শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
প্রতিবন্ধীদের বোঝা ও সম্মান করার জন্য করণীয়-বর্জনীয়
জুলিয়ান ফ্রান্সিস
প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:২৫ এএম আপডেট: ০৫.১২.২০২৫ ১:৩৩ এএম |

প্রতিবন্ধীদের বোঝা ও সম্মান করার জন্য করণীয়-বর্জনীয়
আমার বড়ভাই জেমস ১৯৪৩ সালে জেনেটিক ক্রোমসোমাল অ্যাবনরমালিটি নিয়ে জন্মেছিলেন, যাকে আমরা ডাউন সিন্ড্রোম হিসেবে জানি। এর পাশাপাশি তার শেখার সক্ষমতাও তেমন ছিল না। তিনি ১৯৯৯ সালে তার আশেপাশের মানুষদের অবহেলার কারণে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ব্রঙ্কিয়াল নিউমোনিয়ায় মারা যান, কারণ যে ডাক্তাররা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন, তারা ঠিক কী সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা ও সময় ব্যয় করেননি।
আমার ভাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তাকে শুধুমাত্র ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু যে আবাসিক সেবাকেন্দ্রে তিনি থাকতেন, সেখানকার কেউ আসলে তার মূল সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেননি। ডাক্তাররা যেমন তার মূল সমস্যা ধরতে পারছিলেন না, তিনি নিজেও তার সমস্যাগুলো ডাক্তার ও সেবাদানকারীদের বুঝাতে পারেননি। অথচ আমরা জানতাম, এরকম মানুষদের সমস্যা বোঝার জন্য সেখানকার কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আমার সেই ভাইয়ের জন্মদিন ছিল ৩ ডিসেম্বর। দিনটি তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে হাসি আনন্দে কাটাতে পছন্দ করতেন, পাশাপাশি স্থানীয় পানশালাতেও যেতেন জন্মদিন উদযাপনের জন্যে। ওই একই দিন আবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। স্বভাবতই দিনটি আমার এবং আমার বোনদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত-আমরা কি কখনও আমাদের আশেপাশে থাকা প্রতিবন্ধীদের সমস্যা, সংকট, অনুভূতি বা আকাক্সক্ষাগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি? তারা এমনিতেই নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বসবাস করছেন, যার জন্য তাদের জীবন আমাদের তুলনায় অনেক কঠিন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে যখন আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে আমরা অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়ি বা লজ্জা পাই। কারণ আমরা জানি না যে তাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয় অথবা তাদের কীভাবে সাহায্য করতে হয়। আমি কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনুভূতি বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। আমি একজন প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সঙ্গে বড় হয়েছি এবং পরবর্তীকালে একই ধরনের প্রতিবন্ধকতাসহ একটি ছেলেকে বড় করেছি, যার বয়স এখন ৫০ বছর। আমি আমার এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই শিক্ষাগুলো নিয়েছি। সেইসঙ্গে আমার বেশকিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুও রয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী। আমি তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি, যা আমার ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।
১৯৯০ অথবা ৯১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতির প্রথম খসড়া তৈরিতে আমি সহায়তা করেছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে, দীর্ঘসময়ে এই নীতির অগ্রগতি খুব সামান্যই ছিল। তখন থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি, প্রতিবন্ধীদের সমস্যাগুলো সরকারি দপ্তরগুলো ঠিক কোন নজরে দেখে থাকে। ৪৪ বছর আগে, ১৯৮১ সালকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী বর্ষ ঘোষণা করা হলেও, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রায়শই সরকারের বাজেট পরিকল্পনার একেবারে তলানিতে থেকে যায়। তাই পরিষ্কারভাবে বলা যায়, এই ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করা প্রয়োজন। তবে, আমি খুশি যে বাংলাদেশের সরকার এখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যাগুলোর প্রতি আরও মনোযোগী হয়েছে এবং ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ২০০১ সালের প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইনকে সংশোধন ও শক্তিশালী করেছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বহুপাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলি (আইএনজিও) এখন ‘বাদ যাবে না কেউ’ এবং ‘প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি’ স্লোগান গ্রহণ করেছে। ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে, দাতাদের কাছ থেকে অনুদান পেতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে নারী সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল। আজ এতগুলো বছর পর, অবশেষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারও স্বীকৃতি পাচ্ছে।
বহুবছর ধরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধী বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হওয়ায় আমার কর্মজীবন সমৃদ্ধ হয়েছে। আমি সবসময় একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতিবন্ধকতার চেয়ে তার ব্যক্তিত্বের দিকে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করেছি।
আমি আশা করি, নিচে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছি-যার বেশিরভাগ আমি ৩৮ বছর আগে উল্লেখ করেছিলাম-সেগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে তাদের বুঝতে সুবিধা হবে-তাদের কী করা প্রয়োজন এবং তারা কীভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বুঝবেন। তবে সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো, যদি আপনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সঙ্গে ভালভাবে মেলামেশার উপায়গুলো না জানেন, তাহলে সরাসরি তাদের কাছ থেকেই পরামর্শ নিন। আমি আশা করি, এই করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলোর পাঠক এবং বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনকে এই নির্দেশনা সমৃদ্ধ করবে।
-একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি আচরণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যেন তাকে অন্যধরণের প্রতিবন্ধী মনে না হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, মানুষ হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অতি সরল ভাষায় কথা বলে, বধিরদের দিকে চিৎকার করে কথা বলার চেষ্টা করে এবং দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে অনেক সময় অন্য কারো মাধ্যমে সম্বোধন করে।
-ব্যক্তির প্রতিবন্ধকতার দিকে নজর না দিয়ে, তার ব্যক্তিত্বের প্রতি মনোযোগ দিন।
-যদি আপনি মনে করেন যে কাউকে সাহায্য করা প্রয়োজন, তাহলে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন তাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারেন। অনেক সময় সাহায্যের প্রস্তাব দিতে আপনার লজ্জা লাগতে পারে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সাহায্য চাইতে সংকোচ বোধ করতে পারেন। তবে, আপনার সাহায্য তাদের প্রয়োজন না হলে বিরক্ত হবেন না; কারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সাধারণত আত্মনির্ভরশীল থাকতে চান। পরেরবার সাহায্য লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতেও আবার কুণ্ঠাবোধ করবেন না।
-‘আপনার জায়গায় থাকলে আমি এমনটা করতাম না’, এই ধরনের মন্তব্য করবেন না। একজন প্রতিবন্ধী তার সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ধারণা রাখেন।
-করুণা প্রকাশ করে কখনোই বলবেন না, ‘আমি জানি না আপনি নিজেকে কীভাবে সামলান; আমি মরেই যেতাম যদি আপনার মতো হাঁটতে না পারতাম।’ এই ধরনের মন্তব্য কষ্টদায়ক হয় এবং প্রশংসার আড়ালে তাকে আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয় যে সে আসলে আলাদা।
-প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক আচরণ করা উচিত এবং তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেওয়া উচিত নয়। অন্যান্য শিশুদের মতো, প্রতিবন্ধী শিশুদেরও তাদের নিজস্ব সমাজে গ্রহণযোগ্য আচরণ শেখা উচিত।
-প্রথমেই নিজের পরিচয় দিন। একজন অন্ধ ব্যক্তি আপনার কণ্ঠস্বর নাও চিনতে পারেন। তাই, পুরনো পরিচয়ের সূত্র ধরে আপনাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়াটা তার জন্য কঠিন হতে পারে। আপনার নাম তো বলবেনই, সঙ্গে এমন কিছু যোগ করুন যা আপনাকে চিনতে সাহায্য করবে। তাকে একটু ধরিয়ে দিন। যেমন, ‘কেমন আছেন? আমি তাসনিম। গত সপ্তাহে শাহানার বাড়িতে দেখা হয়েছিলো...’
