শুক্রবার
সকালের ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলেও সেই কম্পনই ওলট-পালট করে দিয়েছে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এক পরিবারকে। দেয়াল ধসে নিহত হয়েছে মাত্র ১০ মাস
বয়সী কন্যা ফাতেমা। গুরুতর আহত হয়েছেন তার মা কুলসুম বেগম (৩০)। আহত
স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য সকাল থেকে ছুটাছুটি করতে গিয়ে নিজের
সন্তানের দাফনেও উপস্থিত থাকতে পারেননি ফাতেমার বাবা আব্দুল হক।
গোলাকান্দাইল
ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক সকাল ১০টা
৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পের পর জানতে পারেন রাস্তার পাশে অবস্থানকালে তাদের ওপর
ধসে পড়েছে একটি উঁচু প্রাচীর। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় ছোট্ট ফাতেমার।
মারাত্মক আহত হন তার মা কুলসুম ও প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার (৩৫)।
প্রতিবেশী
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া জানান, ইট সরিয়ে ফাতেমাকে বের করি। তখনই বোঝা যায় আর বেঁচে
নেই। মা তখন সঙ্গাহীন অবস্থায় পড়ে ছিল। বিকেলে স্থানীয় কবরস্থানে শিশুটির
দাফন সম্পন্ন হয়। কিন্তু সেখানে ছিলেন না মা কিংবা বাবা-কুলসুমকে চিকিৎসা
করাতে ছুটতে ছুটতে তিনটি হাসপাতাল ঘুরেও শয্যা পাননি তারা।
নিহত ফাতেমার
খালু মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘দুপুর থেইকা আমরা ঘুরতেছি। ঢাকা মেডিকেলে খালি
ওয়াশ কইরা ব্যান্ডেজ কইরা বলে সিট নাই, বাড়ি নিয়ে যান। মাথায় এত জখম, হুঁশ
নাই-তারে কেমনে বাড়ি নিয়ে যাই? কিন্তু ভাই, তিনটা জায়গায় গিয়াও কোথাও
ভর্তি করাতে পারতেছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ক্ষমতা নাই।
নাইলে তিনটা জায়গায় গিয়াও চিকিৎসা কেন পামু না? আমার সোনার বাংলাদেশে
গরিবের চিকিৎসা নাই।’
মোহাম্মদ হোসেন জানান, ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হলেও জানানো হয়
শয্যা নেই। পরে ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নিলে ভর্তি নিতে অপারগতা জানায়।
সবশেষ চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবার কুলসুমকে নিয়ে আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল
ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছেন তারা।
দুপুরে
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে রূপগঞ্জের ইউএনও সাইফুল ইসলাম জানান, এলাকায়
বেশিরভাগই এক-দোতলা ঘর, নকশা বা নিয়ম মেনে ভবন-প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি।
ধসে পড়া দেয়ালটি ১০ ফুট উঁচু, রড বা পিলার ছিল না।
তিনি বলেন, এটা
ন্যাচারাল ডিজাস্টার। তবে দেয়ালটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, রড-পিলার ছাড়া এত উঁচু
করা ঠিক নয়। আমরা কাল থেকে মাইকিং করে রিস্কি দেয়াল ও অবৈধ স্থাপনা ভাঙার
উদ্যোগ নেব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত শিশুর দাফনের জন্য ২০ হাজার
টাকা প্রদান করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেওয়া
হয়েছে।
কুলসুমকে কোথাও ভর্তি করাতে না পারার বিষয়ে ইউএনও বলেন, আমরা
জানতাম তিনি ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। হয়তো ইনফরমেশন গ্যাপ হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও তাদের চিকিৎসা নিয়ে নির্দেশনা আছে। আমরা বিষয়টি
দেখছি।
