গত
চার দিন ধরে কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়
জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন ধরেই সূর্যের দেখা মিলছে না
বললেই চলে। তার ওপর উত্তরের হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পৌষ
মাসের এই কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও
ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বের হতে হলেও
তীব্র শীত তাদের দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। শীতের কারণে দিনমজুর ও
শ্রমজীবী মানুষের কাজের পরিধি কমে গেছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ
ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
গত কয়েকদিন ধরে কোথাও ঘন কুয়াশা, আবার কোথাও
উত্তরের হিমেল বাতাসের প্রভাবে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক
যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও
বাড়ছে।
এই শীতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শিশু ও
বয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের
প্রকোপ বাড়ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোগে
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার হাসপাতাল ও
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীর চাপও বাড়ছে।
এছাড়া কৃষকরাও শীতের প্রভাবে
নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বোরো ধান ও সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত
করতে গিয়ে কনকনে শীতে তাদেরকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
গতকাল রবিবার
স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন অফিস-আদালত খোলা থাকায় তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থী ও
কর্মজীবী মানুষদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সড়কে
যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।
তীব্র
শীতের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন ছিন্নমূল, দিনমজুর, জেলে ও খেটে
খাওয়া মানুষ। অনেককে খোলা আকাশের নিচে কিংবা রাস্তার পাশে খড়কুটো ও কাঠ
জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শীতের কারণে কর্মস্থলে যেতে
না পারায় তাদের আয়-রোজগারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয়দের দাবি,
শীতার্ত ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সরকারি ও বেসরকারি
উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।
ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার
মনিরুল ইসলাম বলেন, এ সময় শীতের কারণে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
মা-বাবাদের শিশুদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।তাদেরকে গরম খাবার ও গরম
কাপড় চোপড় পরিয়ে রাখতে হবে, ঘরের বাইরে রাখা যাবেনা। প্রতি বছরই শীতকালে
রোটাভাইরাস ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব কমবেশি দেখা দেয়। এ সময়ে নিউমনিয়া,
রেস্পেক্টরি ট্রাক ইনফেকশন এবং বয়স্করা অ্যাজমা রোগে ভুগে। তাই সকলকে এই
শীতে সতর্ক থাকতে হবে।
