নিজস্ব প্রতিবেদক: আমি চাঁদাবাজদের ভোট চাই না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা সদর-৬ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেছেন, চাঁদাবাজি,ধান্দাবাজি নিয়ন্ত্রণের কাজ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নয়। আমার দলের নেতাকর্মীদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে।এই বিষয়গুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমি প্রশাসনকেও অবগত করেছি। অনিয়মে যদি আমার ঔরসজাত সন্তানও হয়- ছাড় দিবেন না, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের হেফাজতে দিবেন।এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর।
আগামী নির্বাচনে আপনি অংশ নিলে চ্যালেঞ্জ কতটুকু? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যেভাবে জনগণের সাথে মিশে সংগঠনকে যেভাবে গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে আমার বিশ্বাস জনগণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমাদেরকে ক্ষমতায় আনবে। আর বাংলাদেশ হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করবে।
দৈনিক কুমিল্লার কাগজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাজী ইয়াছিন এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আমি এমপি নির্বাচিত হলে আমার পরিবার থেকে কেউ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে মনে হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন-অর রশিদ ইয়াছিন বলেন, গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আমলের কথাগুলো স্মরণ করলে চোখে পানি এসে পড়ে। আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক। বিএনপির এমনও কর্মী আছে যার বিরুদ্ধে ৬৫ টি মামলা হয়েছে। মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ৩০ দিনই আদালত বসতো তাহলে প্রতিদিন ২ টা মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে তাকে আদালতের বারান্দা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ ছিল না। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের তুলে নানা জুলুম নির্যাতনের পরেও একটি আন্দোলন থেকেও পিছু হটেনি। জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। আমার মত লোকেও সেই জুলুম নির্যাতন থেকে রেয়াই পাইনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিশ্বরোড এলাকায় একটি বাস পোড়া মামলায় আসামি করা হয়েছিল।
বিএনপির এ সুসময়ে অনেকের আনাগোনা বেড়েছে কিনা? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুবিধাবাদী একটা গোত্র থাকবে। যুগে যুগে ছিল এখনো আছে, হয়তো আগামীতেও থাকবে। বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুবিধাবাদীদের বিষয়ে সচেতন। আনাগোনা বেড়েছে এটা সত্য কথা। আমার নির্বাচনী এলাকার ওয়ার্ড সম্মেলন গুলো শেষ হয়েছে। ৫৪ টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড সম্মেলন করেছি একেবারেই নিজেই উপস্থিত থেকে। সরাসরি স্থানীয় বিএনপির ভোটারদের ভোটেই নেতৃত্ব আমরা মাঠ পর্যায়ে থেকে তুলে নিয়ে এসেছি নির্বাচনের মাধ্যমে। ওই ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দের ভোটে হবে ইউনিয়ন কমিটি সরাসরি ভোটে। ইউনিয়নের ভোটে হবে উপজেলা কমিটি। এর মাধ্যমে আগামীতে সুবিধাবাদীরা কোনভাবেই সুবিধা করতে পারবে না।
