শনিবার ২১ জুন ২০২৫
৭ আষাঢ় ১৪৩২
রমজানে মা-বাবার খেদমত অন্যতম ইবাদত
প্রকাশ: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫, ১:৪৩ এএম |


পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করে। রমজান যেমন নাজাতের মাধ্যম, পিতা-মাতা তেমনি জান্নাতের বাহন। যারা পিতা-মাতার খেদমত থেকে বঞ্চিত হলো, তারা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত হলো।
রমজান মাস ইবাদতের মাস, পিতা-মাতার খেদমত অন্যতম ইবাদত। মিরাজ রজনীতে নামাজ ও রোজা ফরজ হয় এবং মিরাজের ১৪টি সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা ও দ্বিতীয় হলো পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
‘রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ কেউ কেউ মনে করেন, রহমতের এ দোয়াটি মৃত মা-বাবার জন্য। দোয়াটির অর্থ হচ্ছে, ‘আমার প্রতিপালক! বাবা-মায়ের ওপর দয়া করো, যেভাবে ছেলেবেলায় বাবা-মা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’
মা-বাবার জীবিত থাকা অবস্থায়ও এই দোয়াটি পড়া যায়। মূলত ইসলাম মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন। তোমার জীবদ্দশায় ওঁদের একজন বা দুজনই বার্ধক্যে পৌঁছালেও তাঁদের ব্যাপারে “উহ-আহ্” বোলো না, আর ওঁদের অবজ্ঞা কোরো না, ওঁদের সঙ্গে সম্মান করে নম্রভাবে কথা বলবে। তুমি অনুকম্পার সঙ্গে, বিনয়ের ডানা নামাবে, আর বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ওঁদের ওপর দয়া করো, যেভাবে ছেলেবেলায় ওঁরা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)
সব অবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক লোক এসে প্রশ্ন করলেন, আমার কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো আচরণ পাওয়ার অধিকার কার? নবী করিম (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবার প্রশ্ন করলে তিনি একই উত্তর দেন। তিন-তিনবার এমন উত্তর দেওয়ার পর লোকটি আবার একই প্রশ্ন করেন। নবী করিম (সা.) বলেন, তোমার বাবার। (বুখারি, হাদিস, হাদিস: ২,২২৭)
কোরআনে আছে, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে (ভালো ব্যবহারের) নির্দেশ দিয়েছি। কষ্টের পর কষ্ট করে জননী সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়াতে ছাড়াতে দুই বছর লেগে যায়। তাই আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার ওপর কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেই তো প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৪)
কোরআনে আরও আছে, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি, তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করতে বাধ্য করে, যার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (করতে হবে)। তারপর তোমরা ভালোমন্দ যা কিছু করেছ, আমি তা তোমাদের জানিয়ে দেব।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাতা-পিতার রাজি-খুশির মধ্যেই আল্লাহর রাজি-খুশি। মাতা-পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (সুনানে তিরমিজি)
অন্য একটি হাদিসে আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। তা হলো ক. মজলুমের দোয়া, খ. মুসাফিরের দোয়া এবং গ. সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া।’ (সুনানে তিরমিজি)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বাবা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছা, এর হেফাজত করো অথবা একে নষ্ট করে দাও।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১,৯০১)
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, কোন আমল মহান আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়? রাসুল (সা.) বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা। তিনি বললেন, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, তারপর? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৭০)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তোমার বাবা-মা কি জীবিত? সে বলল, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি তাদের খেদমতে জিহাদ করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৫৪৯)
তিনটি জিনিস দেখলে সওয়াব হয়। যথা: কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও পিতা-মাতার চেহারা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি)।


রোজা নিয়ে প্রচলিত যেসব ভুল ধারণা
শুরু হয়েছে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম রোজা। ইমান, নামাজ ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। আরবি ভাষায় রোজাকে সাওম বলা হয়, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা।
স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ আর বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে মুসলমানরা এ মাসে নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এই এক মাস সারাদিন পানাহারে বিরত থেকে রোজা রাখেন।
আপাতদৃষ্টিতে রোজা সহজ এবং সাধারণ একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয় হলেও এটি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত, যেগুলো নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এরকম কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা সম্প্রতি কথা বলেছে যুক্তরাজ্যের অ্যাডভান্সড ইসলামি বিজ্ঞান এবং শারিয়া আইনের ছাত্র শাব্বির হাসানের সঙ্গে। নিচে সে বিষয়ে তুলে ধরা হলো:
দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়
অনেকের ধারণা, পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদদের ভাষ্যমতে, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। এ বিষয়ে শাব্বির হাসান বলেন, “অনেক মানুষ অতি সাবধানী।”
এমন মানুষদের জন্য পরামর্শ দিয়ে শাব্বির হাসান বলেন, “সবচেয়ে ভালো হয় অল্প পরিমাণ পেস্ট নিন। মিন্টের গন্ধ কম, এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন।” ভয় পেলে, গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না
অনেক মানুষ মনে করেন, মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা ভঙ্গ হয়। তবে শাব্বির হাসান সবাইকে আশ্বস্ত করে জানান, মুখের লালা পেটে ঢুকলে কোনো অসুবিধা নেই।
শাব্বির হাসান বলেন, “মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এ বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙে না।”
তবে অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোজা পালনের সময় আপনি আপনার সঙ্গীকে চুম্বন করতে পারবেন না, অন্তরঙ্গ হওয়া যাবেনা। মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার আকাক্সক্ষাকে সংযত করা। সে কারণেই খাবার, পানীয় বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে।”
শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে
শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙে যাবে বলে অনেকে মনে করেন। তবে আরও কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শাব্বির হাসান বলেন, “কিছু অপরাধ জিহ্বা দিয়ে হয়...আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।”
অসাবধানতাবশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়
কেউ যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলে তিনি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দেন, তাহলেও তার রোজা বৈধ থাকবে। কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি খেয়ে ফেলেন, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ এ ভুল এড়ানো সম্ভব।
শাব্বির হাসান বলেন, “রোজা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনার কারণে রোজা রেখে ওজু করার সময় গারগল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।”
ওষুধ সেবন করা যাবে না
আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সঙ্গেদেওয়া যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) বলেছে, রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে।
চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ। সেহরির আগে এবং ইফতারের পর তা খেতে হবে।
শাব্বির হাসান বলেন, “প্রথম কথা আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কি-না? কোরআনে পরিস্কার বলা আছে, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।”
যেকোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে
ইসলামে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ব্যক্তির ওপর রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। এমসিবি জানায়, শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক না।
শাব্বির হাসান বলেন, “যদি কেউ অল্প সময়ের জন্য অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙা রোজাগুলো পূরণ (কাযা) করে নিতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন সদকায়ে ফিতর পরিমাণ দান করে ফিদিয়া আদায় করতে হবে।”












সর্বশেষ সংবাদ
ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু
জেলা পুলিশের বক্তব্যঃ অপপ্রচার না করার অনুরোধ
দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে -মনিরুল হক চৌধুরী
সিএনজি ড্রাইভার আলম মিয়া র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার
হোটেলে যাওয়া হলো না নাছির উদ্দিনের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু
কুমিল্লার ১৪৯ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার
মডার্ন হাই স্কুলের শিক্ষক প্রবীর রঞ্জনসহ গ্রেপ্তার ৭
গোমতী নদীর বেঁড়িবাঁধের ওপরউচ্ছেদ অভিযান
এলএনজি সরবরাহ বন্ধে কুমিল্লায় গ্যাস তীব্র সংকট, ৫ লাখ গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২