এশিয়ান
কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ ছিল
তুঙ্গে। ঘরের মাঠে সবাই জয়ের প্রত্যাশায় ছিলেন। সফরকারী সিঙ্গাপুর ১-২ গোলে
জিতে উল্টো বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়েছে। সাবেক তারকা ফুটবলার ও দেশের
শীর্ষস্থানীয় কোচরা এই হারের জন্য সরাসরি স্প্যানিশ হেড কোচ হ্যাভিয়ের
ক্যাবরেরাকে দায়ী করেছেন।
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান
এমিলি স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত। তিনি কোনো রাখঢাক না করে সরাসরি বললেন,
‘আমাদের দলের সামর্থ্য ছিল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয়ের। উল্টো আমরা হেরেছি।
এই দায় সম্পূর্ণরূপে কোচের। কারণ তার কৌশল-পরিকল্পনা যেমন ভুল তেমনি তার
খেলোয়াড় নির্বাচন ও পরিচালনা পদ্ধতিও সঠিক ছিল না।’
আমাদের দলের
সামর্থ্য ছিল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয়ের। উল্টো আমরা হেরেছি। এই দায়
সম্পূর্ণরূপে কোচের। কারণ তার কৌশল-পরিকল্পনা যেমন ভুল তেমনি তার খেলোয়াড়
নির্বাচন ও পরিচালনা পদ্ধতিও সঠিক ছিল না
সাবেক তারকা ফুটবলার তার
বক্তব্যের দৃঢ় ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘কোচের শুরু থেকে তিন পয়েন্টের অ্যাপ্রোচ
দেখা যায়নি। যখন এক গোল বাংলাদেশ দিল এরপর তিনি জয়ের চেষ্টা করেছেন। অথচ
যিনি গোল করলেন সেই ফরোয়ার্ড রাকিবকে তিনি রাইটব্যাক পজিশনে খেলালেন। যার
যখন আরও বক্সে ভীতি ছড়ানোর কথা তখন তিনি রাইট ব্যাকে যা রীতিমতো
অবিশ্বাস্য।’
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও দেশের অন্যতম শীর্ষ কোচ জুলফিকার
মাহমুদ মিন্টু। যার ফুটবলের ট্যাকটিক্স-ফরমেশন নিয়ে অনেক জানাশোনা। সেই
মিন্টুও হতবাক কোচের এমন কাণ্ডে, ‘একজন খেলোয়াড় গোল করলেন সেই খেলোয়াড়কে
কোন যুক্তিতে, কোন ট্যাকটিক্সে রাইট ব্যাক এটা আমার মোটেও বোধগম্য নয়। শুরু
থেকেই খেলায় কোনো পরিকল্পনার ছাপ ছিল না।’
কানাডা জাতীয় ফুটবল দলে খেলা
ফুটবলার সামিত সোমের গতকাল বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছে। সামিত গতকাল দুই
অর্ধেই বেশ কয়েকটি ভালো বল সরবারহ করেছিলেন বক্সে। প্রকৃত স্ট্রাইকার না
থাকায় সামিতের এত সুন্দর পাস থেকেও গোল আসেনি। এতেও কোচকে কাঠগড়ায় দাঁড়
করিয়েছেন এমিলি, ‘সুমন রেজা, আল আমিনের মতো জেনুইন স্ট্রাইকার রয়েছে। সামিত
বক্সে খুব ভালো ডেলিভারি দিতে পারেন। এটা জেনেও কেন আমরা শুরু থেকে আল
আমিন কিংবা সুমনকে ব্যবহার করিনি। বাংলাদেশ ৬৬ মিনিটে গোল করার দশ মিনিট
পরে আল আমিনকে নামিয়েছেন কোচ। তখন আবার রাকিব রাইটব্যাকে। সব কিছুই
এলেমেলো।’ এমিলির সঙ্গে অনেকটা একমত পোষণ করে মিন্টু বলেন, ‘সামিত কার্যকরি
খেলোয়াড়। তাকে প্রয়োজনীয় বল সরবরাহ করতে হবে। সামিত পর্যন্ত বল পৌঁছানো
নিয়েও কোনো পরিকল্পনা ছিল না।’
‘কাল আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ১০টি কর্নার
পেয়েছি। জামাল কর্নার ও ফ্রি কিকে সবচেয়ে ভালো। যখন কোচ দেখলেন অনেক স্পট
কিক হচ্ছে তখনও তিনি জামালকে নামাননি’
বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তী
ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির। কালকের ম্যাচ তিনি স্টেডিয়ামে বসে
দেখেছেন। সাবেক এই তারকা ফুটবলারের পর্যবেক্ষণ, ‘সিঙ্গাপুর কোনো আহামরি দল
ছিল না। আমাদের দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও পরিকল্পনা পরিষ্কার ছিল না। এই
