সোমবার ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
কুমিল্লার অর্ধশত হাটে দখল, চার মহাসড়ক জুড়ে বিপর্যয়-দুর্ভোগ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গলাকাটা নিমসার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৫৭ এএম আপডেট: ১৬.১০.২০২৫ ২:০৯ এএম |


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গলাকাটা নিমসারনিজস্ব প্রতিবেদক।। বিকেলের শেষ আলো ফুরোতেই জমে উঠতে শুরু করে নিমসার বাজার। ট্রাকভর্তি পণ্য এসে থামে মহাসড়কের উপরেই, শুরু হয় বস্তা নামানোর পালা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচা শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে এসব ট্রাক। মালামাল উঠানো নামানো এবং বেচাবিক্রিতে একপাশে শোনা যায় ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক। অন্যপাশে ফলের গন্ধে ভরে থাকে বাতাস। মহাসড়কের দুই পাশে এমন জমজমাট বেচাকেনা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। রাত গড়ালেও থামে না কেনাবেচা; চলে পরদিন সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত। এ সময় মহাসড়কে যানবাহনের গতি থেমে আসে প্রায় শ‚ন্যে। দ্রæতগতির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকাম‚খী লেন অনেকটাই দখল। ঠিক একই অবস্থা চট্টগ্রাম লেনেও। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দোকানঘর, আড়ত ও খাবারের হোটেল ছাড়াও পন্যবাহী শত শত ভারী যানবাহন যত্রতত্র পার্কিংয়ে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী নিমসার বাজারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তদারকির অভাব এবং অব্যবস্থাপনায় দখলদাররা চেপে বসেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ না থাকার ফলে বর্তমানে যাত্রীদের অনেকটা গলাকাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিমসার। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবি গেল বছরের পাঁচ আগস্টের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন তারা। পরবর্তীতে ফের দখল হয় উচ্ছেদকৃত পুরো অংশ। চলতি বছরের ৩০ জুলাই আবারও দখল হওয়া অবৈধ স্থাপনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়েন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। কিন্তু এরপর প্রায় দুইমাস অতিক্রম হলেও সেই বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযানে যেতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে করে ধীরে ধীরে অবৈধ স্থাপনা বাড়ার সঙ্গে মহাসড়কে বেড়েছে ভোগান্তি। 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিমসারে মহাসড়কের দুই পাশের প্রায় ৪০০ মিটার জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকানঘর। কোথাও ফলের আড়ত, কোথাও কাঁচামালের দোকান, আবার কোথাও খাবারের হোটেল। দিনে কিংবা রাতে সবসময়ই মহাসড়কজুড়ে পণ্য ওঠানামা চলছে। এতে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। 
স্থানীয় ক্রেতারা জানান, নিমসার বাজার এখন দেশের দক্ষিণ প‚র্বাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজির পাইকারি বাজার। তবে মহাসড়ক দখল করে ব্যবসা করায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট আর ভোগান্তি। 
স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা জানি সড়ক দখল ঠিক না। কিন্তু বাজারের জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে বসি। সরকার যদি একটু পরিকল্পনা করে জায়গা নির্ধারণ করে দিত, আমরা নিজেরাও সরতে রাজি।
অন্যদিকে ক্রেতা কামাল উদ্দিনের দাবি, মহাসড়ক দখল করে বাজার বসায় ঈদ কিংবা ছুটির সময় দুর্ভোগ চরমে ওঠে। তখন কয়েক কিলোমিটার জ্যাম লেগে থাকে নিমসারে। 
মিজানুর রহমান ও খায়রুল ইসলাম নামের দুই পথচারী বলেন, নিমসারসহ কুমিল্লার বেশিরভাগ বাজারই এখন সড়ক ও ফুটপাত দখল করে চলছে। যানজট, দুর্ঘটনা, অসুবিধা সব কিছুর ম‚ল কারণ এসব অবৈধ হাট প্রশাসনের উচিত দ্রæত দখলমুক্ত করা ও পরিকল্পিতভাবে বাজার স্থানান্তর।