-অন্ধ ব্যক্তির নাম মনে রাখার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করুন। তার নাম দিয়ে আলাপ শুরু করলেই বোঝানো যাবে যে আপনি তার সঙ্গেই কথা বলছেন।
-একজন অন্ধ ব্যক্তিকে ‘আপনাকে দেখে ভালো লাগল’ বা এই ধরণের কথা বলতে সংকোচ করবেন না। তিনি হয়তো একই রকম কথা নিজেও বলতে পারেন। অন্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গে দৃষ্টি সংশ্লিষ্ট শব্দ বা কথা এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক সময় তারা নিজেরাও এ নিয়ে সচেতন নন বা তেমন অস্বস্তি বোধ করেননা।
-হঠাৎ করে কোন অন্ধ ব্যক্তির হাত ধরবেন না। এতে অন্ধ ব্যক্তিটি চমকে যেতে পারেন। বরং কোন অন্ধ ব্যক্তির হাত একেবারেই ধরা উচিত নয়! এর চেয়ে ভালো, তাকে আপনার হাত ধরতে দিন। এরপর সে আপনার থেকে একটু পিছিয়ে থাকবে কিন্তু ঠিক কোনদিকে যাচ্ছেন সময়মত টের পেয়ে যাবেন।
-‘এখানে একটা ধাপ আছে’-এরকম বলবেননা। বলুন, ‘এক ধাপ ওপরে’ বা ‘এক ধাপ নিচে’। সিঁড়ি বা ধাপ বেশি উঁচু হলে বেশি নিচু হলে অবশ্যই সেটা উল্লেখ করবেন।
-দরজা অর্ধেক খোলা রাখা উচিত নয়। পুরোপুরি বন্ধ করুন অথবা দেয়ালের সঙ্গে পুরোটা ভেজিয়ে দিন।
-একজন অন্ধ ব্যক্তিকে টেলিভিশন দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না। এটি তাকে তার দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন বন্ধুদের জগতে প্রবেশের সুযোগ দেয়।
-আপনার অন্ধ বন্ধুকে বাইরের কার্যকলাপ থেকে বাদ দেবেন না। তার জন্য কেনাকাটা করার পরিবর্তে তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে আপনার সঙ্গে কেনাকাটা করতে যেতে চায় কিনা।
-শেখার সক্ষমতা কম এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি শিশুদের আগ্রহকে অবহেলা করবেন না বা শিশুদের ব্যাপারে তাদের আগ্রহকে দমিয়ে রাখবেননা (যাকে অনেক সময় ভুলভাবে 'মানসিকভাবে পিছিয়ে' থাকা ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়)। এতে সেই ব্যক্তি মনে করতে পারেন, শিশুকে স্পর্শ করা বা হাত ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ করমর্দন করা ভয়ের বা লজ্জার বিষয়। আর যদি সে শিশুকে কাছে আসার জন্য হাত বাড়ায়, তাহলে আপনি নিজেই তার হাত ধরুন, এতে মনোযোগ আপনার দিকে চলে আসবে। লজ্জার বা সংকোচের অনুভূতি তৈরি হবেনা।
-শেখার সক্ষমতা কম এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খুব কম সংখ্যক মানুষই আক্রমণাত্মক হয়, বিশেষ করে তারা মানুষের মধ্যে থাকলে ধরে নেওয়া যায় তাদের আক্রমণাত্মক স্বভাব নেই। এই ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা এবং প্রত্যাখ্যান করা তাদের জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে।
-সৎ থাকুন এবং আপনার প্রতিশ্রুতি পালন করুন। মনে করবেন না যে শেখার সক্ষমতা কম এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আপনার কথাগুলো বুঝতে বা মনে রাখতে অক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ৫০ বছর বয়সী ছেলে নীল, যার শেখার সক্ষমতা খুবই সীমিত, তার স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ভালো, দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা অসাধারণ এবং ও রসিকতাও করতে পারে অনেক।
-মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির কথা শোনার জন্য কিছুটা সময় বের করুন এবং মনে করবেন না যে তাদের মতামত মূল্যহীন বা এই বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই।
-'প্রতিবন্ধী' শিশুদের বাবা-মায়ের প্রতি দয়া বা করুণা দেখানোর প্রয়োজন নেই; তাদের সন্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসা ঠিক ততই গভীর, যতটা কোনো সাধারণ শিশুর প্রতি অন্য বাবা-মায়ের থাকে।
-অযাচিতভাবে কাউকে পরামর্শ দিতে যাবেন না। তবে যদি মনে হয় কারও পেশাদার পরামর্শের প্রয়োজন, যেটা সে পাচ্ছে না, তবে সেটা বলতে পারেন।
-মনে রাখবেন আপনার যেকোনো সহায়তা দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজন হতে পারে। অর্থাৎ একবার দুবার নয়, হয়ত অনেকদিন ধরে সাহায্য করতে হতে পারে।
-মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে নিজেকে সামলানোর পরামর্শ দেওয়া ঠিক নয়। যদি তারা সত্যিই তা করতে পারতেন, তবে নিশ্চয়ই করতেন।
-হুট করে কারও হুইলচেয়ার ধরে বসবেন না। সাহায্যের অনুরোধ করলে তবেই ধরবেন। হুইলচেয়ার ঠেলার জন্যেও অভিজ্ঞতা দরকার। অনভিজ্ঞ কেউ সহজেই চেয়ারে বসা ব্যক্তিকে বিপদে ফেলতে পারে। দ্রুত চেয়ারটি ঘোরাতে চাইলে আগে থেকে সতর্ক করুন। আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তাকে জানানোটাই আসলে বুদ্ধিমানের কাজ।
- হুইলচেয়ারে বসা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি যে গতিতে তাকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা আরামদায়ক কিনা? খুব দ্রুত ঠেললে সে অস্থির হয়ে উঠতে পারে। আবার খুব ধীরে ঠেললে সে বিরক্ত হয়ে যেতে পারে।
-হুইলচেয়ারটি দুই হাতল ধরে তুলবেন না, ফসকে যেতে পারে। মনে রাখবেন, পেছন থেকে আপনার কথাগুলো শোনার জন্যে হুইলচেয়ার সওয়ারীর বেশ বেগ পেতে হবে। আশেপাশের আরও অনেক শব্দের দরুণ আপনার কথা শুনতে তার অসুবিধা হতে পারে। তাছাড়া পেছনে থেকে আপনি কখন কোন জিনিসটা ইঙ্গিত করছেন সেটাও বুঝতে অসুবিধা হবে।
- হুইলচেয়ারে বসা ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করার সময় আপনিও বসে কথা বলুন। সবসময় ওপর দিকে তাকিয়ে থাকতে যেমন ঘাড় ব্যাথা করে, তেমনি আবার সারাক্ষণ কেউ যদি দেখে সবাই তার সঙ্গে কথা বলতে নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে, তাতে মনটাও ছোট হয়ে যায়।
-তাকে জিজ্ঞাসা করুন কিভাবে সিঁড়ি বেয়ে হুইলচেয়ারে উঠতে বা নামতে হয়; অনেক সময় সহজ কিছু পদ্ধতি বা কৌশল থাকে যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই জানেন।
-বধির ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় আপনার মুখ যেন পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, তা নিশ্চিত করুন। আলোর দিকে মুখ করে কথা বলুন, কারণ যদি আপনি আলো বা জানালার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মুখ অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ঠোঁট নড়ানো দেখা যাবেনা, যার ফলে আপনার কথা বুঝতে তাদের অসুবিধা হবে। এছাড়া, এদিক-ওদিক নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে আপনার বধির বন্ধু প্রতিবার মুখ ঘুরিয়ে কথা বলার সময় আপনার কথা বুঝতে সমস্যায় পড়তে পারে।
-আপনার মুখের অঙ্গভঙ্গি অতিরঞ্জিত করার দরকার নেই। এতে বধির ব্যক্তিটির আসলে কোন সুবিধা হয়না। এর ফলে তিনি যে সূক্ষ্ম সংকেতগুলি ধরতে পারেন, সেগুলি বিকৃত হয়ে যাবে। এছাড়াও, চিৎকার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি কোনো উপকারে আসবে না বরং বধির ব্যক্তির শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
-বধির ব্যক্তিরা অন্ধকারে বেরোতে ভয় পেতে পারেন, কারণ তারা ইতিমধ্যে একটি ইন্দ্রিয় থেকে বঞ্চিত। এই কারণে, অন্য ইন্দ্রিয়ের অভাব তাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। ঘরের ভেতরে তাদের জন্য নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। রাতে তাদের সঙ্গে বাইরে গেলে টর্চ নিতে ভুলবেন না এবং কথা বলার সময় আলোটি নিজের মুখের দিকে রাখুন।
-যদি আপনি কোন বধির ব্যক্তির কথা বুঝতে না পারেন বা তার শ্রবণযন্ত্রে সমস্যা হচ্ছে মনে করেন, তাহলে নিরব থাকবেন না। স্পষ্টভাবে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন। অন্যথায়, সে কীভাবে জানবে যে আপনি তার কথা বুঝতে পারছেন না?
-অবজ্ঞা করবেন না। একজন বধির ব্যক্তির কণ্ঠস্বর হয়তো অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু তার প্রতি এমন আচরণ করা উচিত নয় যেন তার শেখার অক্ষমতাও রয়েছে।
-গান বাজান। বধির ব্যক্তিরা কম্পনের মাধ্যমে সুর অনুভব করতে পারে। বধির কিশোর-কিশোরীরা রেকর্ড এবং ডিস্কোতে নাচতে পছন্দ করে - গান যত জোরে বাজবে, ততই তারা আনন্দ পাবে।
লেখক: ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী ও মানবতাবাদী, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শরণার্থীদের সহায়তায় অক্সফামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন জুবাইদা রহমান
খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন ১৪ জন
ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: খালিদ হোসেন
বুড়িচংয়ে প্রবাসীরস্ত্রীর লাশ উদ্ধার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
খালেদা জিয়া কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা চৌদ্দগ্রামে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া
জাতীয় নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট
‘কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ -এর কাছে কিছু প্রত্যাশা
‘ফলস স্মাটে’ কৃষকের সর্বনাশ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২