এবছর এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে মানবিক বিভাগে পাশের হার অর্ধেকের চেয়েও কম। মানবিকে পাশের হার মাত্র ৪৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে মানবিকে ছেলেদেও পাশের হার মাত্র ৪৩ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং মেয়েদের পাশের হার ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। পুরো বোর্ডেও ৬ জেলায় ৯ হাজার ৯০২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১৪৩ জন। এর মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে মাত্র ৫ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৮ জন। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তুলনায় সমপরিমান শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও মানবিকে পাশের হার এত কম হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাসরিন জানান, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার তুলনায় মানবিক বিভাগে কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে। যে কারণে ফাইনাল পরীক্ষাতেও এর প্রভাব পড়েছে। যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে পারে না তারাই মানবিকে পড়ে। তাই মানবিকে ফল খারাপ হয়।
মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী এশাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ অভিভাবকদের আগ্রহের কারণে সবাই বিজ্ঞান ও ব্যবসায়ি শিক্ষায় ভর্তি হতে চায়। আর মানবিকে বেশির ভাগই সাবজেকটিভ পড়া হওয়ায় জিপিএ-৫ পাওয়া দুষ্কর হয়। তাই তুলনামূলক ভালো শিক্ষার্থীরা মানবিকে পড়তে চায় না। যে কারনে মানবিকে ফলাফল খারাপ হয়েছে।
কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও শিক্ষক আফরোজা বেগম, বেশির ভাগ ভাগ ভালো শিক্ষার্থীরাই মানবিকে যেতে চায় না। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার পড়াও খুব প্র্যাকটিক্যাল তাই - শিক্ষার্থীরাও চিন্তা করে মানবিকে না যাওয়াই ভালো। তবে মানবিকে পড়ে যে উজ্জ্বল ভবিষ্যত নেই, এমন নয়। যে বিভাগেই পড়া হোক না কেন ভালো ফলাফল করলে সাফল্য আসবেই। তাই মানবিকের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক সবাই সচেতন ভাবে সচেতন হলেও ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব।
কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, যারা মানবিকে পড়েন তারা দুর্বল এমন ভাবা হয়। কিন্তু যারা ভালো পড়ে তারা সব বিষয়েই ভালো ফলাফল করেন। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মানবিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা ভাবে সচেতন হতে হবে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মানবিক বিষয়ে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৫৬ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৪৮০ জন শিক্ষর্থী পাশ করেছে। বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর শামছুল ইসলাম জানান, মানবিকে ফলাফল ধ্বসের প্রভাব পড়েছে মূল ফলাফলেও। মানরবিকে ভালো ছাত্র পড়ে নাকি খারাপ ছাত্র পড়ে সেটা আমলে নেয়ার বিষয় নয়- বরং এই বিভাগে যারাই পড়ে তারা ভালো পড়ছে না কেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। আমি নতুন এসেছি, এবিষয়ে ব্যক্তিগত ভাবে তদন্ত কেের দেখবো।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমি দেখেছি কুমিল্লা বোর্ডেও অনেক ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানবিকে কোন শিক্ষার্থী নেই। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন দুইজন । এরকম কেন হবে ? শিক্ষার্থীরা মানবিকে আগ্রহী না কেন আমরা জানার চেষ্টা করবো।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী কমেছে। ছয় জেলা নিয়ে গঠিত এ শিক্ষা বোর্ডে ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৯০২ জন শিক্ষার্থী। চলতি বছর মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার৫৭২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮১ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের ৮৮ দশমিক ০১, মানবিকে ৪৬ দশমিক ৭৭ এবং বানিজ্য বিভাগে ৫৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। পাসের হার ও জিপিএ -৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে মেয়েরা।