দৈনিক
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমাদের লড়াই এখনো শেষ
হয়নি। জুলাই আন্দোলনে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ তাড়াতে এদেশের তরুণ
-তরুণীরা লড়াই করেছিল। তারা মৃত্যুকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে বলেই ফ্যাসিবাদ ও
ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ পালাতে বাধ্য হয়েছিল। তরুণরা শুধু ফ্যাসিবাদের
বিরুদ্ধেই নয়, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিল। নিরস্ত্র এ
তরুণ-তরুণীরা এই যুদ্ধে নিজের শক্তি এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে জয়ী
হয়েছিল।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি
উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে আমার দেশ পাঠকমেলা আয়োজিত ৩৬ জুলাই যোদ্ধাদের
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্য
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, আগে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লেখতাম, এখন যাদের
সম্পর্কে লিখব, তারা সবাই জুলাই যোদ্ধা। বিএনপি জুলাই যোদ্ধা, জামায়াত
ইসলামীও জুলাই যোদ্ধা, এনসিপি তো জুলাইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছে। যারা ভুল করবে
তাদের বিরুদ্ধে লিখতে হবে, এনসিপি আমার সন্তানতুল্য, বিএনপি-জামায়াত আমার
বন্ধু। তারপরেও তাদের বিরুদ্ধে লিখতে হবে। কারণ সংবাদপত্রটাই এমন। এখন সবাই
সরকারে যেতে চায়, তাহলে আপনি কার পক্ষে লেখব, কার মন জয় করব? যার বিপক্ষে
যাবেন, সেই তো শত্রু হয়ে যাবে। সমালোচনাকে মেনে নিতে হবে। আপনি যদি সৎ ও
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক হতে চান, তাহলে পত্রিকা চালানো সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে
যাবে। সংবাদপত্রের কাজ প্রতিদিন লড়াই করা। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের
কাছে একটা সংবাদ আসলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের
একটা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সেই সংবাদ আমরা ছাপাবো কিনা এটা একটা বড়
সিদ্ধান্ত ছিল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা নিউজ ছাপাবো। ওই সংবাদ
ছাপানোর পর থেকেই আমার সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত লড়াই শুরু হয় এবং আমি
জেনেশুনেই সেই লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলাম। আমি জানতাম এর প্রতিক্রিয়া কতটা
ভয়ঙ্কর হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ ভারতীয়
এজেন্ডারা বাস্তবায়নের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে নামলো। তখনকার সকল মিডিয়াও তাদের
পক্ষে অবস্থান নিল। আমরা বাংলাদেশ থেকে বিরোধী মত এবং ইসলামকে দূর করার
ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত বুঝতে পেরে আমি এর বিপক্ষে লিখলাম ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের
পদধ্বনি’। তারপর আর আমি বেশিদিন এ দেশে টিকতে পারলাম না। আমি গ্রেফতার
হলাম। ২০১৩ সালের ১১ই এপ্রিল আমার পত্রিকা বন্ধ হলো, প্রেসে তালা ঝুঁলিয়ে
দিল। এভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধ করতে হয়েছে।
আমার
দেশ পাঠকমেলা কুমিল্লা জেলার সভাপতি ডা. আরিফ মোর্শেদ খানের সভাপতিত্বে ও
কুমিল্লা জেলা আমার দেশ প্রতিনিধি এম হাসানের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী,
কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো: হায়দার আলী, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক কলামিস্ট এম আব্দুল্লাহ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
মহাসচিব ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এবি পার্টির কুমিল্লা জেলা সভাপতি মিয়া
মোহাম্মদ তৌফিক, কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সফিকুর
রহমান হেলাল, কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল
হক দুলাল, এনসিপির কুমিল্লা মহানগর যুগ্ম সমন্বয়ক রাশেদুল হাসান। শেষে
কুমিল্লার ৩৯ জন শহীদ পরিবার ও ২০ জন আহতদের মধ্যে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে
দেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।