দু’টি বিষয় অবশ্যই কোচের ওপরই বর্তায়।’
দাবার মতো বাংলাদেশের ফুটবলেও
এখন নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন প্রথা চালু হয়েছে। মাঠের বাইরে সকল কিছুর জন্য
অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। অথচ তাকে কোচ মাঠেই নামাননি। কালকের ম্যাচে জামালের
প্রয়োজনীয়তা ছিল এমিলির দৃষ্টিতে, ‘কাল আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ১০টি কর্নার
পেয়েছি। জামাল কর্নার ও ফ্রি কিকে সবচেয়ে ভালো। যখন কোচ দেখলেন অনেক স্পট
কিক হচ্ছে তখনও তিনি জামালকে নামাননি।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার ও বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ।
জাতীয়
দলের আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার ও বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের কোচ
আলফাজ আহমেদ ভুটানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা খুঁজে
পাচ্ছেন না। তার মতে, ‘তাজউদ্দিন ঐ ম্যাচে অত্যন্ত ভালো খেলেছিলেন। অথচ
তাকে এই ম্যাচে ব্যবহারই করলেন না। জামাল সেদিন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই ম্যাচে তাকে অন্তত কিছু সময় খেলানোর
প্রয়োজন ছিল।’ অগ্রজ আলফাজের সঙ্গে এমিলি এক সুরেই বললেন, ‘দলে প্রতিষ্ঠিত
রাইটব্যাক তাজউদ্দিন রয়েছেন। কোচ সেখানে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার শাকিল তপুকে
শিফট রাইট ব্যাক খেলিয়েছেন। কাজেম মূলত মিডফিল্ডার তাকে আবার করেছেন রাইট
উইং। ফলে কাজেমের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্স আসেনি।’
গোলের খেলা
ফুটবল। বাংলাদেশ দু’টি গোল হজম করেছে। এই দুই গোল হজমের পেছনে গোলরক্ষকের
পাশাপাশি রক্ষণকেও দায় করছেন এমিলি, ‘দু’টি গোলেই মিতুল ঠিক মতো গ্রিপ করতে
পারেননি। মিতুল মিস করার পরও কিন্তু দু’টি গোলের ক্ষেত্রে কিছু সময় পাওয়া
গিয়েছিল। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে দুই-তিন জনের কাছে বল ঘুরেছে। দ্বিতীয় গোলের
সময় সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ড বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় পেয়েছেন। দুই ক্ষেত্রেই
আমাদের ডিফেন্ডাররা প্রয়োজনীয় সময় পেলেও ঠিক মতো কাভার করতে পারেননি।’
দ্বিতীয়
গোল হজমের সময় বাংলাদেশের ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন অনেকটা দর্শকের ভূমিকায়
ছিলেন। সাদ উদ্দিনকে বাফুফে প্রথমে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঘরোয়া
ফুটবলে ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কার ঘটনায়। সেই সাদ উদ্দিনের শাস্তি
আকস্মিকভাবে ডিসিপ্লিনারী কমিটিই কমিয়েছে। এর পেছনে কারণ শোনা যায় কোচের
সাদের পছন্দ ও জাতীয় দলের স্বার্থ। অথচ তার জাতীয় দলের পারফরম্যান্স
প্রশ্নবিদ্ধ।
সাবেক ফুটবলার ও ফুটবল সমর্থকদের সমালোচনার
কেন্দ্রবিন্দুতে স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। বাংলাদেশের পরবর্তী
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ অক্টোবরে। এই সময়ের আগেই কোচ নিয়ে ফেডারেশনের
চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে মনে করেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। দল নির্বাচন ও খেলার
পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত এই কোচ।