কুমিল্লা
নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক টমছম ব্রিজ-কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও
হাসপাতাল সড়ক। একদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা, অন্যদিকে রাস্তার পাশে ভাগাড়। এমন
ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী চলাচল করতে বাধ্য হয় এই সড়কে।
ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপেও যেন রেহাই পায় না তারা। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা
গেছে, কুমিল্লা টমছম ব্রিজ থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ সড়কের ডান দিকে
ময়লা-আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। সড়ক ঘেঁষে বর্জ্যের স্তূপে কুকুর, বিড়াল,
পশুপাখির আনাগোনা। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, পলিথিন, বস্তা,
ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, উচ্ছিষ্ট খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সড়কের ধারে।
আবর্জনা গড়িয়ে পড়ছে সড়কেও। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সৌন্দর্যও বিনষ্ট
হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জানা গেছে, এ সড়কে প্রতিদিন আদর্শ সদর উপজেলা
পরিষদ, ইপিজেড, কুমিল্লা পিবিআই অফিস, সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন অফিস,
হাইওয়ে পুলিশ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, বাখরাবাদ গ্যাসের প্রধান কার্যালয়, ইবনে
তাইমিয়া স্কুলসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন
অফিসের লোকজনকে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সড়কের বিভিন্ন অংশ দীর্ঘদিন মেরামত
না করায় যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
অপরদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর দায়িত্ব
সময়ে কুমিল্লা ইপিজেডের উত্তর গেটের দেয়ালের পাশে তৈরি করা সৌন্দর্যবর্ধনের
স্থানটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ ভাগাড়ের তীব্র দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির
কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে
দেখা গেছে, সড়কের পাশে উম্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সিটি
করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ সরিয়ে দৃষ্টিনন্দন
ফুলের বাগান, দেয়ালে রং ও পথচারীদের জন্য লাইট লাগানোসহ সৌন্দর্যবর্ধক নানা
স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন এগুলো তদারকি না করায়
সেখানে ময়লার ভাগাড় তৈরি হয়েছে। টমছম ব্রিজের ইবনে তাইমিয়া স্কুলের নবম
শ্রেণীর তিন শিক্ষার্থী আরাফাত, তামজিদ ও রিদোয়ানের কাছে জানতে চাইলে তারা
বলে, ‘আমরা প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করি। যাওয়ার পথে এখানে
এলে বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক চেপে স্কুলে যেতে হয়। এই দুর্গন্ধ অনেক
রোগজীবাণু ছড়ায় ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক দিন থেকে ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে
কেউ পরিষ্কার করছে না।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা শাখার
সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা নগরীর রাস্তার মাথায় ও জনসমাগমের
স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে অবশ্যই
নির্মূল করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর এভাবে নীরব থাকলে হবে না। সারা দেশকে
বর্জ্যমুক্ত ও প্লাস্টিকমুক্ত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে
এখন পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি টেকসই প্রযুক্তি আমরা আনতে
পারিনি। সারা দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে আইনে, কিন্তু তার ব্যবহার এখনো
বন্ধ করা যায়নি। যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়, সেখানে গাছগুলো পর্যন্ত মরে
যায়। আর মানুষের কী অবস্থা হবে! এসব বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর বা
মন্ত্রণালয়ের সারা দেশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে
হবে। তা না হলে এ পরিবেশ দূষণ বাংলাদেশ থেকে দূর হবে না।’ কুমিল্লা সিটি
করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা গত
কয়েক দিন আগে ময়লার ভাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। ইপিজেড গেটের সামনে
একটি বাজার বসানো হয়েছে। বাজারের লোকজন বস্তাভর্তি ময়লা-আর্বজনা ফেলছে।
স্থানীয় রতন নামে এক ব্যক্তি টাকা নিয়ে এ বাজার বসিয়েছেন। এটি সিটি
করপোরেশনের বাজার না। আমরা ঈদের আগেও এগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি।
আমাদের পরিকল্পনা আছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেব।