
অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি আমরা।
এ জন্য ভোটে দাঁড়ানো ও ভোট দেওয়ার সম-অধিকারের কথাও বারবার বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও এর কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।
ইতোমধ্যে
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার টাকার পরিমাণ ও বিগত দিনের তুলনায় খরচের পরিমাণও
বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আইনিভাবে নির্বাচনের জন্য খরচের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
যদিও বিগত দিনে দেখা গেছে নির্ধারিত খরচের পরিমাণের থেকে বহুগুণ বেশি টাকা
খরচ করে শুধুমাত্র ক্ষমতা ভোগকারী প্রার্থীরা। নির্বাচনের পর এরা
নির্বাচনি খরচের যে হিসাব দেন ওই সব যে একেবারেই মিথ্যা এ কথা নতুন করে আর
বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থা পরিবর্তনের বিন্দুমাত্র আলামত দেখা যাচ্ছে
না।
একজন উপদেষ্টা তো আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন ১৫/২০ কোটি টাকা না হলে নাকি নির্বাচনই করা যায় না।
এবার হিসাব মিলিয়ে দেখুন, নির্বাচনের নামে কি পরিমাণ টাকার খেলা চলবে ?
অনেকদিন ধরেই বলছি: নির্বাচনে সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হলে অন্ততপক্ষে নির্বাচনকে
১. টাকা, ২. পেশি শক্তি, ৩. ভয়ের পরিবেশ, ৪. সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা ও ৫. প্রশাসনিক কারসাজি মুক্ত করতে হবে।
এর
কোনো আলামত একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি প্রচার মাধ্যমে এসব কথাও
বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা
যে ভয়াবহ রূপ লাভ করবে সেটাই ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আচরণবিধি ঠিক রেখে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার সার্বিক দায়-দায়িত্ব নিলে অনেক কিছু রোধ করা যেত।
নির্বাচনের
বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হলে এ কথাগুলো সামনে আসত। বিগত
দিনে আলাপ-আলোচনার সময় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এসব দাবি সিপিবি ও বামপন্থিদের
পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে।
এগুলো নিয়ে ভাবনার কেউ নেই।
নির্বাচনের আচরণ বিধি যতটুকু আছে তাও হয়তো কিছুটা দেখার চেষ্টা হয় নির্বাচন ঘোষণার পর।
কিন্তু
অনেকদিন ধরেই তো নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার প্রপাগান্ডার নামে টাকা
খরচের উৎসব চলছে। আমরা বলেছিলাম নির্বাচন কমিশনকে ৩৬৫ দিনই টাকা খরচসহ
নির্বাচনি আচরণ বিধির বিষয়টি মনিটর করতে হবে।
এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা
হয়নি এবং নির্বাচন কমিশন এখন কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। তাহলে টাকা খরচের,
সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের যে উৎসব চলছে
এগুলো রোধ হবে কীভাবে ?
যাদের এভাবে খরচ করার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই, তারা নির্বাচনে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে কীভাবে ?
আর
প্রচার মাধ্যমের কথা নাইবা বললাম। অধিকাংশ প্রচার মাধ্যম বিশেষ এক-দুইটা
দল বা এক দুজন প্রার্থীকে বিশেষভাবে প্রচারের সহায়তা করছে।
রাজনীতিতে
কার কি নীতি? কে কোন কোন বিষয় জনস্বার্থে কোন কোন ধরনের নীতিমালা প্রতিষ্ঠা
করতে চায়- এসব আলোচনার মধ্যে উঠে আসছে না। এই ভাবেই তো চলছে।
যদিও এসব কথা যখন বলছি তখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মনে বড় প্রশ্ন হচ্ছে:
‘যথাসময়ে অর্থাৎ সরকার ও নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে কি?’
সরকার
ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যথা সময় নির্বাচনের কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে।
আমরা বরাবর বলে এসেছি যে, কোন কোন মহল গণতন্ত্রের পথে যাত্রা বাধাগ্রস্ত
করার জন্য অবাধ গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এটা
মনে রেখে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন আদায় করতে হবে। এই ধারা অব্যাহত
রেখে যথাসময়ে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য দেশের
মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।
একই সঙ্গে নির্বাচনকে টাকা, পেশিশক্তি, ভয়, সাম্প্রদায়িক প্রচার ও প্রশাসনিক কারসাজি মুক্ত করতে প্রতি মুহূর্তে কণ্ঠস্বর করতে হবে।
নির্বাচনের
জন্য পর্যবেক্ষকের কথা সামনে আসে। এসব পর্যবেক্ষকরা তো নির্বাচনের দিনে
কিছু পর্যবেক্ষণ করেন। এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার বিষয় বিভিন্ন সময়ে আমরা
বিভিন্ন ঘটনাবলি দেখেছি।
সেসব বিষয় অন্য সময় আলোচনা করা যাবে।
কথাটা
তুললাম এই কারণে যে, আসন্ন নির্বাচনে স্থানীয় তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে
আগ্রহীরা এখন থেকেই বিশেষ পর্যবেক্ষণের কাজ করতে পারেন। সরকার নির্বাচনি
আচরণবিধি বিষয়ে ব্যাপক প্রচার প্রপাগান্ডা করতে পারে।
এসব বিষয়কে ধরে
কোথায় কীভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে সেগুলো সংশ্লিষ্টরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে
এবং নির্মোহ অবস্থানে থেকে প্রচার মাধ্যমে তুলে আনতে পারেন।
অর্থাৎ সর্বত্রই জনগণের শক্তিকে সামনে এনে আগামী দিনে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে আমরা এগুতে চাই।
যথাসময়ে
নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই সময়ের
দাবি। এই কাজে ব্যর্থ হলে দীর্ঘমেয়াদি অগণতান্ত্রিক শাসনের ফাঁদে পড়ে যেতে
পারে দেশ। যা দেশকে আরও পেছনের দিকে নিয়ে যাবে।
সময় বলে দেবে এসব কাজে
কে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে। সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে কতটুকু
এগোতে পারলাম বা পারলাম না। এসব বিষয় দায়-দায়িত্বই কে কতটুকু পালন করছেন।
এসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই মানুষ সচেতন হবে।
লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি
