নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য বর্ধিত সময় শেষ হয়েছে গত রবিবার। ইসির তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে শেষ দিনে আবেদন পড়ে ৫০টির বেশি। এ পর্যন্ত ইসিতে মোট আবেদন করেছে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ ইসির ডেসপাচ থেকে তথ্য একীভূত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানাবে ইসি সচিবালয়। সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য দলকে নিবন্ধন দেবে ইসি। শেষ দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
পত্রিকান্তরেপ্রকাশিত অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর গত ১০ মাসে গঠিত হয়েছে অন্তত ৩০টি দল। এর মধ্যে প্রায় দুই মাস আগে আত্মপ্রকাশ করা দলও এবার আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এত কম সময়ে কীভাবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদনকারী দলগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণের যোগ্যতা রয়েছে। বাকি ৯৭ শতাংশ দলের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। অনেক দলের কার্যালয়ের ঠিকানা, এমনকি ফোন নম্বর পর্যন্ত ভুয়া।
আবেদনকারী অনেক দলের নেতা-কর্মী দূরের কথা, বেশির ভাগেরই নেই কার্যালয়। ইসিতে দেওয়া ঠিকানায় বেশির ভাগ দলের কোনো অস্তিত্বই নেই। কমিশনে উল্লিখিত ঠিকানায় রয়েছে কারও বাড়ি বা অফিস। এসব দলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও পেশাজীবী। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া বেশির ভাগ দলের অস্তিত্বশুধু কাগজে-কলমে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে ভোটের লক্ষ্য ধরে নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিতে গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। সে সময় ইসিতে আবেদন করে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল। এরপর এনসিপিসহ বেশ কিছু দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলের নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা ২০ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি আদালতের আদেশে ইসির নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আর নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধনের জন্য জমা পড়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে ইসির একটি কমিটি রয়েছে। আবেদনকারীরা শর্ত পূরণ করেছে কি না, কমিটির সদস্যরা সেটি দেখবেন। আইনে উল্লিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে না পারা কোনো দলকেই নিবন্ধন দেওয়া হবে না। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে মাঠে কাজ করছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, নতুন দলের জন্ম ইতিবাচক হলেও তা যদি নামসর্বস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা বা আলোচনায় আসার জন্য গঠিত হয় তা গণতান্ত্রিক চর্চার সুফল বয়ে আনবে না। এসব দল দেশ ও জনগণের কোনো কাজেও আসবে না। কারণ তাদের অনেকেরই উদ্দেশ্য ভোটের আগে বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি করে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করা।
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন জরুরি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্তগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনকে যাচাই করতে হবে। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।