এদিকে, শুধু নিমসার নয়, কুমিল্লার চারটি মহাসড়কজুড়েই এমন দখলের চিত্র দৃশ্যমান। ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে এখন শতাধিক হাট-বাজার গড়ে উঠেছে সড়ক ঘেঁষে। এর মধ্যে দাউদকান্দি, গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম, বিজয়পুর, কংশনগর, ক্যান্টনমেন্ট, সাহেবের বাজার, জাফরগঞ্জ, দেবিদ্বার, কোম্পানীগঞ্জ, মুদাফফরগঞ্জ, বাগমারা, লাকসাম ও বিজরা বাজার উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি বাজারেই দেখা যায়, দোকান ও অস্থায়ী হাট সড়কের প্রায় অর্ধেক জুড়ে বসানো, যার ফলে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
হানিফ পরিবহনের চালক জাকির হোসেন জানান, বাজার এলাকাগুলোতে ঢুকলেই গতি শ‚ন্য। এক কিলোমিটার যেতে ১০-২০ মিনিট লেগে যায়। এতে সময় যেমন নষ্ট হয়, জ্বালানির খরচও বেড়ে যায়।”
আরেক চালক উপক‚ল পরিবহনের মফিজুর রহমান বলেন, যখনই বাগমারা বাজারে প্রবেশ করি, তখন মনে হয় আমরা মহাসড়কে না, হাটে ঢুকে পড়েছি। কুমিল্লা, নোয়াখালীর যাত্রীরা সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হোন এ বাজারে। চারলেন হলেও সড়কটি বেশকিছু জায়গায় নিত্য যানজটে পড়তে হয়। 
অন্যদিকে, সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শুধু মহাসড়ক নয়; কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভেতরেও একই চিত্র। টমছম ব্রিজ, পদুয়ার বাজার, বাদশা মিয়ার বাজার থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দখল করে বসছে বাজার ও দোকানপাট। ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কারণে পথচারীরা বাধ্য হচ্ছেন ম‚ল সড়ক দিয়ে হাঁটতে, এতে দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ সমানভাবে বাড়ছে।
কুমিল্লার মানবাধিকার কর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, নিমসার বাজার দখল মুক্ত করে মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরাবরের মতোই ব্যর্থ। সড়ক বিভাগ তার সম্পত্তি সংরক্ষণের মাধ্যমে জনগণের উপকারে আসে সে ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালায়, কিন্তু কয়েকদিন পরেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এই সমস্যা সমাধানে নিয়মিত তদারকি দরকার। 
এ বিষয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিমসার বাজারসহ জেলার চার মহাসড়কের বেশিরভাগ বাজারে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শেষে পুনরায় দখলদাররা দখলে যাচ্ছেন। এতে সুফল পাচ্ছেন না মানুষ। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে শীতের শুরু থেকেই এ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করবো। মাঝখানে বর্ষা এবং বৃষ্টির কারণে কার্যক্রম স্তিমিত ছিল। 
মানুষের অসচেতনতা রয়েছে; তবে রাজনৈতিক কোন প্রভাব কিংবা বাধা অভিযান ঠেকাতে পারবে না। সড়কে জনগণের ভোগান্তি কিংবা দুর্ভোগ সৃষ্টি করা স্থাপনাকে কোন ছাড় নয়।














http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় কুমিল্লা রাস্তায় নামে জনতার ঢল
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে কমিশন প্রস্তুত
৮-১৫ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোন দিনতফসিল
তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পোস্টারনা সরালে ব্যবস্থা
তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কুবির সমঝোতা স্মারক চুক্তি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জীবনের বাকি সময়টা নেতাকর্মীদের সঙ্গেই থাকতে চাই-হাজী ইয়াছিন
হৃদয়বান মানুষ হতে বই পড়ার বিকল্প নেই : ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া
অর্থের চাইতে মানুষের আস্থা আমার কাছে অনেক বড় : হাসনাত আব্দুল্লাহ
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ কুমিল্লায় বেগম খালেদা জিয়াররোগ মুক্তিতে কোরআন খতম ও দোয়া
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মুরাদনগরে কায়কোবাদের ৫০০ বার কুরআন খতম
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২