
গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা, ফাঁড়ি থেকে লুট হয় বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জননিরাপত্তার জন্য এগুলো বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া এগুলো নির্বাচনের সময়ও ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যার বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ঢাকার বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশনসহ একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় অস্ত্র বা গোলাবারুদের চালান আটক করে সেনাবাহিনী, পুলিশ তথা যৌথ বাহিনী। যেগুলোর বেশির ভাগের গন্তব্য ছিল ঢাকামুখী। এ ছাড়া সংখ্যার হিসাব করলে দেখা যাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রের চেয়েও অনেক বেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নানাভাবে অপরাধীদের হাতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের মজুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লুট হওয়া অস্ত্র বা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী থানা, ফাঁড়ি ও স্থাপনায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের ৫ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। লুট হওয়া এসব অস্ত্রের মধ্যে গত ১০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৪২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সে হিসেবে বাকি ১ হাজার ৩৪০টি আগ্নেয়াস্ত্রের এখনো হদিস নেই। এ ছাড়া লুট হওয়া ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮টি গুলির মধ্যে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৮টি গুলি উদ্ধার হয়েছে। এখনো ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৮০টি গুলির হদিস মেলেনি। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৭৭ শতাংশ আগ্নেয়াস্ত্র এরই মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ২৩ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, অস্ত্রের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ লুট বা খোয়া যায়। সেগুলো অনেকটা উদ্ধার করা হয়েছে। মাঝে-মধ্যেই পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। কেননা, অস্ত্র না থাকলে শুধু গোলাবারুদ দিয়ে কোনো কাজ হবে না। পুলিশ এ বিষয়ে সব সময় নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, লুট হওয়া এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের অধিকাংশই পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েও অবৈধ অস্ত্র ঢোকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে রাজনৈতিক খুনোখুনি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আরও বেড়ে যেতে পারে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেকোনো মূল্যে এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে নিজেদের আয়ত্তে নিতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ নৃশংস ঘটনা ব্যাপক বেড়ে যেতে পারে।
লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসী বা সাধারণ মানুষের হাতে থাকাটা স্পর্শকাতর বিষয়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এটিকে ঘিরে সন্ত্রাসীরা তৎপর হবে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে। এ সময় লুট হওয়া অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এতে করে সাধারণ মানুষের জানমাল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই সরকারকে এখনই লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেকোনো মূল্যে এসব লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে আরও তৎপর হতে হবে। আশা করছি, সরকার একটি সুষ্ঠু ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে জোরালো পদক্ষেপ নেবে।
