোচ
মানুয়েল মার্কেস ‘রুদ্ধদ্বার’ অনুশীলন করছেন। সেখানে গণমাধ্যম কর্মীরা
‘নিষিদ্ধ।’ সুনিল-ফারুকরা প্রবেশের আগেই স্টেডিয়াম ফাঁকা করে দেওয়া হয়,
কোথাও, এমনিক কারো স্টেডিয়ামের গেটেও দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ নেই। দাঁড়ালেই
নিরাপত্তা রক্ষীরা ছুটে এসে নির্দেশনা দিচ্ছেন, স্টেডিয়ামের বাইরে চলে
যাওয়ার!
যদিও শিলংয়ের আবহাওয়া ঠাণ্ডা, কিন্তু এই আবহই বলছে মঙ্গলবার
মাঠে গড়াতে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের উত্তাপের পারদ কত উঁচুতে উঠেছে।
ডিফেন্ডার তপু বর্মন যেমন বলে গেলেন, “এবারের ম্যাচ অন্যরকম।”
এদিনের
অনুশীলনেও অবশ্য প্রাণবন্ত এক বাংলাদেশ দলের দেখাই মিলেছে। দলের মধ্যমণি
হামজা চৌধুরীকে নিয়ে যে কাবরেরা ছক কষছেন, তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তপু। কথা
বলেছেন রক্ষণের দৃঢ়তা নিয়ে, প্রতিপক্ষ দলের আক্রমণভাগের সেরা তারকা সুনিল
ছেত্রিকে নিয়ে। বলেছেন, ছেত্রির দিকে ‘বাড়তি নজর’ দেওয়ার কথা। লম্বা সময় পর
জাতীয় দলে ফেরা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিমও প্রত্যয়ী কণ্ঠে শুনিয়েছেন,
গোলের আনন্দে রাঙাতে চান ফেরাটা।
ভারতীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানার আগ্রহ,
হামজা কীভাবে রাঙাতে চান বাংলাদেশের লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেকের
ম্যাচটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সবার অধরা। তাকে
গণমাধ্যম থেকে দূরে রেখেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
এদিনের অনুশীলনে অবশ্য
হামজাকে বরাবরের মতোই সাবলীল, স্বচ্ছন্দ দেখা গেল। গা গরমের সময় তপুর সাথে
হাসাহাসি করতেও দেখা গেল কোনো একটা বিষয় নিয়ে। এক ফাঁকে কৌতুহলী দৃষ্টি
নিয়ে তিনি তাকালেন গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এত সাংবাদিক
ক্যামেরা, মোবাইল তাক করে রেখেছে দেখে একটু হাসলেনও তিনি।
হামজার এই হাসি মঙ্গলবার ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের হাসি হয়ে উঠবে কিনা, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।