কুবি
প্রতিনিধি: অনিয়মের অভিযোগ এনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক
নিয়োগ বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক
চৌধুরী। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে চিঠির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন
শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুল কাইয়ূম চত্বরে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।
শিক্ষার্থীরা
"বহিরাগতদের দাদাগিরি, চলবেনা চলবেনা "কুবিয়ানদের এক দাবি শিক্ষক নিয়োগ
দিতে হবে" "সেশন জট আর নয়,আর নয় আর নয়" "এসো ভাই এসো বোন গড়ে তুলি আন্দোলন"
সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জানা যায়, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী
নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ এনে এসব
নিয়োগ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন কুমিল্লা-০৬
আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী। তাঁর এই
অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি)
তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষার্থীরা
অভিযোগ করেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক সংকট চরম
পর্যায়ে। বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের
দাবির প্রেক্ষিতে ইউজিসি নিয়োগ পদ দিয়েছেন। তবে শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক
হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে বিএনপি ও শিক্ষকদের একটি পক্ষ নিয়োগ আটকে দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা তা মেবে নিবেন না। শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল
করে দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।
ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের
শিক্ষার্থী আবদুর রহমান সাদী বলেন, “আমরা গত এক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগের
জন্য চিঠি, স্মারকলিপি এবং আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছি। এমনকি
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পর্যন্ত আমাদের আবেদন পৌঁছেছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। বর্তমানে
মাত্র পাঁচজন শিক্ষক নিয়ে পুরো বিভাগের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি
ব্যাচের জন্য একজন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন যেখানে প্রতি ২৫ জন শিক্ষার্থীর
জন্য একজন শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক। যদি আমাদের শিক্ষক নিয়োগে কোনো বাঁধা
সৃষ্টি করা হয়, আমরা কঠোর অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার পর্যন্ত
যেতে বাধ্য হব।”
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের
শিক্ষার্থী ফারুক নাহিয়ান বলেন, “আজকে যে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলেনি, সেটা
হলো শিক্ষক রাজনীতি। গত ফ্যাসিস্ট আমলে শিক্ষক সমিতি এবং তৎকালীন ভিসির
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম ছয় মাস
সেশনজটে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল। এটার কারণ যদি
লক্ষ্য করা যায়, দেখা যায় দু’পক্ষই অনৈতিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে
অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি করেছে এবং আমাদের ভুক্তভোগী করেছে। আমরা হাসিনার
আমলে বিভিন্ন গ্রুপ দেখেছি, সেগুলো আমরা দমন করেছি। এখনো কিছু গ্রুপ লক্ষ্য
করছি। আপনাদের দমন করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না।”
ফার্মাসি বিভাগের
২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহানুল ইসলাম সোহান বলেন, “শিক্ষক সংকট
নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছি। আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা
প্রায়ই সেশন জটের সমস্যায় ভুগছে। অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।”
এ বিষয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, "যে যাই বলুক
যোগ্যতা ছাড়া কোন মাপকাঠিতে নিয়োগের পক্ষে আমি না। এখনো পর্যন্ত যে সকল
নিয়োগ হয়েছে তা স্বচ্ছতার সাথে হয়েছে। সেই সাথে উচ্চ সিকিউরিটির মাধ্যমে
নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গত এক বছর বহুবার আবেদনের পর আমরা পদ
পেয়েছি। নিয়োগের কাজ চলমান। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর মধ্যে আমরা নিয়োগ
প্রক্রিয়া শেষ করবো।
