তানভীর দিপু।।
খাওয়ার
জন্য জমিয়ে রাখা হয় বৃষ্টির পানি। ঘরে ঘরে প্লাস্টিকের ড্রাম এবং মাটির
পাত্রে জমানো এসব পানি রান্না কে সুস্বাদু করে বলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা
হয়। কিন্তু জমানো এই বৃষ্টির পানি কুমিল্লা দাউদকান্দির পৌরসভায় ডেঙ্গু
ভাইরাস ছড়ানোর মূল কারণ বলে উঠে এসেছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং ঝোপঝাড়ে
জমানো পানিতে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন ধারণা ভুল প্রমাণিত করে,
দাউদকান্দির ডেঙ্গু সংক্রমিত এলাকায় দেখা গেছে -অসচেতনতায় ঘরের ভেতরই
উৎপাদিত হচ্ছে এডিস মশার লার্ভা।
জুন মাসের শুরু থেকেই
দাউদকান্দি পৌর এলাকার ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ড কে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য হট
স্পট হিসেবে ঘোষণা করে প্রশাসন। বিশ দিনে অন্তত ১৮ শ মানুষ ডেঙ্গুতে
আক্রান্ত হয়েছে বলে তথ্য আসে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে। ওই
এলাকাগুলোতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়ে। সংক্রমনের
শুরু থেকে হটস্পট গুলোর দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি না থাকলেও ২৪ জন
আক্রান্ত এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহে যান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব
বিভাগ। সেখানে গিয়ে মেলে 'ভয়ংকর তথ্য'।
জেলা
কীটতত্ত্ববিদ আল ইমরান ভূঁইয়া বলেন, 'সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল
দাউদকান্দিতে বাড়ির বাইরে অপরিচ্ছন্ন এবং ডোবা-নালায় বৃষ্টির পানি জমে
লেডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু আমরা সংক্রমিত এলাকায়
গিয়ে পেলাম আরো ভয়ংকর তথ্য। এডিস মশা লার্ভা উৎপাদন হচ্ছিল বাড়ির ভেতরেই।
বৃষ্টির পানি জমানোর জন্য পৌরবাসী যেসব প্লাস্টিকের এবং মাটির ড্রামে পানি
ধরে রেখেছিলেন - সেগুলোতেই পাওয়া গিয়েছে বিপুল পরিমাণে এডিস মশার লার্ভা
স্যাম্পল।'
আল ইমরান ভূঁইয়া বলেন, 'আমরা দাউদকান্দি পৌরসভার সবজি কান্দি
এলাকায় গিয়ে দেখেছি প্রায় সব বাড়িতেই বৃষ্টির পানি জমানোর পাত্র। আর
সেগুলোতেই এডিস মশা লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য
বাইরের কিছু নয় বরং ঘরে বাড়িতে এই পানির পাত্র গুলোই দায়ী। আমরা পৌর
কর্তৃপক্ষকে সেসব ড্রামগুলো দ্রুত অপসারণের পরামর্শ দিয়েছি।'
জানা গেছে,
দাউদকান্দি পৌর এলাকার বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাড়ির সামনে তো বাচ্চা তৈরি
করে কিংবা প্লাস্টিকের ড্রামে, মাটির পাত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে। পরে
সে পানি রান্নার কাজে বা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। ঘরে ঘরে থাকা এসব
পানির পাত্রকেই বেছে নেই ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণকারী এডিস মশা। এসব
পাত্রেই জন্ম নেয় নতুন লার্ভা, তা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে ডেঙ্গু ভাইরাস
ছড়িয়েছে। মূলত লেডিস মশা লার্ভা ঘরে ঘরেই জন্ম নিচ্ছিল বলে জেলা সিভিল
সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। বাড়ি বাড়ি
গিয়ে দেখা গেছে, মাটির তৈরি মটকা, ড্রাম, বালতিতে পানি সংরক্ষণ করে ঘরের
সামনে কিংবা ঘরের ভেতরেই রাখা। আর সেসব পাত্রতেই পাওয়া গেছে ডেঙ্গু ভাইরাস
পরিবাহী এডিস মশার লার্ভা।
দাউদকান্দি পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপজেলা
ভূমি সরকারি কমিশনার রেদোয়ান ইসলাম জানান, আমাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে -
পৌরসভায় ডেঙ্গুর হটস্পট যেসব এলাকাগুলো সেখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার
পাত্রে বিপুল পরিমাণে এডিস মশালার্ভা পাওয়া গিয়েছে। যা ঘরে ঘরে ডেঙ্গু
ভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম কারণ। পরিষ্কার জমে থাকা বৃষ্টির পানি লেডিস মশার
বংশবৃদ্ধির অন্যতম সুবিধাজনক জায়গা।
তিনি আরো বলেন, আমরা বুধবার পৌরসভার
বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব জমানো পানি ফেলে দিয়ে এসেছি। কিন্তু
সবাইকে সচেতন হতে হবে। এইসব পানি যতদিন না ফেলা হবে - ততদিন ডেঙ্গু সংক্রমণ
কমবে না। আমরা আশা করছি স্থানীয় মানুষজনদের সাথে নিয়ে এই সচেতনতা তৈরি
করতে পারব।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, জেলা
কীটতত্ত্ববিদ পরামর্শ দিয়েছেন দাউদকান্দির বাসা বাড়ি থেকে বৃষ্টির পানি
জমানো পাত্র অপসারণ করতে হবে। সেগুলোতে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর জন্য একমাত্র
কারণ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২৫ জুন পর্যন্ত
দাউদকান্দি উপজেলায় অন্তত সাড়ে ১৮ শ' মানুষ ডেঙ্গু সংক্রমনের শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে এক হাজার মানুষ তো হয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে এ পর্যন্ত ছয়
জনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
তবে স্থানীয় সূত্র মতে, ডেঙ্গুতে
দাউদকান্দি উপজেলায় প্রাণহানি সংখ্যা আটজনের। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের
ডেঙ্গু সংক্রমণের তথ্যের সাথে দাউদকান্দি উপজেলায় ডেঙ্গু সংক্রমনের তথ্যের
রয়েছে বিস্তর ফারাক। সংক্রমণের সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করেনি বলে
অভিযোগ রয়েছে দাউদকান্দিবাসীর। যে কারণেই সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে
দেরি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।