
এক
সময় স্লোগান উঠত– ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান।’ তার
কারণও নিশ্চয়ই অমূলক নয়, তাকেই যে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পোস্টারবয়
হিসেবে জানে সারা বিশ্ব। কিন্তু এক বছরেই পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে।
দেশের ক্রিকেটে তার অধ্যায় কার্যত শেষ বলে মনে করা হচ্ছে।
কোটা সংস্কার
আন্দোলনে নিরব ভূমিকার জন্য সমর্থকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন
সাকিব। এরপর গত বছরের ৫ আগস্টে বাংলাদেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকেই
কার্যত দেশে ফেরাও বন্ধ হয়ে যায় তার। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য
ছিলেন সাকিব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে দেশে বেশ কয়েকটি মামলাও
হয়েছে, যার মধ্যে হত্যা মামলাও আছে। যে কারণে ফিরতে পারছেন না দেশেও।
আপাতত তার জাতীয় দলে ফেরারও সম্ভাবনা নেই।
জনপ্রিয়তার চূড়া থেকে
ছন্দপতনও দেখে ফেলেছেন সাকিব। যদিও এসব নিয়ে আক্ষেপ নেই টাইগার এই
অলরাউন্ডারের। জুলাই আন্দোলন চলাকালে কানাডায় এক ভক্তের সাথে মাঠে
বাকবিতণ্ডা হয় সাকিবের। এ ছাড়া প্রায় একই সময়ে সাকিব তার পরিবারের সাথে
কানাডায় সময় কাটাচ্ছেন এমন ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সব মিলিয়ে
সমর্থকরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সাকিব অবশ্য পরে দাবি করেছিলেন, ঐ সময়
তিনি দেশের পরিস্থিতি জানতেনই না।
ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও একই
কথা বললেন। সাকিব বলেন, ‘এটা এমন এক মুহূর্ত যা আমার বিপক্ষে চলে গেছে।
কারণ তারা (সমর্থকরা) ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করছিল। আমি আবার ওরকম
পরিস্থিতিতে ছিলাম না, অথবা আমি পরিস্থিতি জানতাম না সত্যি বলতে। তাই আমার
জন্য কাজটা কঠিন ছিল, আমি বাড়ি থেকে অনেক দূরে ছিলাম। আমি মনে করি ঐ
জিনিসটাই আমার বিপক্ষে গেছে। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা দেখে আমি একে
পূর্ণ শ্রদ্ধাও জানাচ্ছি। তবে এজন্য কোনো অনুশোচনা নেই। আমার মনে হয় ধীরে
ধীরে মানুষ এখন এটা বুঝতে শুরু করেছে।’
এক সময় খেলা চলাকালেও বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি কিংবা শো-রুম উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে
ট্রোলের সম্মুখীন হতে হয় সাবেক এই টাইগার অধিনায়ককে। একসময় তার নামই পড়ে
যায় শোরুম আল হাসান। তবে সাকিব মনে করেন, এগুলো সবই বানোয়াট, মিডিয়ার
সৃষ্টি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় কিছু সাংবাদিক ও অনলাইন
পোর্টালের বানোয়াট গল্প এগুলো যার কারণে মানুষ এমন ভাবে। কারণ বাংলাদেশে
আগে এসব কেউ করেনি যা আমি করেছি। এসব তাদের জন্য নতুন ছিল। হজম করা কঠিন
ছিল। এখন অন্য কেউ এসব করলে তাদের ওপর এত প্রভাব পড়ে না, যতটা আমার ওপর
পড়েছিল। কারণ আমিই ছিলাম প্রথম- ভালো, খারাপও।
তার কাছের মানুষরা অবশ্য
তাকে নিয়ে এভাবে ভাবেন না। জানালেন, ‘মানুষের নিজস্ব ভাবনা থাকতেই পারে। তা
নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কে কী ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না কারণ
আমার কাছে মুখ্য বিষয় হলো আমার কাছের মানুষেরা আমাকে নিয়ে কী ভাবছে। তারা
কেউ এমন ভাবে বলে মনে হয় না।’
সাকিবের পরিবার আগেই আমেরিকায় থিতু
হয়েছিল। দেশে ফেরার পথ বন্ধ হওয়ার পর সাকিবও পরিবারের সাথে মার্কিন
মুল্লুকে আছেন। জাতীয় দলে না থাকলেও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছেন।
সম্প্রতি খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর লিগে। অনেকটা অখ্যাত এই লিগে সাকিবই
ছিলেন বড় তারকা। যদিও এসব টুর্নামেন্টও এখন উপভোগ করছেন সাকিব।
তিনি
বলছিলেন, ‘সত্যি বলতে আমি খুব উপভোগ করেছি। অনেক লোকাল প্লেয়ারের সাথে
পরিচয় হয়েছে। অনেকের সাথে দেখা হয়েছে যাদের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে
দেখেছিলাম, অনূর্ধ্ব-১৯ এর দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছি। ছোটবেলার মতো এমন একটা
ক্রিকেটীয় পরিবেশ পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে আগের সময় কাটাচ্ছি
আবার।’
