কুমিল্লার
সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চলছে তালের শাঁস
বেচাকেনার ধুম। মৌসুমি ফল হওয়ায় এর কদরও রয়েছে বেশ। তবে তালের শাঁস বিক্রি ও
খাওয়ার পর পরিত্যক্ত তালের খোসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যত্রতত্র। এতে পরিবেশ
দূষণসহ এডিস মশার প্রজনন বাড়ার শঙ্কাও বাড়ছে। অথচ পরিত্যক্ত এসব তালের খোসা
নিয়ে নেই ক্রেতা বিক্রেতার সচেতনতার বলাই। ফলে পরিবেশ দূষণের বিরূপ
প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে বিভিন্ন উপজেলাসহ
কুমিল্লাবাসীর।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিত্যক্ত কৌটা, ডাবের খোসা,
তালের খোসা, চিপসের প্যাকেটে বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে এরকম পরিত্যক্ত
সামগ্রীর মাধ্যমে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। তাই এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে
সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন হওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাজারে ও বিভিন্ন
এলাকার মোড়ে মোড়ে কেনা বেচা হচ্ছে তালের শাঁস। গরমে স্বস্তি পেতে এসব রসালো
তালের শাঁসের চাহিদাও রয়েছে। তবে দেখা গেছে তালের শাঁস বিক্রি শেষে
পরিত্যক্ত তালের খোসা নির্দিষ্ট ভাগাড় না থাকায় ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে,
আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে এসব পরিত্যক্ত তালের খোসা পড়ে আছে যত্রতত্র।
এতে বৃষ্টির পানি জমে জন্ম নিতে পারে এডিস মশা। অথচ তালের শাঁস বিক্রেতা ও
ক্রেতা কারোরই যেন সচেতনতার বলাই নেই। ফলে দিন দিনই পরিবেশ দূষণ ও ডেঙ্গু
ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কুমিল্লাবাসী।
ব্রাহ্মণপাড়া
সদর বাজারের তালের শাঁস বিক্রেতা এমরান হোসেনকে পরিত্যক্ত তালের খোসা কোথায়
ফেলা হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাল বিক্রি শেষে এসব তালের
পরিত্যক্ত খোসা বাজারের পাশের পুকুর পাড়ে ও সড়কের পাশে ফেলে দিই। কেননা
আমাদের বাজারে নির্দিষ্ট কোনো ডাস্টবিন নেই।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা
সোনার বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবু ছালে মোঃ সেলিম রেজা সৌরভ
বলেন, জনপ্রতিনিধি শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলকে সচেতন হতে হবে কারণ এখন
বর্ষার মৌসুম তালের খোসা,ডাবের খোসা, বিভিন্ন বর্জ্যের মধ্যে ডেঙ্গু বংশ
বিস্তার করে। জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজার ও মোড়ে মোড়ে এখন পুরোদমে
তালের শাঁস বিক্রি চলছে। যে কারণে সড়কের পাশেও বাজারের বিভিন্ন জায়গায়
ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় এসব তালের খোসা পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে ডেঙ্গু আতঙ্ক
বাড়ছে। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ তালের শাঁস বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়কেই সচেতন হতে
হবে। শুধু বিক্রেতা বা ক্রেতাই নয়, এ বিষয়ে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, জমে
থাকা পানি পরিষ্কার বা নোংরা কিনা সেটা বিষয় নয়। টানা কয়েকদিন স্থির থাকা
পানিতে ডিম ছাড়তে পারে এডিস মশা। একসময় বলা হতো এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে
বংশবিস্তার করে। কিন্তু এক সমীক্ষায় দেখা গেছে পানি নোংরা বা পরিষ্কার যা-ই
হোক এডিস মশা বংশবিস্তার করতে সক্ষম। তাই এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে
আমাদের বাসভবন ও কর্মস্থলের আশপাশসহ পুরো পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এ সময়টায় যেখানে সেখানে তালের শাঁস কেনা
বেচা হচ্ছে, কিন্তু এসব তালের খোসা যথোপযুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে না। এতে
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ডেঙ্গু আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। তবে এসব তালের খোসা থেকে
শাঁস বের করার পর খোসা ছোট ছোট টুকরো করলে এতে আর পানি জমার সুযোগ থাকবে
না। এটা করেও পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করা সম্ভব। তবে
ভ্রাম্যমাণ তালের শাঁস বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়কেই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
এছাড়াও পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা আমাদের
সকলেরই দায়িত্ব।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক
মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, যত্রতত্র তালের খোসা ডাবের খোসা ফেলে
পরিবেশ দূষণ করছে ঠিক ঐ কিন্তু তা আমাদের পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়। পরিবেশ
দূষণ রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।