পরিস্থিতি
জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ বা হামলা
অবশ্যম্ভাবী। বাস্তবে হলোও তাই। শুরু হয়ে গেছে ভারত-পাকিস্তান হামলা পাল্টা
হামলা।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর ও
পাঞ্জাবে ভারত মিসাইল আক্রমণ করলে শুরু হয় যুদ্ধ। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব
দেয়। দু’পক্ষের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে উত্তেজনা এখন চরমে। প্রাণহানিও
ঘটেছে বেশ।
এমন যুদ্ধে অসহায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তার পরিসংখ্যান নেমে
এসেছে শূন্যের কোটায়। যেকোনো সময় যেকোনো দেশ একে অন্যের ওপর বিমান ও
মিসাইল হামলা করে বসলে হয়তো সামরিকের পাশাপাশি অনেক নিরীহ ও বেসামরিক
মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। এর মধ্যে পাকিস্তানের ২৬ ও ভারতের ১০ জনের
প্রাণনাশের ঘটনা ঘটেছেও।
ভারত ও পাকিস্তানের এ যুদ্ধ-বিগ্রহ শুধু
দু’দেশেই স্থির থাকবে না। আশপাশেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে
পাক-ভারত যুদ্ধের নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও।
একই সাথে
ক্রিকেটীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের সম্ভাবনাও জেগেছে। যেহেতু এরই মধ্যে যুদ্ধ
শুরু হয়ে গেছে, তাই নিকট ভবিষ্যতে বিশেষ করে যুদ্ধাংদেহী অবস্থা ও
উত্তাপ-উত্তেজনা প্রশমিত না হলে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ক্রীড়া,
শিক্ষা, সংস্তৃতি চর্চা বন্ধ থাকবে। দু’দেশ যেসব ক্রিকেট আসরে অংশ নেয়, সেই
এশিয়া কাপ (আয়োজক ভারত, তবে প্রস্তাবিত ভেন্যু আরব আমিরাত এবং শুরুর
সম্ভাব্য তারিখ ১৮ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর) হওয়ার সম্ভাবনাও চলে গেছে শূন্যের
কোটায়।
কারণ ভারত আগেই জানিয়ে রেখেছিল, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ বা
কোনো টুর্নামেন্ট খেলবে না। সেখানে সরাসরি যুদ্ধের পর পাকিস্তানের সঙ্গে
খেলায় অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কাজেই ধরেই নেওয়া যায়, এবারের এশিয়া
কাপের ভাগ্য পুরোপুরি অনিশ্চিত। এছাড়া পাক-ভারত যুদ্বের প্রভাবে সবচেয়ে
ক্ষতিগ্রস্ত হবে ক্রিকেট। ওই দুই দেশের সঙ্গে আশপাশের দেশগুলোর ক্রিকেট
সিরিজ হয়ে উঠবে অনিশ্চিত।
খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন যুদ্ধ চলতে থাকলে আর
খেলা অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সব চেয়ে বিপাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
(বিসিবি)। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বাংলাদেশ। ভাবছেন কী
সেই আর্থিক ক্ষতি?
জেনে নিই, পাক-ভারত যুদ্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে?
প্রথমত,
আগামী মে মাসেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা। সূচিও
চূড়ান্ত। আগামী ২৫ ও ২৭ মে ফয়সালাবাদে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই
টি-টোয়েন্টি হওয়ার কথা। তারপর ৩০ মে এবং ১ ও ৩ জুন লাহোরে বাকি তিন
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে।
এরপর আগামী আগস্টে বাংলাদেশ সফরের সব কিছু
চূড়ান্ত হয়ে ছিল ভারতের। এই সফরে সমান ৩টি করে ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি ম্যাচ
খেলার কথা তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে ওই দুই সিরিজের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।
বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে বাংলাদেশের পাকিস্তান গিয়ে খেলা এবং ভারতের
বাংলাদেশ সফরের প্রশ্নই আসে না। যুদ্ধ বন্ধ হয়ে শান্তি ফিরলেই কেবল ওই দুই
সিরিজ মাঠে গড়াতে পারে।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি ঘোলাটে।
ক্রিকেট সিরিজ আয়োজনের সম্ভাবনা খুব কম। খুব স্বাভাবিকভাবে ওই দুই সিরিজ
থেকে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বিসিবি। বিশেষ করে ভারতের সফর বাতিল হলে
সম্প্রচারস্বত্ব ও নানা স্পন্সর বাবদ মোটা অংকের অর্থ ক্ষতি হবে বিসিবির।
এমন অবস্থায় বিসিবি কী ভাবছে?
বিসিবির
অনুভব ও ভাষ্য কী? এ ব্যাপারে বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাৎক্ষণিকভাবে
এখনই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ তথা উত্তেজনা নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত
করবে না বিসিবি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিসিবি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না
জানিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি অবলম্বনের পক্ষে।
বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন
চৌধুরী সুজন বুধবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখনই পাক-ভারত উত্তেজনার
আলোকে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এখন কথা বলা যুক্তিযুক্তও না। আমরা তথা
বিসিবি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। অবস্থা বুঝে তারপর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা
ভাবছি। ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও নিশ্চয়ই অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের
ভাষ্য জানাবে। সেগুলো আগে জেনে নিই। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া
হবে। এখনই কোনো চরম মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’