যুক্তরাষ্ট্রে
বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকালে শুরু হচ্ছে নতুন সংস্করণের ক্লাব বিশ্বকাপ।
যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের ৩২টি ক্লাব লড়াই করবে শিরোপার জন্য। তবে
ফুটবলপ্রেমীদের বেশির ভাগেরই চোখ থাকবে তারকাবহুল ক্লাবগুলোর প্রতি। লিওনেল
মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং আর্লিং হলান্ডদের মতো
তারকারাই থাকবেন আকর্ষণের কেন্দ্রে।
তবে এত তারকার ভিড়েও আলাদাভাবে নজর
কেড়েছে নিউজিল্যান্ডের একটি ক্লাব। অপেশাদার সে ক্লাবটির নাম অকল্যান্ড
সিটি। ওশেনিয়া অঞ্চলের এ ক্লাবটি গড়া একদল অপেশাদার ফুটবলার নিয়ে। যাঁরা
আগামী কদিন ভিন্ন এক আবহে বিশ্বের ফুটবল পরাশক্তিগুলোর বিপক্ষে নিজেদের
সক্ষমতা প্রমাণের জন্য মাঠে নামবেন।
অকল্যান্ড সিটির প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ
নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর অকল্যান্ডের নর্থ শোর উপশহর ঘিরে। এই ক্লাবটি
যেসব ফুটবলারদের নিয়ে গড়া হয়েছে তাদের কেউ পূর্ণকালীন অন্য কাজ করেন কিংবা
পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দলে কোমল পানীয় বিক্রেতা ও রিয়েল এস্টেট
এজেন্টসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত খেলোয়াড়েরাও আছেন।
দলের খেলোয়াড়দের অন্য
পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টিই মূলত ক্লাবের অর্থনৈতিক অবস্থাকে তুলে
ধরছে। অনেক ইউরোপীয় পরাশক্তির মতো অকল্যান্ড সিটির বিভিন্ন
সুযোগ–সুবিধাসম্পন্ন অনুশীলন কেন্দ্র নেই। দলের খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই
অনুশীলন ও শরীরচর্চার কাজ ক্লাবের বাইরে করেন। বলা যায়, ন্যূনতম সুযোগ ও
সীমিত সম্পদ নিয়েই বিশ্ব মঞ্চে অনেকটা নাটকীয়ভাবে আবির্ভূত হয়েছে
নিউজিল্যান্ডের এই ক্লাবটি।
গত বছর ওশেনিয়া চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ক্লাব
বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে অকল্যান্ড সিটি। ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে
তারা মুখোমুখি হবে ৩৪ বারের জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ, পর্তুগালের
অন্যতম সফল ক্লাব বেনফিকা ও আর্জেন্টিনার সবচেয়ে সফল ক্লাব বোকা
জুনিয়রসের। বিখ্যাত এসব ক্লাবকে চমকে দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন বুনছে
এখন অকল্যান্ড সিটি।
সিএনএন স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের অধিনায়ক
মারিও ইলিচ জানিয়েছেন, অকল্যান্ড সিটির ঐতিহাসিক অগ্রগতির পেছনে ভূমিকা
রেখেছে ফুটবলের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা। ইলিচ বলেছেন, ‘লোকজন বলে পেশাদার
খেলোয়াড়রা অনেক পরিশ্রম করে, যা সত্য। কিন্তু আমরা দুটো, এমনকি কেউ কেউ
তিনটি কাজ করেও বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার চেষ্টা করছি।’
ইলিচ নিজেও
অন্য পেশায় যুক্ত। কোকাকোলার বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ
করেন। অকল্যান্ড সিটি অধিনায়ক নিজের দৈনন্দিন কার্যতালিকা তুলে ধরেন এভাবে,
