অধুনা
থিয়েটার। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। ১৯৯১
সালের ২৭ জানুয়ারি ‘গ্রামই আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য’ এ স্লোগানে কুমিল্লা
নগরীর রাজাপাড়া গ্রাম থেকে পথচলা শুরু। এটি প্রতিষ্ঠা করেন স্বাপ্নিক তরুণ
অ্যাডভোকেট শহীদুল হক স্বপন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অধুনা থিয়েটার আজ
অতিক্রম করেছে তার পথচলার ৩৩ বছরে। এ সুদীর্ঘ সময়ে সংগঠনটি কুমিল্লার
প্রবুদ্ধ সংস্কৃতির ধারাকে বেগবান করেছে। দিয়েছে সমৃদ্ধি। আর সাফল্যের
সোনালী আভায় নিজেকে করেছে দেদীপ্যমান। অধুনা পরিবারে যুক্ত হয়েছে অনেক
প্রতিশ্রুতিশীল নাট্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী। যাদের অনেকেই আজ ছড়িয়ে পড়েছে
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ফলে অধুনা থিয়েটার হয়ে উঠেছে বিশ্বময় সংগঠন।
অধুনা থিয়েটার বিগত সময়ের কার্যক্রমগুলো হলো- জেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক
প্রতিযোগিতা, পথ নাটক, ‘চলো গ্রামে যাই’ শীর্ষক ১০ দিন ব্যাপী গ্রামীণ
মেলা, সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব, ভাষা সংগ্রামী ও বীর
মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা প্রদান, দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চ নাটকের প্রদর্শনী,
নাট্য বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও মূকাভিনয় কর্মশালা আয়োজন
প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
তাছাড়াও প্রতিবছর নিয়মিত বিজয় দিবস, স্বাধীনতা
দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব, বিশ্ব নাট্য
দিবস, নাট্যাচার্য সেলিম আলদীন জন্মোৎসব, কুমিল্লা মুক্ত দিবস, অধুনা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রমুখ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লার বোদ্ধা
দর্শকদের সম্পৃক্ত রেখেছে অধুনা থিয়েটার। কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের
উদ্যোগে মহানগর কুমিল্লার সবচাইতে বড় আয়োজন ১ বৈশাখ বাঙলা নববর্ষ উদযাপনে
অধুনা থিয়েটার বিগত ২১ বছর ধরে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
নিয়মিত
সাংগঠনিক চর্চার ধারাবাহিকতায় ১০ দিনব্যাপী নাট্য উৎসবের আয়োজন অধুনা
থিয়েটারের সাফল্যের পালকে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ২০১১ , ২০১৩, ২০১৬ ও
২০১৮, ২০২৩ সালে ৫টি সফল নাট্য উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে অধুনা থিয়েটার বিশেষ
শক্তি অর্জন করে। যা তাকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। নাট্য
উৎসবে নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি মুক্ত মঞ্চে প্রান্তিক জেলা সমূহের আঞ্চলিক
পরিবেশনা কুমিল্লাকে রূপান্তরিত করেছিলো একখন্ড বাংলাদেশে।
এ পরিবেশনা
সমূহ দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। অধুনা পরিণত হয় জনগণের সংগঠনে। নাট্য উৎসবের
বিভিন্ন পর্যায়ে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এবং মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ। যা অধুনাকে এক
অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
শুধুমাত্র নাট্য ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাই নয়,
অধুনা থিয়েটারে যুক্ত রয়েছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিক।
করোনাকালীন সময়েও অধুনার কার্যক্রম থেমে থাকেনি। করোনার কথামালা নামে
নির্মিত ভার্চুয়াল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সদস্যদের সক্রিয় রেখেছে। তাছাড়াও এ
সময় থিয়েটার সদস্যরা অস্বচ্ছল সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশে থেকে খাদ্য ও
চিকিৎসা সহযোগিতা করেছে। পথিকৃৎ সমাজকল্যাণ সংস্থা পরিচালিত ‘জীবন বাঁচাতে
অক্সিজেন’ সেবা কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে করোনা আক্রান্ত
মানুষের ঘরে ঘরে এ সেবা পৌঁছে দিয়ে মানবিক যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ
করেছে।
অধুনা থিয়েটারের আগামীর কর্মসূচি মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে
১০ দিন ব্যাপী ৫ম নাট্য উৎসবের আয়োজন। সৃজনশীল ডা. মুজিবুর রহমান এবং দক্ষ
সংগঠক প্রকৌশলী সঞ্জীব কুমার তলাপাত্র এর নেতৃত্বে অধুনা থিয়েটার আজ, এ
সময়ে সমাজের সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে আগামীর আয়োজনে আন্তরিক সহায়তা
কামনা করছে।
অধুনা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট শহীদুল হক স্বপন
বলেন, জেলা শহরের মূল ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অধুনা থিয়েটার সবসময়
উচ্চকিত থেকেছে এবং সকল আন্দোলন সংগ্রামে সন্মুখ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে
অধুনার রয়েছে ইস্পাত কঠিন দৃঢ় অবস্থান।
আগামীর কার্যক্রম নিয়ে তিনি আরো
জানান, ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য ১০দিনব্যাপী ৬ষ্ঠ নাট্য উৎসব আয়োজন। যেখানে
বিশ্বের কমপক্ষে ৩টি দেশের নাটক মঞ্চায়ন করা হবে। চৌকস সংগঠক, মানবিক
চিকিৎসক ডা. মুজিব রাহমান বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে আছেন।