চট্টগ্রামের
সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মোটরসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
দুর্ঘটনায় পড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে
৬টার দিকে উপজেলার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের নুনাছড়া বটতলা এলাকায় ঘটনাটি
ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠান এবং মৃতদেহ উদ্ধার করেন। হাইওয়ে
পুলিশ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়,
চট্টগ্রামমুখী সিডিএম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নুনাছড়া বটতলা এলাকায়
পৌঁছালে হঠাৎ সামনে একটি মোটরসাইকেল চলে আসে। চালক সেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা
করলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানকে পেছন থেকে
ধাক্কা দেয় এবং সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে বাসে থাকা যাত্রীরা ছিটকে
পড়ে বহুজন হতাহত হন।
খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস এবং কুমিরা
হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত
হয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত করেন। আহত ২০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে আশঙ্কাজনক
অবস্থায় আহত অর্ণব ও রিজভীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অর্ণবকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবং রিজভীকে ২ নম্বর ওয়ার্ডে
ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দুই জনের অবস্থা গুরুতর, অন্যদের অবস্থা স্থিতিশীল।
স্থানীয়রা
জানিয়েছেন, হাসপাতালে পাঠানো ২০ জন ছাড়াও আরও অন্তত ১০ জনকে দ্রুত বিভিন্ন
হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাই আহতের সংখ্যা ৩০-এর কম হবে না বলে মনে করছেন
তারা।
নিহতদের মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া গেছে- চট্টগ্রাম ইয়াং ওয়ান
গার্মেন্টসের কর্মী, কুমিল্লার বাসিন্দা আবদুল গণির পুত্র মো. শাহ আলম (৫৫)
এবং ফেনীর ছাগলনাইয়ার বাসিন্দা সাবেক পুলিশ সদস্য মো. কামাল (৪৫)। শাহ আলম
বর্তমানে চট্টগ্রামের পোর্ট কলোনীতে বসবাস করতেন।
আহতদের মধ্যে
রয়েছেন-বাড়বকুণ্ডের বাসিন্দা অর্ণব দেব (২২), জিপিএইচ ইস্পাতের কর্মী রনি
(৩৫) ও নয়ন (২০), চন্দনাইশ উপজেলার রিজভী (৩২), সীতাকুণ্ডের মিঠাছড়ার রিংকু
(৩০), ফেনীর জাহাঙ্গীর আলম (৫৯), চট্টগ্রামের চকবাজারের সাইফুল ইসলাম
মারুফ (৩০) এবং ঢাকার বাসিন্দা মাসুদ (৩০)। এছাড়া চারজন অজ্ঞাত আহতকে
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাতায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরও
অন্তত ১০ জন আহত যাত্রী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দুর্ঘটনায়
বেঁচে যাওয়া যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বাসে আমি ছিলাম। আমার বাড়ি ফেনী
মহীপাল। ডান হাত, বাম পা ও মাথায় আঘাত পেয়েছি। বেপরোয়া গতির কারণেই
দুর্ঘটনা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।'
আরেক
যাত্রী, ঢাকার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জানান, 'ব্যবসায়িক কাজে
চট্টগ্রাম নিউ মার্কেটে যাচ্ছিলাম। হাতে-পায়ে ব্যথা পেয়েছি। চিকিৎসা
নিয়েছি। আমার সঙ্গে থাকা অনেকে মারা গেছেন।'
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের
ইনচার্জ মো. জাকির রাব্বানী বলেন, 'চট্টগ্রামমুখী সিডিএম পরিবহনের বাসটি
মোটরসাইকেলকে বাঁচাতে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে
খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন ও হাসপাতালে আরও একজন মারা যান। আহত
২৫–৩০ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন, বাকিরা হাসপাতালে
আছেন।'
