চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর
স্ত্রীকে হাত বেঁধে মারধর করেছেন ইউপি সদস্য ও আ’লীগ নেতা বজলুর রহমান।
মঙ্গলবার রাতে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এছাড়াও প্রবাসীর
সাথে বিচ্ছেদ করে পরকীয়া প্রেমিক যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেনের সাথে বিয়ে
দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন
জানান, অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে ওই
প্রবাসীর ঘরে তাঁর স্ত্রী ও যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেনকে আটক করে স্থানীয়
লোকজন। এরপর বিল্লালকে স্থানীয় লোকজন মারধর করে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে
সেখানে উপস্থিত হয়ে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওই প্রবাসীর স্ত্রীর হাত বেঁধে
পেটাতে শুরু করেন। পরদিন এ ঘটনায় গ্রামবাসীকে নিয়ে শালিস বৈঠক বসান ইউপি
সদস্য। শালিসে ওই নারীকে প্রথমে প্রবাসীর সঙ্গে ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয়।
পরে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আটক হওয়া যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেনের সাথে
তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিল্লালের প্রথম স্ত্রীর চার মেয়ে। আর নির্যাতনের
শিকার ওই নারীর দুই ছেলে। এর মধ্যে ছোট ছেলের বয়স তিন বছর।সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুই
হাত বেঁধে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন ইউপি সদস্য বজলুর
রহমান। লাঠির আঘাতে ওই নারী চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। একপর্যায়ের
ওই গৃহবধূর চুল ধরে টানাহেঁচড়াও করা হয়। এ ছাড়া তাঁকে বিভিন্নভাবে গালমন্দ
করা হয়। এ সময় অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক হওয়া ওই ব্যক্তি পাশেই বসে
ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতেই ইউপি সদস্য বজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই
নারী সম্পর্কে আমার ভাতিজার স্ত্রী। প্রায় আট বছর ধরে তাঁদের মধ্যে অবৈধ
সম্পর্ক চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে গ্রামের লোকজন তাঁদের
হাতেনাতে আটক করেন। রাত দেড়টার দিকে আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে চরম উত্তেজনা
দেখতে পাই। এরই মধ্যে গ্রামের লোকজন আটক হওয়া বিল্লালকে গণধোলাই দেন। আমি
ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর কেউ কেউ বলতে থাকেন, নারী-পুরুষ দুজনই অপরাধ করেছে,
তাহলে একজনকে কেন মারা হয়েছে। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে আমি ভাতিজার
স্ত্রীকে একটি চিকন লাঠি দিয়ে চার থেকে পাঁচটি আঘাত করেছি। তখন আমার
প্রতিপক্ষের কেউ একজন এই ঘটনার ভিডিও করে। আজ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেটি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পরদিন শুক্রবার সকালে
গ্রামের প্রায় ৩০০ মানুষ শালিসে বসে। পরে সকলের উপস্থিতিতে ওই নারীর
স্বামীর সিদ্ধান্তে তাঁদের বিচ্ছেদ করানো হয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে
যার সঙ্গে ওই নারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া
হয়েছে’।
এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ওই নারী ও যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি
কয়েক দিন আগের। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী নারী বা
তাঁর পক্ষে কেউ এ ঘটনায় অভিযোগ করতে করেনি। এরপরও পুলিশ ঘটনায় জড়িত মেম্বার
বজলুর রহমানকে আটকের চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।