কুমিল্লার হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম নিজ উপজেলাতেই গত ৪বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি হোমনার ভাষানিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে। তবে তার সকল একাডেমিক সনদপত্রে দেখানো হয়েছে ঢাকার ঠিকানা।
সম্প্রতি
উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাউল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এসব তথ্য বেড়িয়ে আসে।
ভুক্তভোগীরা
অভিযোগ করেন, তাদের ৩০কেজি চাউলের পরিবর্তে ২৪-২৭ কেজি চাউল বিতরণ করা হয়।
আর এসব বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও এই অফিসার তদন্তের নামে কোন ব্যবস্থা
গ্রহণ করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, গোডাউন থেকে
ডিলারদেরকে প্রতি বস্তায় এক-দেড় কেজি করে ওজনে কম দেয়া হয়। তাই ডিলাররাও
সুবিধাভোগি কার্ডধারীদেরকে পরিমাপে কম দেয়।
এসব বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তিনি
এই উপেজলার সন্তান হওয়ায় প্রভাব দেখিয়ে এসব এড়িয়ে যান এবং অনিয়ম-দুর্নীতির
বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না।
সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ
ওয়াসিম তার সকল সদনপত্রে ঢাকার ঠিকানা ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১০ সালে খাদ্য
পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে নিজের পছন্দমত ২০২১ সালের
৫ অক্টোবর হোমনা উপজেলায় "খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা" হিসেবে যোগদান করেন।
অভিযোগ
উঠে, বদলির সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজ উপজেলার কথা না জানিয়ে
নানাহ তদবিরের মাধ্যমে একই উপজেলায় পদায়ন নিশ্চিত করেন। অথচ খাদ্য
অধিদপ্তরের নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী দুই থেকে তিন বছরের অধিক কার্যকাল একই
উপজেলায় কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োজিত রাখা যাবে না বলা আছে। এছাড়াএ খাদ্য
অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী জেলা
খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের পদ, নবম গ্রেডভুক্ত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদ।
সিএসডির সহকারী ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপক এবং এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল
কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে নিজ জেলায় নিয়োগ বা পদায়ন করা যাবে
না। আরও বলা হয়েছে, ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডভুক্ত কোনো কর্মকর্তা বা
কর্মচারীকেও নিজ জেলায় নিয়োগ বা বদলি করা যাবে না। তবে কোন খুটির জোড়ে
মোহাম্মদ ওয়াসিম হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা পদে রয়েছেন গত
প্রায় চার বছর ধরে? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে।
অভিযোগের ব্যাপারে হোমনা
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, ‘আমি ঢাকায় সেটেল,
ঢাকার ঠিকানায় আমার চাকরি হয়েছে। হোমনায় আমার পৈতৃক বাড়ি। ২০২১ সালের ৫
অক্টোবর বদলি হয়ে এসেছি।’ অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিলারদের বিষয়ে যে
অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত কমিটি হয়েছে। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভাষানিয়া
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান কুমিল্লার কাগজকে বলেন,
মোহাম্মদ ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি ভাষানিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরে। তাদের
পরিবারের ভাই-বোনদের অনেকেই গ্রামে বসবাস করেন এবং ওনার মা দুইবার স্থানীয়
ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে (মেম্বার) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফেল
করেন। সেও মাঝে মধ্যে গ্রামে আসা যাওয়া করেন।
কুমিল্লা জেলা খাদ্য
নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিত্যানন্দ কুন্ডুকে সাংবাদিকরা ফোন করলে তিনি জানান,
হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম ঢাকার দক্ষিণ
খানের ঠিকানায় চাকরি নিয়েছেন। খাদ্য অধিদপ্তর সেই ঠিকানা অনুযায়ী তাঁকে
হোমনায় পদায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিদপ্তরের নীতিমালায় বলা আছে,
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তা নিজ উপজেলায় পদায়ন পাবেন না। প্রথম
ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তাকে শুধু নিজ উপজেলা নয়; জেলায়ও পদায়ন
করার সুযোগ নেই। আসলে আমরা তো জানি না তাঁর পৈতৃক বাড়ি হোমনাতে কিনা?
আমাদের সব পদায়ন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে হয়। আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান
অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখায় একটু যোগাযোগ করেন।’
এ বিষয়ে জানতে খাদ্য
অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ডি এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে
যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে
হবে। আমি অই কর্তৃপক্ষ না, যিনি এটার দায়িত্বে আছেন–তিনি আজকে ছুটিতে। তিনি
সোমবার অফিসে এলে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারব। এই বিষয়ের নিয়মটি অ্যাডমিন
কর্মকর্তা নীতিমালা দেখে জানাবেন।’