কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী এবং ভিডিওচিত্র ধারণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটিও আমরা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
রবিবার (২৯ জুন) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই অনেকেই বিষয়টি পরকীয়া বলে প্রচার করছেন। তবে আমাদের প্রাথমিক তদন্তে এমন কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বুঝেছি, তিনি সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটিও আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
ধারের টাকার খোঁজ নিতে এসে খালি বাড়ি পেয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী নারী (২৫) ও তাঁর স্বজনদের। ওই নারী বলেন, তাঁর বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ফজর আলীর সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা আছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফজর বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। তিনি খুলতে না চাইলে ফজর টিনের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন।ধর্ষণের বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশ থেকে লোকজন এসে ফজর আলীকে পেটাতে থাকেন। এ সময় তাঁকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করা হয়। পুলিশ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরাই তাঁকে মারধর করেছেন। তাঁদের লোকজনই সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ওই নারীর একজন প্রতিবেশীর ভাষ্য, বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। তিনি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে আনেন। লোকজন গিয়ে দেখেন, দরজা ভাঙা। পরে তাঁরা ওই নারীকে উদ্ধার করেন। এ সময় কিছু লোক ওই নারীকে মারধর এবং ওই অবস্থায় ভিডিও করেন। পরে যখন সবাই বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, তখন সবাই ফজর আলীকে পেটাতে থাকেন।
ফজর আলীকে আসামি করে গত শুক্রবার মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই নারী। এ ছাড়া রোববার তিনি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওসি জানান, ফজর আলীকে (৩৮) ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় সময় বেধড়ক পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন কুমিল্লা জেলা পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র অবস্থায় নির্যাতন করে ৫১ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চারজন হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। তাঁদের আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ওয়ার্ড কমিটির সাবেক নেতা।