আগামী
১৮ নভেম্বর ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ হোম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
ভারতের বিপক্ষে জাতীয় স্টেডিয়ামে যেদিন হামজা-জামালরা লড়বেন, সেদিনই ঢাকায়
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হবে আফগানিস্তান-মিয়ানমারের মধ্যকার
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আরেকটি ম্যাচ।
যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য আফগানিস্তান
নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হোম ম্যাচের আয়োজন করে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এরকম
নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে আয়োজক হচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য এটি নতুন
অধ্যায় হলেও ফেডারেশনের সিংহভাগ কর্মকর্তা এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানেন
না।
দেশে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট/ম্যাচ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক
দায়িত্ব কম্পিটিশন কমিটির। সেই কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম গাউস এই ম্যাচ নিয়ে
বলেন, ‘আমি এখনও জানি না, ফেডারেশনে গিয়ে বিষয়টি ভালোভাবে জানব।’
কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যানের জ্ঞাত হওয়ার আগেই আজ (মঙ্গলবার) সকালে
বাফুফে আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ম্যাচ আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গোলাম
গাউসের মতো ফেডারেশনের একাধিক সহ-সভাপতি, নির্বাহী সদস্য ঢাকায়
আফগানিস্তানের হোম ম্যাচ আয়োজনের ব্যাপারে অবগত নন। বাফুফে প্রথমবারের মতো
নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে এরকম একটি গুরুত্বপ‚র্ণ
সিদ্ধান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সভার মাধ্যমে হয়নি। বাফুফের জরুরি নির্বাহী সভা
না হলেও এই ম্যাচের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কম্পিটিশন এবং জাতীয় দল কমিটির
সভাও হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত
ম্যাচের দিন আবার আরেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন অবশ্যই চ্যালেঞ্জের।
এরপরও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ম্যাচটি হলে বাফুফে ও দেশেরই সুনাম বৃদ্ধি
হবে। এই ম্যাচ আয়োজন প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ জানার আগে
আমাদের মধ্যে অন্তত আলোচনা না হলেও অবগত করা প্রয়োজন ছিল।’
১৮
নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ আয়োজনই বাফুফের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। যার প্রভাব
পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। ভারত বাংলাদেশের ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করেছে। ঢাকায়
হওয়ায় নাম প্রত্যাহার করেছে সাফ অ-২০ নারী টুর্নামেন্ট থেকে। এশিয়ান কাপ
বাছাই গুরুত্বপ‚র্ণ ম্যাচ হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ১৮ নভেম্বর ঢাকায় খেলতে
আসতে হবে ভারতকে। ফলে ভারতের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে
সিঙ্গাপুর-হংকংয়ের চেয়ে বাড়তি নজর রাখতে হবে ফেডারেশনকে।
সম্প্রতি
আফগানিস্তান-পাকিস্তান হামলা, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যু বেশ
আলোচিত। এত কিছুর মধ্যে ঢাকায় ভারত ম্যাচের দিনই আফগানিস্তান-মিয়ানমার
ম্যাচ আয়োজন বাফুফের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই। হোম ম্যাচ হিসেবে অনেক ব্যয় ও
আনুষ্ঠানিকতা আফগানিস্তান বহন করলেও আফগানিস্তান-মিয়ানমার বাড়তি দুই দেশকে
নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বও বর্তাবে বাফুফে ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর।
আফগানিস্তান-মিয়ানমার ম্যাচ আয়োজনের বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বাফুফে সরকারের
সঙ্গে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিঠি চালাচালি-বৈঠক শুরু
করবে।
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার
সৌদি আরবের রিয়াদে এএফসি কনফারেন্সে ছিলেন। সেখানে আফগানিস্তান ফুটবল
ফেডারেশন মিয়ানমার ম্যাচ আয়োজনের জন্য বাফুফেকে প্রস্তাব দেয়। জাতীয়
স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ থাকায় কিংসের সভাপতি ও ফেডারেশনের সিনিয়র
সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানকে ম্যাচ আয়োজনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। বসুন্ধরা
কিংসের সম্মতি এবং আফগানিস্তান-এএফসি’র চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের পরই ঘোষণা দিয়েছে
ফেডারেশন। ফলে ২১ জনের নির্বাহী কমিটির অনেকেই অজ্ঞাত!
বাংলাদেশে হোম
ম্যাচ খেলতে আফগানিস্তান সপ্তাহখানেক আগেই দেশে আসবে। ফলে ১৮ নভেম্বর
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবেন
হামজারা, এটি এক প্রকার নিশ্চিতই। শুধু দিন ও সময়ের ঘোষণা বাকি।
আফগানিস্তান-মিয়ানমার ম্যাচ ঢাকায় হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের
বিপক্ষে একটি হোম ম্যাচ খেলতে পারবে সেটাও একটা কারণ। জাতীয় দল কমিটির সভা
ছাড়াই অনানুষ্ঠানিকভাবেই সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে।