গত বছরের
৩১ মে’র মধ্যে যেতে না পারা কর্মীদের পুনরায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৬০ জন কর্মীর একটি ফ্লাইট মঙ্গলবার (২৫
নভেম্বর) মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হবে। মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে এসব কর্মীর
কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সরকারি রিক্রুটিমেন্ট এজেন্সি বোয়েসেল
সূত্রে জানা গেছে। বিমানবন্দরে তাদের বিদায়ের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার আয়োজন
করা হয়েছে।
বোয়েসেল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় একটি
ফ্লাইটে ৬০ জন কর্মী মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। তাদের মধ্যরাতে
কুলালামপুরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তাদের বিদায় জানাতে প্রবাসী কল্যাণ
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সিনিয়র সচিব নিয়ামত উল্ল্যাহ ভুইয়া বিমানবন্দরে
উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বোয়েসেল সূত্রে জানা যায়, গত ২১-২২ মে
অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় ১৭
হাজার ৭৭৭ জন কর্মীর মধ্যে গত বছর মালয়েশিয়া যেতে না পারা ৭ হাজার ৮৭৩ জন
কর্মীকে পাঠানোর জন্য বোয়েসেলকে দায?িত্ব দেওয়া হয়। শুধুমাত্র কনস্ট্রাকশন ও
ট্যুরিজম— এ দুটি খাতে কর্মী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৭ আগস্ট
কন্সট্রাকশন লেবার এক্সচেঞ্জ সেন্টার বেরহাদের সঙ্গে কর্মী পাঠানো-বিষয়ক
চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী
সরকারি প্রতিষ্ঠান কন্সট্রাকশন লেবার এক্সচেঞ্জ সেন্টার বারহাদ থেকে ৫০০ জন
কর্মীর চাহিদা পাওয়া যায়। এই ৫০০ জনের মধ্যে ২৫৫ জন কর্মীর ভিসা পাওয়া
গিয়েছে এবং তাদের পাঠানোর জন্য সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
বোয়েসেলের
একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী ৩০ নভেম্বর এবং ২ ডিসেম্বর আরও দুটি ফ্লাইটে
১২০ জন কর্মী যাওয়ার কথা আছে। তাদের টিকিট ইতোমধ্যে কনফার্ম করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া
সরকার গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয় কর্মী নেওয়ার জন্য।
সিদ্ধান্ত ছিল, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চের পর নতুন করে আর কর্মীর চাহিদাপত্র
ইস্যু করবে না তারা। এর আগে ইস্যু করা চাহিদাপত্রে ৩১ মে পর্যন্ত দেশটিতে
প্রবেশ করা যাবে, এরপর আর বিদেশি কোনও কর্মী সে দেশে প্রবেশ করতে পারবেন
না। তবে সেই সিদ্ধান্তের পর অনেকেই কাগজপত্র ঠিক থাকলেও শেষ মুহূর্তে
প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারেনি রিক্রুটিং এজেন্সি। যার ফলে অনেক
কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যায়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান
ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া
হয়। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গেছেন।
মালয়েশিয়ার
ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছিল তৎকালীন
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নূর মো.
মাহবুবুল হককে। কমিটিকে কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠাতে ব্যর্থতার কারণ
অনুসন্ধানের পাশাপাশি বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের হয়রানি বন্ধ এবং ভবিষ্যতে এ
ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল। তবে
কমিটি রিক্রুটিং এজেন্সির ওপর দায় চাপিয়ে একটি দায়সারা রিপোর্ট জমা দেয় বলে
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
কমিটির রিপোর্টে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন
ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে কোন এজেন্সি কতো কর্মী
পাঠাতে পারেনি তার ধারনা ছিল রিপোর্টে অস্পষ্ট। তদন্ত প্রতিবেদন তখনকার
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হলে তারাও প্রতিবেদন
‘পূর্ণাঙ্গ নয়’ বলে জানায়। কারণ, যেতে না পারা কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ কো হয়নি। এছাড়া তদন্তের সময়ে কমিটির কাছে কর্মীদের
প্রায় ৪ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছিল।
গত বছরের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ
সফরকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধান উপদেষ্টা ড.
মোহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের নেওয়ার অনুরোধ করেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দেন। গত ১৩- ১৬ মে
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল
ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী
মালয়েশিয়া সফর করেন।
গত ২ আগস্ট মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়,
মালয়েশিয়া সরকার ২০২৪ সালের ৩১ মে’র মধ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে না পারা
কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীকে নিয়োগে সম্মত হয়েছে। এই নিয়োগ কার্যক্রম হবে
সরকারি জনশক্তি রফতানিকারক সংস্থা বোয়েসেল (বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট
অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড)-এর মাধ্যমে।
বোয়েসেল যেতে না পারা কর্মীদের
সাক্ষাৎকারের জন্য আহ্বান জানায় এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সংস্থাটির
পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, ২০২৪ সালের ৩১মে’র মধ্যে যেসব বাংলাদেশি কর্মী সব
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর এবং ভিসার মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও নানা জটিলতায়
মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, সে-সব তালিকাভুক্ত কর্মীদের সরকারি উদ্যোগে
বোয়েসেলের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি একটি
বিশেষ উদ্যোগ। গত বছরে যেতে না পারা কেবলমাত্র ৭ হাজার ৮৭৩ জন তালিকাভুক্ত
কর্মীর জন্য এ প্রক্রিয়া প্রযোজ্য। তালিকাভুক্ত কর্মীরা নির্ধারিত সেক্টর
(কনস্ট্রাকশন, ট্যুরিজম)-এ প্রশিক্ষণ গ্রহণপূর্বক সরকার নির্ধারিত অভিবাসন
ব্যয় মাত্র ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় শুধুমাত্র বোয়েসেল-এর মাধ্যমে
মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন।