কুমিল্লা সদর আসনে বিএনপি চাঙ্গা ভাব তৈরি হওয়ার পেছনের কারণ কি? প্রশ্নের জবাবে হাজী ইয়াছিন বলেন, পরিশ্রম! এই সমাজকে ভালো কিছু দেওয়ার জন্যই আমার রাজনীতিতে আসা। রাজনীতি আমার পেশা না। কুমিল্লার মানুষ অনেক সচেতন, বিশেষ করে কুমিল্লা সদর উপজেলার। এটি একটি মহানগর। এখানে শিক্ষার হার অন্যান্য উপজেলা তুলনায় অনেকটা বেশি। একই সঙ্গে সচেতন মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলক হারে বেশি। যার কারণে আমার উদ্দেশ্যটা মানুষ সহজেই বুঝতে পারছে। কারণ আমার উদ্দেশ্য সমাজ এবং মানুষের জন্য ভালো কিছু করা। এ কারণে হয়তো মানুষ বিএনপিতে বেশি ঝুঁকছেন। দলীয়ভাবে যদি মানুষ চিন্তা করে তাহলে বলব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলকে বলা হয় স্বর্ণযুগ। দীর্ঘদিনের জুলুম-নির্যাতনের পরে মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছেন আরো একটি স্বর্ণযুগের। আমি বিএনপির একজন কর্মী হয়ে যখন আমি গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছি কথা বলছি বক্তব্য দিচ্ছি তাই হয়তো মানুষ আমার কথাগুলোর সঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই স্বর্ণযুগকে মিলিয়ে নিচ্ছেন। তারা ভাবছে সামনে হয়তো তারা আরেকটি স্বর্ণযুগ পাবে সে স্বপ্ন দেখছে।
আগামী নির্বাচন কবে হলেই ভালো প্রশ্নের জবাবে হাজী ইয়াছিন বলেন, দেশটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্রের পক্ষের কোন দেশের জনগণ যখন থাকে, তখন এর সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো জনগণের ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করা। সেটি হলো ওই দেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকর। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস একটি কঠিন সময় এসে হাল ধরেছেন। জনগণ যেমন বিশ্বাস করে আমরাও ঠিক তেমনি বিশ্বাস ভাবে বিশ্বাস করি। তবে আগামী নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেই নিয়ে আসা উত্তম হবে। ডিসেম্বরের পরে যাওয়া আমার দল ও আমি কোন কারন দেখি না। নির্বাচন যত পেছানো হবে, মানুষের মধ্যে তত ধোঁয়াশা তৈরি হবে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনটি দিয়ে জনগণের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যদি সরকার পরিচালিত হয় তাহলে তাদের জবাবদিহিতা অনেক বেশি থাকে। আমি মনে করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনটা দিয়ে দেওয়াই উত্তম হবে।
নির্বাচনের প্রার্থীতা নিয়ে হাজী ইয়াছিন বলেন, কুমিল্লা সদর আসন বরাবরের মতোই বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা বছরের পর বছর ধরে। এই কুমিল্লার স্থানীয় একজন বাসিন্দা আমি। এখানে অনেক শিল্প কারখানার মাধ্যমে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি করেছি। শিল্প কারখানা স্থাপনের পর থেকে এখানে পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারী শ্রমিক ও কাজ করেছে এখনো কাজ করছে। আমি একেবারেই মানুষের দুঃসময়ে তাদের কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি করেছি। আশা করি এটা কুমিল্লার মানুষ মনে রাখবে। গেল ১৮ নির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছি। ওই নির্বাচনে যদি আমার পোলিং এজেন্টরা ভোটগুলো বনে নিয়ে আসতে পারতো আমি নিশ্চিত ছিলাম আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করতাম। মানুষ অপেক্ষা করছে আমার বিশ্বাস আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য।
তিনি, কোন অন্যায়কারী আমার ধারে কাছে ঘুরে না। ঘুরার সুযোগও পায় না। মানুষ শান্তি ও সুন্দর পরিবেশ চায়। মানুষ চায় অতীতের সেই পুরনো কুমিল্লা। কুমিল্লা মানেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যাংক ও ট্যাংকের, পরিস্কার শহর। মানুষ বিশ্বাস করে আমিও স্বপ্ন একটাই জনগণের ভোটে যদি নির্বাচিত করে তাহলে সে অতীতের পুরনো কুমিল্লাকে ফিরিয়ে নিতে চাই।
আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপনার পরিবার থেকে কেউ কি প্রার্থী হতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাজী ইয়াছিন বলেন, আমার পরিবার বলতে আমার দুই ছেলে। আমি যে রাজনীতি করি সেটা তারা পছন্দ করেন না। যদি পরিবার বলতে আমার ছেলেদের বুঝাই সেটার জিরো পার্সেন্টও সম্ভাবনা নেই। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেও আমার কাউকে মনে হয় না। তার কোন সম্ভাবনাও আমি দেখছি না। মানুষ যদি আমাকে তাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন, এরপরে আবার নতুন করে কেউ মেয়রে যদি যেতে হয়? আমার মনে হয় না এমন কোন সম্ভাবনা আছে।
আপনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরেও কি চাঁদাবাজির উৎসব থাকবে? প্রশ্নের জবাবে হাজী ইয়াছিন বলেন, চাঁদাবাজির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স। আমি পরিশ্রমী মানুষ আমি পরিশ্রম করে ভাত খাই। চাঁদাবাজি একটা ডিজিজ এবং রোগ। চাঁদাবাজ তখনই জন্ম হয় যখন চাঁদাবাজকে রক্ষা করার মত শক্তি চাঁদাবাজির উপরে ছায়া হিসেবে থাকে। আমি এই সংস্কৃতির শতভাগ বিরোধী মানুষ। জীবনের চাঁদাবাজির কোন ইতিহাস নেই। আমি চাঁদাবাজ ও অন্যায় দূর করে একটি পরিষ্কার কুমিল্লা গড়তে চাই । যে কুমিল্লায় মানুষ বেড়াতে আসবে। আমি সেই কুমিল্লা চাই।
তিনি বলেন চাঁদাবাজি আমার আপনার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক জিনিস। এই চাঁদাবাজি থামাতেই হবে। একজন মেধাবী সন্তান নষ্ট হয়ে যাবে ওই চাঁদাবাজির পাল্লায় পড়ে। তাই আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব নিতে হবে চাঁদাবাজি বন্ধে।
এমপি লোকজন থেকে নির্মাণ সামগ্রী কেনার যে প্রচলন ছিল আপনি এমপি হলে সে দ্বারা কিভাবে রুখবেন? জবাবে হাজী ইয়াছিন বলেন, আমি এমপি হলেও সে এমপি হব না। আমি এমপি হলে আমার সাথে থেকে নির্মাণসামগ্রী বিক্রির জন্য ধান্দা করবে? তাহলে আমি বলবো আমাকে ভোট দিবেন না। আমি চাঁদাবাজদের ভোট চাই না। এ প্রচলন তো হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজ। এই বিষয়গুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমি প্রশাসনকেও অবগত করেছি এবং আমার দলের নেতাকর্মীদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে। অনিয়মে যদি আমার ঔরস জাতের সন্তানও হয় ছাড় দিবেন না, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের হেফাজতে দিবেন। চাঁদাবাজি,ধান্দাবাজি নিয়ন্ত্রণের কাজ রাজনীতি ব্যক্তিদের নয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর।
সম্প্রতি কুমিল্লা জুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে একটা লুকায়িত শক্তি কাজ করে। এ লোকেই তো শক্তিযেই হোক। ইনশাল্লাহ নির্বাচন হোক, দেখবেন কিশোর গ্যাং তো যাবেই লুকায়িত শক্তিও কুমিল্লা থেকে চলে যাবে।
আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপি কোন জোটে যাচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে হাজী ইয়াছিন বলেন, দলের নীতিনির্ধারকরা ভালো বলতে পারবেন। তবে বলবো রাজনীতি সব সময় আলোচনার বিষয়।
কুমিল্লা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে হাজী ইয়াছিন বলেন, এক কুমিল্লা ঐতিহ্যের কুমিল্লা। এ কুমিল্লা শিক্ষা ও সংস্কৃতির জেলা। এখানে অনেক নামিদামির ব্যক্তির জন্ম। যারা শুধু বাংলাদেশ নয় পাক ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে ভূমিকা রেখেছেন। তাই কুমিল্লায় এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যে অতীত কুমিল্লাকে ফিরে পাবে কুমিল্লার মানুষ।