বুধবার ২৮ মে ২০২৫
১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নতুন গবেষণা ইটভাটায় কার্বন নিঃসরণ কমাবে
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম |

 নতুন গবেষণা ইটভাটায় কার্বন নিঃসরণ কমাবে
অর্থায়ন বন্ধের কারণে বাংলাদেশসহ বায়ুদূষণের শিকার শীর্ষস্থানীয় দেশগুলো তথ্যগত নানা ঝুঁকিতে পড়েছে। মার্কিন তথ্য সরবরাহ বন্ধের কারণে ছয়টি দেশ সম্পূর্ণভাবে বায়ূমান পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা হারিয়েছে। ১৩টি দেশে মার্কিন দূতাবাসদের পর্যবেক্ষণ যন্ত্রই ছিল রেগুলেটরী গ্রেড বায়ুমান তথ্যের একমাত্র উৎস। যার মধ্যে ৯টি দেশ আফ্রিকায়, তিনটি এশিয়ায় এবং একটি ক্যারিবীয় অঞ্চলে। উচ্চমানের ও উন্মুক্ত বায়ুমন্ডলের তথ্য বৈশি^ক বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে মূলভিত্তি। জরুরী ভিত্তিতে উচ্চমানের বায়ুমান পরিমানের পরিমাপ শুরু করা প্রয়োজন যাতে তথ্যের প্রবাহ বজায় থাকে এবং দূতাবাস পর্যবেক্ষণ কর্মসূচীর বহুবিধ সুফল অব্যাহত রাখা যায়। জীবাশ্ম জ¦ালানির উপর নির্ভরতার ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীরা যখন বারবার সতর্ক করছেন, তখন বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিউনিভার্সিটি আইসিডিআর ও বুয়েট গবেষকরা ইট উৎপাদনের জন্য নতুন কৌশল বের করেছেন। ব্যবহারিক ও মুনাফাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেও কৌশলে কার্যকরভাবে জ¦ালানি সাশ্রয় ও কার্বন নির্গমন কমানোর সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল সায়েন্সে সম্প্রতি প্রকাশিত এ র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়ালে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের ইটভাটার মালিকরা আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়াই পরিবেশবান্ধব ও জ¦ালানি সাশ্রয়ী কৌশল গ্রহণে আগ্রহী ও সক্ষম, যদি এসব পরিবর্তন তাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয় এবং তারা সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পান। এ ট্রায়ালের আওতায় ২০২২-২৩ সালে ইট উৎপাদন মৌসুমে ২৭৬ ইটভাটায় মালিকদের শিক্ষা উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও কারিগরী সহায়তা দেয়া হয়। এতে ইটবোঝাই ও পোড়ানোর উন্নত পদ্ধতি এবং কয়লার পাশাপাশি বায়োমাস জ¦ালানি (যেমন- কাঠের গুড়া, ধানের তুষ) ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়। এগুলো জ¦ালানি সম্পূর্ণ পোড়াতে এবং তাপের অপচয় রোধে সহায়ক। এর উদ্দেশ্য ছিল সহায়তার মাধ্যমে ভাটা মালিকদের ইট উৎপাদনে একটি জ¦ালানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ইটভাটার মালিক কিছু পরিবর্তন গ্রহণ করেছেন। এতে জ¦ালানির ব্যবহার ২৩ শতাংশ কমে এবং পরিবেশে কার্বন -ডাইঅক্সাইড ও পিএম ২.৫ নির্গমন ২০ শতাংশ কমে। পাশাপাশি কয়লা খরচও কমে এবং মানসম্মত ইট উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা ধারণা করছেন, প্রতি টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ কমানোর জন্য মাত্র ২.৮৫ ডলার খরচ হয়। এক বছর পর ইটভাটাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় উন্নত কৌশল ব্যবহার শুধু স্থিতিশীল থাকেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকরা ফলাফল দেখিয়েছেন, ইটভাটা মালিকরা সহজ পরিবর্তন গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, যদি তাদের অর্থনৈতিক লাভের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এ ফলাফলগুলো বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময়। কারণ এ শিল্পকে নিয়ন্ত্রণের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বিরূপ পরিবেশে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শ্রমিকরা প্রতিবছর প্রায় ২৭ বিলিয়ন ইট উৎপাদন করে। ইট উৎপাদন দেশের বার্ষিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিরসণের ১৭ শতাংশ এবং পিএম নিঃসরণের ১১ শতাংশের জন্য দায়ী। বর্তমানে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে জ¦ালানি হিসাবে কঠোর ব্যবহার নিষিদ্ধ। এছাড়া স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা থেকে দূরে স্থাপন করতে বলা হয়েছে। আইসিডিডিআরবি’র গবেষকরা বলছেন, ‘ইটভাটার পরিবর্তনটা কেবল প্রযুক্তি বা কৌশলের বিষয় নয়, যদি শ্রমিকদের স্বার্থের প্রতি মনোযোগ না দেয়া হয়। তবে কাজের ফল প্রত্যাশিতভাবে আসে না। কঠোরভাবে নিয়মকানুন বাস্তবায়ন না করেও শ্রমিকদের কল্যাণে মনোযোগ দিলে ব্যবসাও লাভবান হতে পারে। যেখানে মালিক ও শ্রমিক দুপক্ষই লাভবান হয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব।’ গবেষকদের মতে, এ জ¦ালানি সাশ্রয়ী কৌশল শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারত ও নেপালের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও প্রয়োগ করা সম্ভব, যেখানে ইট পোড়ানোর ধরণা অনেকটা একই। ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক গ্রিনটেক নজেলজ সলিউশনের উপদেষ্টা ও অন্য কয়েকজন বলেন, এ গবেষণায় যেসব জ¦ালানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞ ইট প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করেই চিহ্নিত করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে এমন অনেক উদ্ভাবনী পদ্ধতি ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষকগণ হিসাব করেছেন, প্রতি ১ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের কারণে পরিবেশ ও সমাজে যে ক্ষতি হয়, এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১৮৫ ডলার। এ মূল্যায়নের ভিত্তিতে দেখা যায়, এ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কার্বন নির্গমন কমে যাওয়ায় সামাজিক ক্ষতির পরিমাপ আগের তুলনায় ৬৫ ভাগ কমে এসেছে। গবেষকরা আরও বলেন, বাংলাদেশের সব জিগজাগ ইটভাটা মালিকরা এ পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করলে শুধু একটি ইট পোড়ানোর মৌসুমেই কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ ২.৪ মেট্রিক টনে নেমে আসবে, যা দেশের বার্ষিক নিঃসরণ ২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করবে। দেশের ইটভাটা মালিকরা যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে পরিবেশবান্ধব ও জ¦ালানি সাশ্রয়ী কৌশল গ্রহণে আগ্রহী। এ পরিবর্তনের ফলে কার্বন নির্গমন কমবে ২০ শতাংশ, জ¦ালানি সাশ্রয় হবে ২৩ শতাংশ। আর এর সামাজিক ও পরিবেশগত সুফল আর্থিক ব্যয়ের তুলনায় ৬৫ গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে ইট উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও এটি গ্রিণ হাউজ গ্যাস ও বায়ুদূষণের বড় উৎস। প্রচলিত পদ্ধতিতে কয়লা পুড়িয়ে ইট উৎপাদন করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ কাবর্ন ডাইঅক্সাইড, সূক্ষ্ম বস্তু কণা ও দূষিত পদার্থ নিঃসরণ হয়। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে এ খাত মানব স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ 













সর্বশেষ সংবাদ
থিওসফিক্যাল সোসাইিটও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট
ধ্বংসের পথে শিল্প-বিনিয়োগ
পানি নিঃস্কাশনের ব্যবস্থা নেই, বর্ষার আগেই ভোগান্তি চরমে
চৌদ্দগ্রামে ভূমি মেলা কুইজ প্রতিযোগিতা
বুড়িচংয়ে সমাপ্ত হল ৩দিনের ভূমি উন্নয়ন মেলা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিদেশী পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার
কবি নজরুলকে বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই
দাবী আদায়ে কর্মবিরতীতে প্রাথমিকের শিক্ষকেরা
মহাসড়কের গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঢাবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের হত্যা প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২