মাসুদ পারভেজ।।
কুমিল্লার
মুরাদনগরে মোবাইল ফোন চুরির র্যাশ ধরেই সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরিকল্পিতভাবেই
একই পরিবারের মা ও তার দুই সন্তানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে
র্যাবের ভাষ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ওই ট্রিপল
মার্ডারে অভিযুক্ত ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব। শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত
রাতে ঢাকার রামপুরা বনশ্রী এবং মুরাদনগর বাঙ্গরার হায়দরাবাদ এলাকায় পৃথক
অভিযানে অভিযুক্ত ৬ ব্যক্তিদের আটক করা হয়। এছাড়া একই ঘটনায় সেনাবাহিনীর
অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে আরো দুজন।
শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রিপল
মার্ডারের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত ৬ জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাতে
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। র্যাবের অভিযানে আটক ৬
অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনার আদ্যোপান্ত অনেকটাই উঠে
আসে।
ব্রিফিংয়ে র্যাব জানান, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার কড়ইবাড়ি গ্রামের
রবিউলের বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোন চুরি হয় গত ১ জুলাই তারিখে। মোবাইল ফোন
চুরির অভিযোগ তোলা হয় পাশ^বর্তী গ্রামের হায়দরাবাদের বোরহানের বিরুদ্ধে।
বোরহান পেশায় অটোরিকশা চালক। ট্রিপল মার্ডারে অভিযুক্তরা ওই ঘটনায় অটোরিকশা
চালক বোরহানকে বেধড়ক মারধর করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। পরবর্তীতে
বোরহানকে উদ্ধারে তার বাবা জসিম অভিযুক্তদের কাছে ছেলের প্রাণভিক্ষা চায়।
তবুও ছেলেকে ফেরত দেয়নি অভিযুক্তরা। এদিকে ট্রিপল মার্ডারে নিহত জোনাকির
শ^শুর বাড়ির পাশেই বোরহানের বাড়ি হওয়ায়, তার বাবা জসিম হত্যাকাণ্ডের শিকার
জোনাকী, মা রোকসানা আক্তার রুবিসহ তার পরিবারের কাছে ছেলে উদ্ধারে সহযোগিতা
চায়। জোনাকির পরিবার অভিযুক্তদের কাছে বোরহানকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়েও
ব্যর্থ হয়। পরে বোরহানের বাবা ছেলেকে উদ্ধারে বাঙ্গরা থানায় অভিযুক্তদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে বোরহানকে পাওয়া যাচ্ছে না লোকমুখে
খবর প্রকাশের পর বাবা জসিম ধারণা করে অভিযুক্তরা তার ছেলেকে মেরে লাশ গুম
করে ফেলেছে। অন্যদিকে অভিযুক্তদের ধারণা ট্রিপল মার্ডারে নিহত জোনাকী ও তার
পরিবারের সদস্যদের পরামর্শেই রোবহানের বাবা জসিম থানায় অভিযোগ করেন। ওই
মোবাইল ফোন চুরির র্যাশ ধরেই গত ৩ জুলাই অভিযুক্তরা দলবদ্ধ ভাবে
হত্যাকাণ্ডের শিকার মা রোকসানা আক্তার রুবি ও দুই ভাইবোন জোনাকী ও রাসেলের
বশতবাড়ি ঘেরাও করে। ঘোরাও করেই প্রাথমিকভাবে ভাংচুর চালায়। শব্দশুনে
সর্বপ্রথম মা রোকসানা আক্তার রুবি বাড়ি থেকে বের হলে অভিযুক্তরা তার মাথায়
রামদা দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে জোনাকি মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে
আসলে তাকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও বোনের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ
পেয়ে রাসেল মোটরসাইকেল যোগে ছুটে বাড়ির সামনে আসতেই অভিযুক্তরা তাকেও
নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময় অভিযুক্তদের হাতে রোকসানা আক্তার
রুবির দুই মেয়ে রিক্তা ও রুমা গুরুত্বর আহত অবস্থায় প্রাণ রক্ষায় পালিয়ে
যায়।
গ্রেফতারকৃত এজাহারনামীয় ০৫ নং আসামী রবিউলের বাড়ি হতে মোবাইল
চুরির অভিযোগে জনৈক বাঙ্গরা বাজার থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকার অটোরিক্সা চালক
বোরহানকে গ্রেফতারকৃত আসামীরা সহ অন্যান্য আসামীরা বেধড়ক মারধর করতে থাকে
এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে বোরহানের পিতা জসীম উক্ত সংবাদ
পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তার ছেলের প্রাণভিক্ষা চায়। উল্লেখ্য, বোরহানের বাড়ি
মৃত ভিকটিম জোনাকীর (স্বামী-মোঃ মনির-৩৫, সাং-হায়দরাবাদ) শ্বশুর বাড়ির পাশে
অবস্থিত হওয়ায় বোরহানের পিতা জসীম জোনাকীকে আসামীদের নিকট হতে তার ছেলেকে
উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করে।
ঢাকার রামপুরা থানাধীন বনশ্রী এলাকা হতে
উক্ত মামলার এজাহারনামীয় ০৩ নং আসামী ১। বাচ্চু মিয়া (৫৫) মুরাদনগর
উপজেলার বাঙ্গরা বাজার কড়ইবাড়ি গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে বাচ্চু মিয়া
(৫৫) মৃত ছপি মোল্লার ছেলে রবিউল আওয়াল (৫৫), বাচ্চু মিয়ার ছেলে আতিকুর
রহমান (৪২), রবিউল আওয়ালের ছেলে মোঃ বায়েজ মাস্টার (৪৩)। এছাড়াও র্যাব-১১
এর অন্য একটি অভিযানে একই উপজেলার বাঙ্গরা বাজার হায়দরাবাদ গ্রামের মালু
মিয়ার ছেলে দুলাল (৪৫) ও দুলালের ছেলে আকাশ (২৪)।