চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: আরওয়া আক্তার। বয়স তিন বছর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির পাশের
পুকুরে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাবা ওসমান গণি বাদল থাকেন সাউথ আফ্রিকা।
একমাত্র কন্যা সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে আসার জন্য তাৎক্ষণিক
বিমানের টিকেট কাটেন। শুক্রবার(৩১ অক্টোবর) সকালে ঢাকা শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। কন্যা সন্তানকে দাফন করতে হেলিকপ্টারে
করে সকাল পৌঁনে দশটায় বাড়িতে এসে পৌঁছায়। হৃদয় বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে
জানা গেছে, লক্ষীপুর গ্রামের ওসমান গণি বাদল-সুলতানা আক্তার দম্পত্তির
বিয়ে হয় প্রায় পাঁচ বছর আগে। বিয়ের দুই বছর পরে তাদের কোলজুড়ে আসে একটি
কন্যা সন্তান। আদর করে নাম রাখা হয় আরওয়া আক্তার। ধীরে ধীরে বড় হয় আরওয়া।
পুর্ণ হয় তিন বছরে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দাদা শফিকুর রহমান পিছু নেয় আরওয়া।
দাদা খেয়াল করে দেখতে পারেন, আরওয়া তার পিছনে রয়েছে। বৃদ্ধ দাদা শফিকুর
রহমান নাতনীকে বাড়িমুখী করে দিয়ে দাদা চলে যান তাঁর গন্তব্যে। পরবর্তীতে
দাদা বাড়ি ফিরে দেখেন, আরওয়া পাওয়া যাচ্ছে না। শুরু হয়, খোঁজাখুজি। বাড়ির
সকল স্বজনরা মিলে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে আরওয়ার লাশ
ভেসে উঠে। খবরটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সাউথ আফ্রিকায় বসে আরওয়ার বাবা
ওসমান গণি বাদল শুনতে পায়। মুহুর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়, একমাত্র
সন্তানকে দাফন করতে তিনি বাড়িতে আসবেন। লাশ রাখা হয় ফ্রিজাপ ভ্যানে। ওসমান
গণি বাদল শুক্রবার সকালে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ
করেন। সড়ক পথে বাড়িতে আসতে অনেক সময় লাগতে পারে। সেজন্য তিনি সিদ্ধান্ত
নেন, বেসরকারি হেলিকপ্টারে সকাল পৌনে দশটায় গুণবতী ডিগ্রি কলেজ মাঠে নামেন।
বাড়িতে গিয়ে একমাত্র সন্তানের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রবাসী
বাদল। সকাল ১১টায় জানাযা শেষে আরওয়ার লাশ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
দাদা
শফিকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু দূরে
হাঁটতে যাই। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি, নাতনী আরওয়া আমার পিছু নিয়েছে। আমি
তাকে বাড়িমুখী করে দিয়ে আমার গন্তব্যে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে এসে
জানতে পারি, আরওয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বাড়ির সকলে মিলে সম্ভাব্য সকল
স্থানে আরওয়াকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি, বিকেল বেলার
দিকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত পুুকুরে আরওয়ার লাশ ভেসে উঠে।
শুক্রবার
আরওয়ার বাবা সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী ওসমান গণি বাদল বলেন, আমি আট মাস আগে
ছুটি শেষে সাউথ আফ্রিকা চলে যাই। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে খবর পাই,
আমার মেয়ে আরওয়া পানিতে পড়ে মারা গেছে। তার সবেমাত্র বয়স তিন বছর। দুই মাস
আগেও বাড়ি যাওয়ার আগে আরওয়াকে নিয়ে খেলাধুলা করতাম। মেয়েটি ভাঙা ভাঙা শব্দে
আমার সাথে কথা বলতো। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর খবর কোন অবস্থাতে মেনে নিতে
পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নেই, আমার সন্তানকে দাফন করতে আমি বাড়িতে
যাবো। মুহূর্তের মধ্যে টিকেট কেটে বিমানে উঠে পড়ি। শুক্রবার সকালে ঢাকা
বিমানবন্দরে এসে পৌছায়। সড়ক পড়ে অনেক সময় লাগবে, তাই তাড়াতাড়ি আসতে
হেলিকপ্টার ভাড়া করে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছায়। সন্তান হারানোর বেদনা যে কত
কষ্টের, তা বলে বুঝানো যাবে না।
