কুমিল্লার
প্রবীণ বাউল শিল্পী মোতালেব সরকার (আবদুল মোতালিব) আর নেই। ৫ মে সোমবার
ভোর ৫:১০ মিনিটে কুমিল্লা মেডিক্যাল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০।
সোমবার বাদ আসর জানাজা শেষে লালমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়নের রাঈপুর
গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয় ।
আশির দশকের প্রভাবশালী
এই বাউল শিল্পী কুমিল্লায় পালাগানকে জনপ্রিয় করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি তাঁর সময়কার অত্যন্ত বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কুমিল্লার বারেক সরকার-আনোয়ার
সরকার জুটির পাশাপাশি তিনিও ছিলেন এক অপতিদ্বন্দ্বী পালাকার। সে সময় দেশ
বরেণ্য মাতাল রাজ্জাক থেকে শুরু করে, পাগল বাচ্চু, লীলা পাগলী, আকলিমা
বেগম, আলেয়া বেগম, আশেক সরকারের মত দেশবরেণ্য বাউল শিল্পীদের সাথে জুটিবদ্ধ
হয়ে পালাগান করে বেড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে
নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন।
আশির দশকে বারেক সরকারের “আমার জেলা কুমিল্লা”
গানের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার সময় কুমিল্লায় বাউল গানের চর্চা ব্যাপকভাবে
ছড়িয়ে পড়ে, সে সময় মোতালিব সরকারের “আইলো রে ভাই আষাঢ় মাস” গানটিও বাউলদের
মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে।
গুণী এই শিল্পী ছিলেন একজন সঙ্গীতগুরু। তাঁর
সংগ্রহে ছিল দেশের নানা অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় অনেক লোকগান যা তিনি তার
শিষ্যদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মোতালিব সরকারের বাড়িতে পরম্পরাগতভাবে
বাউল ও মুর্শিদি গানের চর্চা ছিল। দেশের বাউল শিল্পী ও বাদকদের মধ্যে তার
অসংখ্য শিষ্য রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের অনেকেই বাউল গানের
প্রচার-প্রসারে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন। তার দুই পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে
কনিষ্ঠ পুত্র রাসেল দেওয়ান একজন সম্ভাবনাময় গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী।
সদ্য প্রয়াত বাউল শিল্পী দিদার চৌধুরী তাঁর জামাতা।
এদিকে, ৫ মে সোমবার
কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে বৈশাখী নাট্য উৎসবে পালাগান পর্বে বাউল
মোতালিব সরকার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়াও তাঁর মৃত্যুতে
শোক প্রকাশ করেছেন কুমিল্লার বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা
জানিয়েছে মোতালেব সরকারের সন্তানরা। আগামী ৯ মে শুক্রবার রাইপুর গ্রামের
নিজ বাড়িতে মরহুমের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানানো
হয়েছে।