পদ্মা
নদীর চারটি চরে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ চালিয়ে ৬৭ জনকে গ্রেফতার করেছে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অভিযানে রাজশাহী জেলার পদ্মার চর থেকে ১৪
জন, নাটোরের পদ্মার চর থেকে ২০ জন, পাবনার পদ্মার চর থেকে ২৪ জন ও
কুষ্টিয়ার পদ্মার চর থেকে নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা পদ্মার চরাঞ্চলে
দাপিয়ে বেড়ানো ‘কাকন বাহিনীর’ সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন
অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানাতে
রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির
কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের
কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি
মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন
সদস্যদের যৌথ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন ফার্স্ট
লাইট। এতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমের এক হাজার ২০০
সদস্য অংশ নিয়েছেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত
কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে অভিযান চালিয়ে তাদের
গ্রেফতার করা হয়। এ সময় অস্ত্র, গুলি, হাঁসুয়া, ছোরা, চাকু, রামদা, চাইনিজ
কুড়াল ও মাদক উদ্ধার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজশাহীর
পদ্মার চর থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে চার জন ওয়ারেন্টভুক্ত
আসামি, ছয় জন মাদক মামলার, দুজন সর্বহারা ও দুজন অন্যান্য মামলার আসামি।
তাদের কাছ থেকে তিনটি ওয়ান শুটারগান, একটি গুলি ও একটি খোসা, ২০ বোতল
ফেসনিডিল, ৫০ পিস ইয়াবা, ৮০০ গ্রাম গাঁজা, পাঁচটি মোটরসাইকেল, একটি হাসুয়া ও
একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়। নাটোরে পদ্মার চর থেকে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর মধ্যে চার জন হ্যাকার, ছয় জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, একজন সাজাপাপ্ত
আসামি, একজন হত্যা মামলার আসামি, দুজন মাদক ও ছয় জন সন্দেহভাজন আসামি।
তাদের কাছ থকে দুটি শুটারগান, একটি রিভলবার, ২২টি হাসুয়া, চারটি চাকু,
চারটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়। পাবনায় পদ্মার চরে
অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে একজন সর্বহারা, দুজন
মামলার আসামি, সাত জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, দুজন অন্যান্য মামলার আসামি,
চার জন মাদকের ও আট জন নিয়মতি মামলার আসামি। তাদের কাছ থেকে দুটি শুটারগান,
তিনটি গুলি, একটি খোসা, দুটি পাইপগান, দুটি চাইনিজ কুড়াল, দুটি রামদা,
একটি হাঁসুয়া ও একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় পদ্মার চর
থেকে নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আট জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও একজন
নিয়মিত মামলার আসামি। এ সময় বাঘা থানার জোড়া খুন ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত
একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, একটি স্পিডবোট, অস্ত্র রাখার একটি সিলিন্ডার, দুটি
তাঁবু ও পাঁচটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গত ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার
দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দৌলতপুরের
মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে
কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে তিন জন নিহত হন। এ ঘটনায় বাহিনীপ্রধান
রোকনুজ্জামান কাকনসহ বাহিনীর সদস্যদের নামে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় একটি
মামলা হয়। এটিসহ তাদের বিরুদ্ধে, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ায় মোট
ছয়টি মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পদ্মার চরের বাসিন্দাদের ওপর দীর্ঘদিন
ধরে কাকনসহ ১১টি বাহিনী অত্যাচার, নির্যাতন করে আসছিল। বাহিনীপ্রধান
রোকনুজ্জামান কাকন ইঞ্জিনিয়ার কাকন হিসেবে পরিচিত। তার বাহিনীর নির্মমতায়
চরাঞ্চলবাসী উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় আছে। পদ্মার চরের অন্যান্য সন্ত্রাসী
গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম মন্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ
বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী,
বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনী। এসব বাহিনীকে ধরতে পুলিশের
অভিযান অব্যাহত থাকবে।
