রোববার ৬ জুলাই ২০২৫
২২ আষাঢ় ১৪৩২
নৃবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ
প্রকাশ: রোববার, ৬ জুলাই, ২০২৫, ১:১৯ এএম |


কুবি প্রতিনিধি:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থী সিনিয়রদের র‌্যাগিং ও মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলে আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্লাস শুরুর প্রথম দিন থেকেই পরিচয় পর্বের আড়ালে শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে একজন নবীন শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়াও, টানা তিনদিন নবীন শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ডেকে নিয়ে র‌্যাগ দেয়া হয় বলে জানা যায়। যারমধ্যে, বেঞ্চে তুলে দাঁড় করানো, হলে নিয়ে সিগারেট খেতে দেয়া, সিনিয়র আপুকে প্রপোজ করানো, নির্জন স্থানে নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বাবা-মায়ের নামে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী নবীন শিক্ষার্থী জানান, "২ জুলাই রাতে ওই বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (সিআর) তাকে সিনিয়রদের সঙ্গে দেখা করাতে ‘তালতলা’ নামক নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে সিনিয়ররা মো. ওয়ালি উল্লাহ, রাফিও হাসান, অরবিন্দু সরকার তাকে ও তার বন্ধুদেরকে অশ্লীল গালিগালাজ করে এবং মায়ের নামে কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করেন। মোবাইল রেখে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর রাত ১টায় ছাড়া হয়। পরদিন (৩ জুলাই) আবার ডেকে নেয়া হয় একই স্থানে এবং ছবি তুলে রাখাসহ নানা অপমানজনক আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী আরও জানান, তাকে জোর করে সিগারেট খেতে বলা হয়। এমনকি বলা হয়, "তোরে দেখতে গাঁজাখোরের মতো লাগে।" পাশাপাশি এক সিনিয়র আপুকে কল দিয়ে প্রপোজ করতে বাধ্য করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, "সিনিয়র ভাই আমার মাকে নিয়েও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।"
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, “ওরিয়েন্টেশনের দিন আমি সিনিয়রদের  বলি নতুন বাংলাদেশে আপনারা চাইলে নিজেদের সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। আপনাদের আচরণের কারণে একজন মেয়ে কান্না করেছে, এটা ঠিক হয়নি।’ এই প্রতিবাদের কারণে আমাকে টার্গেট করা হয়। পরবর্তীতে প্রথম ক্লাসের দিন ওনারা আমাকে এবং আমার মাকে নিয়ে গালিগালাজ করেন। পাশাপাশি ১০ বার সালাম দিতে বাধ্য করেন। এরপর আবার বেঞ্চের ওপরও দাঁড় করে রাখেন।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জে নিজ বাড়িতে চলে যান। দুইদিন পর শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় মেসে ফিরে ক্যাম্পাসে হাঁটতে গেলে ব্যাচের সিআর এক সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে বলেন বলে জানান। তাকে ডেকে নেওয়া হয় নজরুল হলের ১০৯ নং কক্ষে, সেখানে বলা হয় "তুই নাকি র‌্যাগিং কালচার পরিবর্তন করতে চাস!" এরপর পুনরায় তাকে গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ছাড়া পান। এসময় তাকে আবার র‌্যাগিং দেয় রাফিও হাসান ও মো. ওয়ালি উল্লাহ। 
অভিযুক্তদের মধ্যে অরবিন্দু সরকার, মো. অলি উল্লাহ, রাফিও হাসান, নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়া মোনতাসীর বিল্লাহ পাটোয়ারী বিজয় ২৪ হল এবং বাকি দুইজন তিশা মনি হৃদ, সাদিয়া সরকার মেসে থাকেন বলে জানা গেছে।
র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্তমো. অলি উল্লাহ বলেন, "আমি র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু ওদেরকে দক্ষিণ মোড়ে চা খাওয়ানোর জন্যডেকেছিলাম।" তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অলি উল্লাহ এবং তার বন্ধু রাফিও হাসান নবীন শিক্ষার্থীদের দিয়ে সিনিয়রদের আপুকে কল দিয়ে প্রপোজ করতে বলেন এবং নজরুল হলের ১০৯ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। 'তালতলা' নামক স্থানে র‌্যাগ দেওয়ার সময়ও অলি উল্লাহ ও অরবিন্দু সরকার উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অরবিন্দু সরকার বলেন, "ওদের সাথে গেইটে দেখা হলে আমরা শুধু চা খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা কাউকে র‌্যাগ দিইনি, এমন কিছু ঘটেনি।" তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, "সিআর এর মাধ্যমে আমাকে ডেকে নিয়ে র‌্যাগ দেওয়া হয় এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।"
রাফিও হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "আমি অভিযুক্তকে সাথে নিয়ে আপনার সাথে দেখা করতে চাই। আমার সাথে দুইজন জুনিয়র হলে গেছে তবে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগটা মিথ্যা।" তবে প্রতিবেদকের হাতে থাকা ১৩ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
তিশা মনি হৃদ বলেন, "এই ধরনের কিছু করা হয়নি। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেউ একজন আপনাকে কিছু বলেছে, আর আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন। আমি কিছু করিনি।"
এছাড়াও অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের পর একই ব্যাচের আরও দুইজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুনিয়রদের সাথে উচ্চবাচ্য করার অভিযোগ রয়েছে। তারা হলেন, সাদিয়া সরকার ও মোন্তাসির বিল্লাহ।
এবিষয়ে সাদিয়া সরকার বলেন, "আমরা শুধু আড্ডা দিচ্ছিলাম। এরকম কিছুই হয়নি। ওরিয়েন্টেশনের দিন শুধু একটু জোরে কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেটা র‌্যাগিং নয়।"
মোন্তাসির বিল্লাহ পাটোয়ারী র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "আমরা কাউকে র‌্যাগ দেইনি। তবে, ওরিয়েন্টেশনের দিন আমার এক নারী বন্ধু হয়তো জুনিয়রদের কিছু বলেছিলেন, যার ফলে এক মেয়ে কেঁদে ফেলেছিল। তবে সে ঠিক কী বলেছিল, তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।"
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরিন বলেন, "প্রশাসন র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সে পথেই এগোব। আমাদের প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং প্রতিরোধে প্রশাসনিক যে নীতিমালা ও ব্যবস্থা রয়েছে, তার মাধ্যমেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।" 
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, "আমি বিষয়টি এইমাত্র জানলাম। আমি বিভাগীয় প্রধানের সাথে কথা বলবো এবং পরবর্তী একাডেমিক মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করবো।"













সর্বশেষ সংবাদ
পবিত্র আশুরা আজ
বাঙ্গরায় ৩ হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৮
মোবাইল চুরি নিয়েথানায় অভিযোগের ক্ষোভ থেকেই মুরাদনগরে তিন খুন!
জামায়াত যেনতেন নির্বাচনচায় না
মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নিপীড়নকাণ্ড মাস্টারমাইন্ড শাহপরান কারাগারে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা মুরাদনগরের তিনজনের নিহতের ঘটনায় ৩৮ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার দুই
জামায়াত যেনতেন নির্বাচন চায় না : কুমিল্লায় বললেন জামায়াত আমীর ডা.শফিকুর রহমান
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শাহীন আলম
লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করলেন- ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী
কাউকে না পেয়ে গ্রাম পুলিশ দিয়ে কবর খনন
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২