চালের দাম বাড়ার পর আর কমছে না।
কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে আর নামছে না। অন্য সবজির দাম সপ্তাহের
ব্যবধানে এক লাফে অনেক বেড়ে গেছে। বেগুনের কেজি ১৬০ টাকা ছুঁয়েছে। ব্রয়লার ও
সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। ইলিশ মাছের দাম কেজি ৩ হাজার
টাকা থেকে আর কমছে না।
পাঙাশ, তেলাপিয়া, এমনকি সিলভার কার্প মাছের
কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি কোনোক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের কোনো অভিযান নেই। এই সুযোগে
বিনা ছুতায় বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করেই দাম বাড়াচ্ছেন। তবে বিক্রেতারা
বলছেন, বৃষ্টি-বাদলে সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম বাড়ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত
সপ্তাহে সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। বৃহস্পতিবার তা বিভিন্ন
বাজারে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায় ঠেকেছে। ১৭০ টাকার ব্রয়লার মুরগিও ১৯০ টাকায়
বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা তিন দিনের ব্যবধানে
১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে আমাদের কাছে বিক্রি করছেন। তাহলে কীভাবে কম দামে
বিক্রি করব।
হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের
স্বত্বাধিকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ব্রয়লার
হাউসের স্বত্বাধিকারী শিবলী মাহমুদসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘সোনালির
সঙ্গে ব্রয়লারের দামও মধ্যস্বত্বভোগীরা বাড়িয়েছেন। এ জন্য বেশি দরেই
আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।’
হাতিরপুল বাজারে কথা হয় ক্রেতা মো. আনিসের সঙ্গে।
তিনি
বলেন, ‘এভাবে একটার পর একটা জিনিসের দাম বাড়ছে। কোনো কারণ ছাড়াই
বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। অথচ বাজারে সরকারের কোনো অভিযান
নেই।’
অন্য বাজারেও ভোক্তাদের খেদোক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। আগের মতোই
দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১
হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি ও ডিম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ডজনে বিক্রি
হয়।
বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও বাজারে নদীর মাছের সরবরাহ কম হওয়ায় বেশি
দামেই বিক্রি হচ্ছে। কাজলি, ট্যাংরা, চিংড়ির দাম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাইলা
মাছও ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। তবে আকারভেদে চাষের রুই, কাতলা
মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০,
এবং কাঁচকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরিবের প্রিয়
তেলাপিয়া, পাঙাশ ও সিলভার কার্প মাছও ২২০ টাকা থেকে বেড়ে সপ্তাহের ব্যবধানে
৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মৌসুম শুরু হলেও বাজারে ইলিশ অতি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বৃহস্পতিবারও কেজি ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ছোট বা ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দামও দেড় থেকে ২ হাজার টাকা।
টাউন
হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রমজান আলীসহ অন্যরা বলেন, ‘মৌসুম শুরু
হয়েছে। তবে নদীতে আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। এ জন্য দাম বেশি।’
অধিকাংশ
সবজির দাম কেজিতে এক লাফে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আগের সপ্তাহে বেগুন ১০০
থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ১৬০ টাকায় ঠেকেছে। টমেটো ১৪০ থেকে
১৫০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে মিলছে না। পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুল, ৬০
থেকে ৮০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। ৮০ থেকে ১২০ টাকার কাঁচা
মরিচ ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখি ও কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়,
শজনে ডাঁটা ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০
থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকা। হাতিরপুল
বাজারের কাজল মিয়াসহ অন্য সবজি বিক্রেতারা বলেন, ‘বৃষ্টি-বাদলে অধিকাংশ
এলাকা ডুবে গেছে। সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য সবজির দাম বাড়তি।’
তবে
বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, আগের মতোই আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০
থেকে ৬০ টাকা কেজি, দেশি আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, আমদানি করা আদা ১৮০ থেকে
২২০, দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০, আমদানি করা রসুন ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে
বিক্রি হচ্ছে।
বোরো ধান উঠার পর সরকার চাল কেনার ঘোষণা দিলেও কমেনি
চালের দাম। গতকালও বাড়তি দরে বিভিন্ন বাজারে চাল বিক্রি করতে দেখা যায়।
মনজুর, রশিদ, সাগরসহ অন্যান্য কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম বেড়ে কেজি ৭৫
থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডায়মন্ড, হরিণ, মোজাম্মেল কোম্পানির চাল আরও
বেশি দামে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের দামও বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা ও
মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।