আবু সুফিয়ান।।
“আমারে
দেবো না ভুলিতে”-এই আবেগ ঘন স্লোগানকে সামনে রেখে কুমিল্লায় অবস্থানরত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। শত শত চবিয়ানদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই মিলনমেলা ছিল
আনন্দ, উচ্ছ্বাস, স্মৃতিচারণ ও বন্ধন নতুন করে জোড়া লাগানোর এক অনন্য
আয়োজন।
শনিবার (৫ জুলাই) নগরীর ফান টাউন সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী এই
অনুষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে
পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো: ইয়াহইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো: কামাল উদ্দিন
এবং উপ-উপাচার্য ড. মো: শামিম উদ্দিন খান।
নির্ঝর আহমেদ প্লাবনের
সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন, চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড
কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান। সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সাবেক চবি
শিক্ষার্থী, এবি পার্টির কুমিল্লা মহানগরীর আহ্বায়ক মিয়া মহাম্মদ তৌফিক।
অনুষ্ঠানজুড়ে
ছিল নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, হাসি, আড্ডা আর ক্যাম্পাসের সোনালি দিনের
স্মৃতিচারণ। বৃদ্ধ বয়সের প্রবীণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বর্তমান
শিক্ষার্থীরাও মেতে ছিলেন সেই চেনা গল্পে, যেখানে মিশে ছিল ভালোবাসা,
নস্টালজিয়া আর স্মৃতির রঙ। অনেকের চোখের কোণে ছিল জল, মুখে ছিল প্রশান্ত
হাসি। কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার এই মুহূর্তগুলো হয়ে রইবে সবার
স্মৃতিতে অমলিন।
বিশিষ্ট অতিথিরা তাদের বক্তব্যে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, শিক্ষা, মানবিকতা এবং বন্ধন নিয়ে কথা বলেন। সাবেক
শিক্ষার্থীদের সাফল্যগাথা, বর্তমান শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও ক্যাম্পাসের
অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকে গুরুত্ব দেন বক্তারা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড.
কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গত ১৫ বছরে কোনো ভূমিকা
রাখতে পারে নাই। শুধু নাচ, গান আর খাওয়া-দাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারে নাই।
বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠে তাদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের
সহযোগিতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের বড় একটা অংশ আসে তাদের থেকে। আমরাও আশা
রাখি, আমাদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে
সহযোগিতা করবে।
প্রধান অতিথি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঐতিহ্য
হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লা জেলার শিক্ষার্থী বেশি। এদের আচরণ,
ব্যবহার ও রেজাল্ট, চাকরি ক্ষেত্রে যে রেকর্ড সেটা অন্যান্য জায়গার চাইতে
ভালো। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ হিসেবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে।
শুধু কুমিল্লাতে নয়, সারাবিশ্বে আমাদের অ্যালামনাই আছে। তারা আমাদেরকে
রিটার্ন টিকিটসহ দাওয়াত করে যাওয়ার জন্য।
আমাদের দেশে দুইটি স্বাধীনতার
ইতিহাস রয়েছে, যেখানে আমাদের মা-বোনেরা ইজ্জত দিয়েছেন, ভাইয়েরা রক্ত
দিয়েছেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছেন। আমরা আমাদের স্বাধীনতার
চেতনাকে ধরে রাখতে পারি নাই। যে কারণে গত ১৫ বছর আমাদের ঘাড়ে এক স্বৈরাচার
বসেছিল। এবারের স্বাধীনতাকে আমরা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারি তাহলে
আমরা আবারো ব্যর্থ হবো।
আমাদের বর্তমান সরকার দেশের সংস্কারে কাজ করছেন,
অনেকগুলো সংস্কার তিনি করেছেন। আবার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি কোনো সংস্কার কমিশন গঠন
করেননি। এটা খুবই দরকার। না হলে আবারো আমাদের দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে। আমরা
আবারো রাজনৈতিক প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে।
তাই আমি
প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করি, তিনি যেন শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো অবদান
রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যেন গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত করে।
এমন আয়োজন
শুধু যে প্রাক্তন আর বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছে তাই
নয়, বরং এটি প্রমাণ করেছে- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের
যেখানেই থাকুক, হৃদয়ের গভীরে বহন করে চলে ক্যাম্পাসের উজ্জ্বল স্মৃতি আর
ভালোবাসা।