বাংলাদেশ
নারী ফুটবল দল এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়ার পর
ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা, এই মেয়েরা পুরস্কার হিসেবে কী পাবেন। অতীতে অনেক
ছোটখাটো অর্জনেও ক্রীড়াবিদদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সে তুলনায়
আফঈদা-ঋতুপর্ণাদের এই অর্জন বিশাল।
এক ঝাঁক মেয়ে বাংলাদেশের নারী
ফুটবলকে দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি থেকে নিয়ে গেছে এশিয়ার সর্বোচ্চ আসরে। মাত্র
১৫ বছর আগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা বাংলাদেশ নারী দল এখন বিশ্বকাপ ও
অলিম্পিক খেলার স্বপ্ন দেখে। সেই সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়েও তারা।
মেয়েদের
সম্মানিত করতে সবার আগে এগিয়ে এসেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। মিয়ানমার
বিজয়ী দলকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এর আগে গত অক্টোবরে যখন বাংলাদেশ নারী ফুটবল
দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তখন এক কোটি টাকা পুরস্কার দিয়েছিল ক্রীড়া
মন্ত্রণালয়। ঘোষণার অল্প কিছুদিন পরই পুরস্কারের সেই কোটি টাকা বাফুফের
মাধ্যমে মেয়েদের বুঝিয়ে দিয়েছিল দেশের খেলাধুলার অভিভাবক প্রতিষ্ঠানটি।
ওই
সময় বাফুফে মেয়েদের দেড় কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু
প্রায় ১০ মাস হয়ে গেলেও বাফুফে তাদের ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ বুঝিয়ে দেয়নি
সাবিনা-আফঈদাদের। অথচ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড,
বিওএসহ অন্য যারা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল; তারা অনেক আগেই অর্থ দিয়ে দিয়েছে।
যাদের সবার আগে পুরস্কার বুঝিয়ে দেওয়ার কথা, সেই বাফুফেই ঘোষণা দিয়ে
ঘুমিয়ে আছে।
বাফুফে নারী ফুটবলারদের সাথে চুক্তি করলেও নিয়মিত বেতন
দিচ্ছে না। এসব প্রসঙ্গ ওঠালেই বাফুফে থেকে অজুহাত হিসেবে টাকা নেই,
মেয়েদের ব্যাংক একাউন্ট নেই-এসব কথা বলে। কেবল বেতনই অনিয়মিত নয়,
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে মেয়েরা যে ফি পেয়ে থাকেন সেখানেও বাকি ফেলেছে
বাফুফে।
মিয়ানমার সফরের তিন ম্যাচ না হয় কেবল শেষ হলো। তার আগেরও ৫টি
ম্যাচ ফি পরিশোধ করেনি বাফুফে। মোট ৮ ম্যাচের ফি বাফুফের কাছে পাওনা
ঋতুপর্ণাদের।
সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নারী দলকে এ বছর একুশে পদক দিয়েছে
সরকার। পদকের পাশাপাশি সবার সম্মানে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বাফুফে আজ
পর্যন্ত একুশে পদকের সাথে পাওয়া অর্থও বুঝে দেয়নি মেয়েদের।
এশিয়ান কাপে
কোয়ালিফাই করে দেশে নারী ফুটবল দল দেশে আসার পর রাত সোয়া ৩টায় হাতিরঝিলে
সংবর্ধনা দিয়ে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে বাফুফে। চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ,
খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের হাতে ফুল ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করেছেন বাফুফে
কর্মকর্তারা। এত বড় অর্জনের পর বাফুফে কী ঘোষণা দেয়, সেই অপেক্ষায় ছিলেন
সবাই। কোনো ঘোষণা আসেনি।
আগের ঘোষণার টাকাই যখন দিতে পারে না, তখন নতুন
করে ঘোষণা দিয়ে দেনা বাড়াতে চায়নি বলেই হয়তো কিছু পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির
বুলি আউরিয়ে অভিনব সংবর্ধনা দিয়েছে বাফুফে। পরিশ্রান্ত ফুটবলারদের ওই ফুল
বিমানবন্দরেও দিতে পারতো বাফুফে।
বাফুফের এমন তামাশার পর মেয়েদের মধ্যেও
হতাশা তৈরি হয়েছে। দেশকে সম্মান এনে দেওয়া এই মেয়েদের ভবিষ্যত কি? এমন
প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমন ফুটবলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
ফুটবলাররা কবে পাবেন বাফুফে ঘোষিত পুরস্কার? দেশকে আর কত গৌরব এনে দিলে
ঘোষিত পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন হবে নারী ফুটবলারদের?