বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম
দিবস-২০২৫ উপলক্ষে গত রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পাদক পরিষদ কর্তৃক এক
আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সম্পাদক পরিষদের সদস্যরা সংবাদপত্রের
স্বাধীনতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, দেশে বর্তমানে ২৬৬ সাংবাদিকের
বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতাসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গণহারে
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের আক্রমণ (মামলা) স্বাধীন সাংবাদিকতার
পরিপন্থি এবং এটি ভয়ের ব্যাপার। দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক ও
সম্পাদক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, গণমাধ্যম ছাড়া
গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। আমাদের কথা বলতে দিতে হবে, লিখতে দিতে হবে,
প্রশ্ন করতে দিতে হবে। তাহলেই গণমাধ্যম মুক্তির স্বাদ পাবে। বিএনপি মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় বলেন,
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে বেড়েছে।
সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন দেখি কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী আরেকটি
গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে। কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীও সেটির সঙ্গে যুক্ত হয়।
বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক কর্মসূচিও প্রদান করে। আমি জানি না, একটি গণতান্ত্রিক
মুক্ত সমাজে এটা কতটুকু গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে?
বাংলাদেশের
সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার স্বীকৃত
রয়েছে। যে অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যমগুলো তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করবে, এটাই কাম্য।
কিন্তু প্রায় সময়ই এর বিপরীতমুখী অবস্থান লক্ষ করা যায়। গণতন্ত্র ও
গণমাধ্যম একটি আরেকটির পরিপূরক। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেও আমাদের সেই
স্বাধীনতার অনুপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি প্রতিটি ক্ষেত্রে। মতপ্রকাশের
স্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে শুধুই আলোচনা-সমালোচনা হতে
দেখেছি। কিন্তু অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি।
এখনো প্রশ্ন করলে সাংবাদিকদের
চাকরি যায়। সে দেশে আমরা মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করছি। কিন্তু
গণমাধ্যমকর্মীরা মুক্তির স্বাদ পাননি। গণতন্ত্রের চর্চা সফলভাবে দেখতে হলে
গণমাধ্যমে স্বাধীনতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। সাংবাদিকরা যখন তথ্য সংগ্রহ করে
সংবাদ আকারে পত্রিকা বা মিডিয়ায় উপস্থাপন করেন, তখন তিনি
পাঠক-শ্রোতা-দর্শকের কথা মাথায় রেখেই করেন। সে ক্ষেত্রে তিনি কোনো বিশেষ
রাজনীতি বা সরকার ও বিশেষ কোনো ব্যক্তির কথা ভেবে করেন না।
গণমাধ্যমকর্মীদের সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার শক্তি থাকতে হয়। কিন্তু
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় লক্ষ করা যায়। তখন গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে
ধরা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি অনেকটাই উহ্য হতে বসেছে।
সব
সরকারই তাদের নিজস্ব সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করতে ব্যস্ত। তারা সাংবাদিকতার
জায়গাকে নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ফলে মুক্ত সাংবাদিকতার জায়গাটা
অস্বচ্ছ ও কলুষিত হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক চর্চার এই দুরবস্থায়
পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষাগুলো লোপ পেয়ে বসে। রাজনৈতিক ও পেশিশক্তির চাপ, আইনের
অপব্যবহার, হুমকি-ধমকি, অগণতান্ত্রিক আচরণ সবই এই পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের
ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এতে সঠিক সংবাদ উপস্থাপন করাও সহজে সম্ভব হচ্ছে
না। তাই দল-মতনির্বিশেষে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সব পক্ষকে
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের চতুর্থ
স্তম্ভকে রক্ষার দায়িত্ব সবার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের
স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, সেটিই প্রত্যাশা।