রাজধানীর শনিরআখড়া কাঁচাবাজারে বিচিযুক্ত শিম কিনতে এসে এক কেজির বদলে তিন পোয়া নিলেন গৃহিণী সুমাইয়া সুমি।
পরিমাণ কমানোর প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বললেন, ‘‘শীত তো নাইমা গেল, দাম কমব কবে। বাজারে কত শিম, দাম তো কমার কথা এখনই।”
তবে
বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিমের জবাব, “শীত নামুক, এহনো তো নামে নাই। শীত নামলে
কাঁচামালের আমদানি (সরবরাহ) বাড়ে। তখন বিক্রিও হবে এহনকার চাইতে কমে।”
বিচিওয়ালা শিম ২০০ কেজি দরে বিক্রি করছেন সেলিম।
তার
ভাষ্য, “এ সিম তো কেবল নামল, দুইশ টাকা কেজি। শুরুতে দাম বেশিই থাকে। বিচি
ছাড়া সিম তো দুইশ টাকা বেচছি (শুরুতে), এহন তো ১২০ টাকায় বেচি।”
কেবল
তিন সবজির দাম কম থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, শালগম ৬০ টাকা ও মুলা ৪০-৬০
টাকা আর পেপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহেও একই দাম
ছিল।
অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শীতের হিম হাওয়া অনুভূত হচ্ছে
রাজধানীতেও। শহরে দিনের বেলা তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও রাতের বেলায় শীতের
আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। শীত আরো জেঁকে বসতে শুরু করলে বাজারে মৌসুমি
সবজির সরবরাহ বাড়বে। আর তখন সবজির দামে স্বস্তি মিলতে পারে বলে ভাষ্য
বিক্রেতাদের।
শুক্রবার রাজধানীর শনির আখাড়া, যাত্রাবাড়ী, সেগুন বাগিচা ও
শান্তি নগরের সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের চেয়ে সবজির দামে
‘হেরফের কম’। জাত ও মানভেদে কিছু সবজির দামে পার্থক্য রয়েছে।
এ সপ্তাহে
বাজারে উঠেছে নতুন আলু। তবে পুরনো আলুর বর্তমান দামের চেয়ে নতুন আলু
শুক্রবার দশগুণ বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে শনিরআখড়া কাঁচাবাজারে।
পুরনো
আলু বিক্রি হচ্ছে ২০/২৫ টাকা কেজি দরে, আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা
কেজিতে। অপরদিকে বিচি ছাড়া শিম ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও বিচিযুক্ত নতুন শিম
বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
শীতের সবজি শিম, ফুলকপি, টমেটো, গাজর, বাঁধাকপির দাম আগের সপ্তাহের মতই রয়েছে।
আলুর দাম নিয়ে শনির আখাড়ার বিক্রেতা মোহাম্মদ ইমন তিনি বলেন, ‘‘পরথম উডাইলাম আলু। এক পাল্লা (৫ কেজি) আনছি, তাও শুক্কুরবার দেইখা।
“পুরান আলু তো ২০ টাকা কেজি, সবাই তো ২০০ টাকার আলু খাইব না।”
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা সোহেল আহমেদ ঢেঁড়স বিক্রি করছেন ৮০ টাকা কেজি দরে। আগের সপ্তাহে ঢেঁড়সের দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা কেজি।
বেগুনের
দাম ‘সামান্য বেড়েছে’ মন্তব্য করে সোহেল বলেন, “মোটা বেগুন আসায় এক কেজির
দাম ১০০-১২০ টাকায় উঠছে। ‘সাদা গোল’ বেগুন ১০০ টাকা, আর মোটা লম্বা বেগুন
১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ৮০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বেগুন।
ছুটির দিন শুক্রবার এক সপ্তাহের বাজার সেরে নেন ক্রেতা সৈয়দ বোরহানুল কবির। শুক্রবার সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে আসেন তিনি।
বাজারে
দামের প্রসঙ্গে তুললে তিনি বলেন, “দাম তো খুব বেশি ওঠানামা করছে না। শীতে
তো সবজির ভ্যারাইটি (প্রকার) অনেক বেশি। সব দামেরই আছে, যে যেটা পছন্দ করে
কিনতে পারে। শীতকালে এটাই সুবিধা। এখন ৬০ টাকারও সবজি আছে, ২০০ টাকারও
আছে।’’
আগের সপ্তাহের দরে শুক্রবার ফুলকপি প্রতিটি ৪০-৬০ টাকা,
চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও পটলের কেজি ৬০ টাকা ও বরবটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি
দরে।
যাত্রাবাড়ীতে দেশি জাতের টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়, এক সপ্তাহ
আগেও এর দাম ছিল ২০০ টাকা। অন্য জাতের টমেটো বিক্রি হচ্ছে এক সপ্তাহ আগের
দর ১৫০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৫০ টাকা কমে
শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। আমদানি করা গাজর ১৬০ টাকা,
কায়তা/চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ও করলা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে
শান্তিনগরে। আগের সপ্তাহেও গাজর ১৬০ টাকা, কাঁকরোল ও উস্তা ৯০ থেকে ১১০
টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
তিন সপ্তাহ ধরে বাড়তি পেঁয়াজের দাম। শুক্রবার শান্তিনগরে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৪০ টাকা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
শুক্রবার যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের সুলতান আহমেদ টিটু বলেন, “ব্রয়লার মুরগি এক কেজি ১৭০ টাকা। আগের সপ্তাহে দাম ছিল ১৭৫-১৮৫ টাকা।”
এদিন
দেশি মোরগ একটি ৫৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০
টাকায়। গত সপ্তাহে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩১০ টাকা কেজি দরে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম খুচরা পর্যায়ে আগের দাম অর্থাৎ এক হালি ৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছের
বাজারে দামের তারতম্য কম। শুক্রবার শনিরআখড়া ও সেগুন বাগিচায় রুইমাছ ৩৫০
টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা ও পাঙ্গাস ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহেও
একই দামের চিত্র দেখা গেছে।
পাবদা মাছ ৫০ টাকা বেড়ে এ সপ্তাহে ৪০০ টাকা,
শিং মাছ আগের দরে ১৫০-৪৫০ টাকা, নলা মাছ ৫০ টাকা কমে ৩৫০ টাকা কেজিতে
বিক্রি হয়েছে সেগুন বাগিচায়।
এ বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কসাই কাওসার আলম বলেন, ‘‘হাড্ডি বুইঝা মাংসের দাম।’’
যাত্রাবাড়ীতেও
গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক হাড্ডি কম মাংস
পেতে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুণতে হয়েছে ক্রেতাকে।
