দেড় বছরে পাঁচ
হাজারের বেশি প্রবাসীকে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে
ডিটেনশন সেন্টারে আটক প্রবাসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
লিবিয়ার
বেনগাজী শহরে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে শুক্রবার (২ মে) প্রবাসীদের
অংশগ্রহণে একটি গণশুনানি ও মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান লিবিয়ায় নিযুক্ত
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার।
গণশুনানি
ও মতবিনিময় সভায় স্থানীয় প্রশাসনের মহাপরিচালক, দূতাবাসের মিনিস্টার
(রাজনৈতিক) এবং মিনিস্টার (শ্রম) উপস্থিত ছিলেন। সভায় আড়াই শতাধিক প্রবাসী
অংশগ্রহণ করেন এবং তারা তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে
ধরেন। বিশেষভাবে ই-পাসপোর্ট চালু, প্রবাসীদের নিরাপত্তা, অবৈধ অভিবাসন
প্রতিরোধ, বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানো, স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তন,
আকামা (ভিসা) এবং বহির্গমন ভিসা (খুরুজ নিহায়ী) সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা হয়। উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয় দূতাবাস ও স্থানীয় প্রশাসনের
পক্ষ থেকে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সেগুলোর কার্যকর সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রদূত
বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সম্মান ও কল্যাণ
নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি প্রবাসীদের কষ্টার্জিত
রেমিট্যান্সকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন,
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে এবং কনস্যুলার
সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরন্তর কাজ করছে।
তিনি প্রবাসীদের
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং জানান, লিবিয়ায় ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য
দূতাবাসের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের
জুলাই-আগস্টের মধ্যে এই সেবা চালু হবে। ততদিন ই-পাসপোর্ট হারালে দূতাবাস
থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার
কপি সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, প্রবাসীদের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দূতাবাস ইতোমধ্যে বেনগাজীর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে
বৈঠক করেছে এবং প্রবাসীদের সমস্যা সরাসরি শুনতে মহাপরিচালক সভায় উপস্থিত
হয়েছেন। তিনি অবৈধ অভিবাসনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলেন, এটি শুধু
প্রবাসীদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক
ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি বিভিন্ন দুর্ঘটনার উদাহরণ দিয়ে
প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদেরও এ বিষয়ে সচেতন করার আহ্বান জানান।
আইওএম-এর
সহায়তায় স্বেচ্ছায় দেশে গমনে আগ্রহীদের ফেরত পাঠাতে দূতাবাস সক্রিয়ভাবে
কাজ করছে বলে রাষ্ট্রদূত জানান। গত দেড় বছরে পাঁচ হাজারের বেশি প্রবাসীকে
দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ডিটেনশন সেন্টারে আটক প্রবাসীদের
অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন পাসপোর্টে দুখুল এবং আউটপাসের ক্ষেত্রে
লিবিয়ার জাওয়াজাতের লস্ট সার্টিফিকেট না থাকায় খুরুজ প্রাপ্তিতে জটিলতা
সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টির সমাধানে দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক
বৈঠক করেছে এবং বর্তমানে ২৪৬ জন অভিবাসীর খুরুজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, আইওএম-এর কাছে নিবন্ধিত সব প্রবাসীকে দ্রুত
দেশে প্রেরণ সম্ভব হবে।
সভায় প্রবাসীদের হুন্ডি এড়িয়ে বৈধ পথে, বিশেষ
করে লিবিয়ার অবস্থা বিবেচনায় স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে
রেমিট্যান্স পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে অনেক
প্রবাসী বাংলাদেশে মানবপাচারের মামলার শিকার হয়েছেন বলে সতর্ক করা হয়। এ
ছাড়া, লিবিয়ায় কর্মরত প্রতিটি প্রবাসীকে বৈধভাবে আকামা সম্পন্ন করার জন্য
উৎসাহিত করা হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের মহাপরিচালক প্রবাসীদের প্রশংসা করে
বলেন, বাংলাদেশিরা লিবিয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবাখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান
রাখছেন। তাদের কর্মদক্ষতা ও বিশ্বস্ততার জন্য লিবিয়ার জনগণের মধ্যে
ইতোমধ্যে আস্থা অর্জিত হয়েছে। তিনি বেনগাজীসহ পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশিদের
অবদানের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে তাদের সমস্যা শুনেছেন এবং
উত্থাপিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধানে আশ্বাস দেন।
দূতাবাস মনে করে,
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার ফলে এই গণশুনানি আরও ফলপ্রসূ
হয়েছে। প্রবাসীরা সরাসরি দূতাবাসের কার্যক্রম ও সমস্যা সমাধানে নেওয়া
উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই ধরনের আয়োজন প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা
বৃদ্ধি করবে এবং দূতাবাসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে বলে প্রত্যাশা
করা হচ্ছে। উপস্থিত প্রবাসীরা এই আয়োজনের জন্য দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান
এবং ভবিষ্যতেও এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।