কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘোষণা দিয়ে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল, ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরো ২৫ জনকে। হত্যাকাণ্ডের কাণ্ডের শিকার রোকসানা আক্তার রুবির মেয়ে রিক্তা বেগম বাদি হয়ে কুমিল্লার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এরই মধ্যে এই মামলার এজহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। আর ঢাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব। এখনো গ্রেফতার আতংকে ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নিহত রুবির বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। রাত আনুমানিক ১২টায় সেটি মামলা হিসেবে নেয় পুলিশ। মামলায় আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লালকে প্রধান আসামি, ব্যবসায়ী বাছির মিয়াকে ২নং ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়াকে ৩নং আসামিসহ ৩৮ জনের নাম সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫ জনকে এই মামলার আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৩৯ ঘণ্টা পর মধ্যরাতে থানায় মামলা হয়।
হত্যাকান্ডের পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত অভিযানে নামে। শুক্রবার গভীর রাতে এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কড়ইবাড়ি এলাকার ছবির আহমেদ (৪৮) এবং নাজিম উদ্দিন বাবুল (৫৬)। তাদের বাঙ্গরা বাজার থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাঁদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে কুমিল্লার আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এদিকে, র্যাবে ঢাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করেছে। র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মাহমুদুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তিন খুনের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের পর তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কড়ইবাড়ি গ্রামে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কথা বলে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, কড়ইবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (২৮) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার জোনাকি (২২)। এই পাশবিক হামলায় রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তাকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, এই হত্যাকান্ডের পেছনে কী কারণ ছিল এবং আর কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঢালাও ভাবে গ্রেফতারের জন্য কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। যারা ঘটনার সাথে জড়িত নেই, তাদের আতংকিত হওয়ার কারন নেই।