ইবাদতের
প্রকৃত স্বাদ তখনই লাভ করা যায়, যখন তার উপযুক্ত কারণগুলো পাওয়া যায়। একজন
মুসলমানের কর্তব্য হলো, এই কারণগুলো অর্জনের চেষ্টা করা, যাতে সে সুখময়
জীবন উপভোগ করতে পারে।
নামাজ : নামাজের মাধ্যমে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি
আসে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিলাল (রা.)-কে বলতেন, ‘হে
বেলাল, আজান দাও, আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করব।’ (আবু দাউদ,
হাদিস : ৪৯৮৬)
এর দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহ নামাজে প্রশান্তি
রেখেছেন। যে ব্যক্তি তা পরিপূর্ণ হক আদায় করে পালন করতে পারবে, সে ইবাদতের
স্বাদ পাবে।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নামাজ সেই ব্যক্তির পাপ মোচন
করে, যে তার হক আদায় করে পূর্ণ খুশুখুজু নিয়ে পড়ে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়
হৃদয় ও দেহের উপস্থিতিসহ। যখন সে নামাজ শেষ করে, তখন নিজেকে হালকা অনুভব
করে, যেন তার সব বোঝা নামাজের মাধ্যমে দূর হয়ে গেছে।
এতে সে প্রশান্তি,
আনন্দ ও স্বস্তি অনুভব করে, এমনকি সে চায় যে নামাজ কখনো শেষ না হোক। কারণ
নামাজই তার চোখের শীতলতা, আত্মার প্রশান্তি, অন্তরের জান্নাত এবং দুনিয়ার
বিশ্রামস্থল...।
নবীজির সাহাবিরা নামাজে পরম শান্তি অনুভব করতেন।
যেমন—আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা.) নামাজে এতটাই খুশুখুজু রাখতেন যে মনে
হতো তিনি একটি কাঠের গুঁড়ি।
তিনি সিজদায় গেলে চড়ুই পাখি তাঁর পিঠে বসে যেত, যেন তিনি কোনো গাছের ডাল।
কোরআন
পাঠ : আল্লাহর কালাম তথা পবিত্র কোরআন পাঠে অপূর্ব সৌন্দর্য, আনন্দ ও
প্রশান্তি রয়েছে। যখন আল্লাহর কালাম জিহ্বায় উচ্চারিত হয়, কানে বাজে, তখন
অন্তর নরম হয়ে যায়, দেহ প্রশান্ত হয় এবং হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়। কারণ প্রেমিকদের
কাছে তাদের প্রিয়তমের বাণীই সর্বাধিক মধুর। এই স্বাদ অনুভব করতে অন্তরকে
অধিক কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়।
যার অন্তর যত পবিত্র
হবে, তার প্রেম তত গভীর হবে। তার তিলাওয়াতের আগ্রহ ও প্রশান্তি তত বৃদ্ধি
পাবে, ফলে সে যতই তিলাওয়াত করবে, ততই তার তিলাওয়াতের স্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।
উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলতেন, ‘যদি আমাদের হৃদয় পবিত্র হতো, তবে আমরা কখনো
আমাদের প্রতিপালকের বাণীতে পরিপূর্ণ তৃপ্তি অনুভব করতাম না। আমি তো অপছন্দ
করি সেই দিনকে, যখন আমি মুসহাফের (কোরআনের) দিকে তাকাতে পারি না।’ (আল
জামি‘লিশুআবিল ঈমান : ৩/৫১০)
পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে
চিন্তা-ভাবনার মধ্যে এমন সুখ রয়েছে, যা অন্য কিছুতে নেই। মুমিন যদি প্রকৃত
ঈমান রাখে, তার হৃদয় বিশুদ্ধ হয়, তবে সে কখনো কোরআন শুনে তৃপ্ত হবে না।
আল্লাহর
জিকির : আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে মুমিন হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। অন্তর জীবিত
হয়। এটি এমন এক আমল, যা সবচেয়ে কম কষ্টসাধ্য, অথচ সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ও
আত্মার ঘোরাক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর
স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত
হয়।’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ২৮)
দান ও সহমর্মিতা : আল্লাহর সন্তুষ্টির
আশায় অর্থ ব্যয়ের মধ্যেও এক অনন্য সুখ রয়েছে। তাই তো সাহাবায়ে কিরাম তাদের
প্রিয় ও মূল্যবান জিনিসও আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না।
আনাস
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা
পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)
অথবা ‘কে সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তাআলাকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার
জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৫) আয়াত
অবতীর্ণ হলে আবু তালহা (রা.), যার একটি ফলের বাগান ছিল, বললেন, হে আল্লাহর
রাসুল! আমার বাগানটি আল্লাহ তাআলার পথে দান করে দিলাম। আমি গোপনে এটি দান
করতে পারলে এর প্রকাশ্য ঘোষণা দিতাম না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার
আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৯৭)
তা
ছাড়া যারা মানুষের উপকার করে, মানুষের প্রতি দয়া করে, মহান আল্লাহও তাদের
প্রতি দয়া করেন। ফলে তারা ঈমানের স্বাদ পায়, ইবাদতে প্রফুল্লতা অনুভব করে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।