‘আমার দিন শুরু হয় ভোর ৫টায় অ্যালার্ম বাজলে। ঘুম থেকে উঠে এক ঘণ্টা জিমে
যাই, তারপর বাড়িতে ফিরে নাশতা করে ৮টার মধ্যে অফিসে পৌঁছে যাই। চেষ্টা করি
৫টার আগে কাজ শেষ করতে, যাতে শহর পার হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় অনুশীলনে যেতে
পারি। ওখানে ঘাসের ওপর প্রায় দুই ঘণ্টা অনুশীলন করি, তারপর রাত ৯টার দিকে
বাড়িতে ফেরার পর ঘুমাতে যাই, আবার পরের দিন সব শুরু করার জন্য।’
দলের
অধিনায়কের এই রুটিনই বলে দিচ্ছে, কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফুটবলের প্রতি
নিজেদের প্রেমটাকে ধরে রেখেছেন তাঁরা। আর এই সময়সূচির কারণে অফিস বা ফুটবল
মাঠের বাইরে জীবন কাটানোর সুযোগ অনেক কম থাকে তাঁদের, যা শুধু খেলোয়াড়দের
ওপরই নয়, তাঁদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবের ওপরও চাপ সৃষ্টি করে।
ইলিচ
বলেছেন, ‘আমি সত্যিই আমার স্ত্রীকে শুধু শুক্রবার রাতে বা কদাচিৎ রোববারে
দেখতে পাই। সৌভাগ্যক্রমে ও বুঝতে পারে যে একজন ফুটবলারের ক্যারিয়ার অল্প
সময়ের জন্যই থাকে, তাই ও আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দিচ্ছে।’
ইলিচের
ক্লাব সতীর্থ গোলরক্ষক কনর ট্রেসি কাজ করেন পশুচিকিৎসার ওষুধ কোম্পানির
গুদামে। তাঁর এই কাজটি বেশ পরিশ্রমের, যেখানে ঘন ঘন ভারি জিনিসপত্র তুলতে
হয়। নিজের কাজ সম্পর্কে ট্রেসি বলেন, ‘আমার কাজটি অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য এবং
শরীরের ওপর চাপ অনেক বেশি থাকে। অপর্যাপ্ত বিশ্রামের কারণেও আমার চোট
পাওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য গোলরক্ষকের চাইতে অনেক বেশি।’
সহ–অধিনায়ক
অ্যাডাম মিচেলের গল্পটা একটু ভিন্ন। ফুটবলের মঞ্চে পায়ের নিচে মাটির খোঁজে
ইউরোপে গিয়েছিলেন মিচেল। তাঁকে দলে টেনেছিল রেড স্টার বেলগ্রেড এবং বোল্টন
ওয়ান্ডারার্সের মতো ক্লাব। কিন্তু কোথাও থিতু হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত
নিজ দেশে ফিরে আসেন। নিউজিল্যান্ডে ফিরে প্রথমে টিম ওয়েলিংটস এবং পরে
অকল্যান্ড সিটির হয়ে খেলা শুরু করেন। তবে দেশে ফিরে ফুটবলের পাশাপাশি জড়িয়ে
পড়েছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়। আপাতত রিয়েল এস্টেট ভুলে কদিন ফুটবলেই
মনোযোগ দিতে হবে তাঁকে।
বায়ার্ন–বেনফিকার মতো ইউরোপের শীর্ষ দলের
বিপক্ষে খেলতে হবে অকল্যান্ডকে। পার্থক্যটা বিশাল হলেও তাতে দমতে রাজি নন
ইলিচ। নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে অকল্যান্ড অধিনায়ক বলেছেন, ‘ওরা মিলিয়ন মিলিয়ন
ডলারের মালিক। আর আমরা হচ্ছি অপেশাদার খেলোয়াড়, যারা ভালোবাসার কারণে
খেলছি। কিন্তু আমাদের যা রয়েছে তা হলো, আমরা সবাই মাঠের বাইরে ও ভেতরে
ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এবং অপরের জন্য লড়াই করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কোচ যা
পরিকল্পনা করেছিলেন তা যদি ভালো করে বাস্তবায়ন করতে পারি এবং আমাদের
সর্বোচ্চ দিতে পারি, তাহলে যে কোনো কিছু হতে পারে। কারণ শেষ পর্যন্ত এটা
হচ্ছে ১১ জন বনাম ১১ জনের খেলা।’