শনিবার ২১ জুন ২০২৫
৭ আষাঢ় ১৪৩২
কুমিল্লায় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু
রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে টানাটানি
তানভীর দিপু।।
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫, ৭:০৩ পিএম |

কুমিল্লায় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুকুমিল্লার মুরাদনগরে গতকাল বৃহস্পতিবার ৭০টি ইয়াবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে শেখ জুয়েল (৪৫) নামে এক ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন। নিহত জুয়েল উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের শেখ বাড়ির প্রয়াত শেখ গোলাম সারোয়ারের ছেলে। তার ওই এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ব্যবসা ছিল। তবে নিহত জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম অভিযোগ করছেন, পুলিশ নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে জুয়েলের।
 তিনি বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন। তার ভাই বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে পূর্বের বিভিন্ন সময়ে যুবলীগের রাজনীতির সাথেও জুয়েলের সম্পৃক্ততার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।  পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বাঙ্গরা এলাকা থেকে পাঁচজনকে মাদক সেবনের সময় গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৭০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের থানায় নেওয়া হয়। থানায় আনার পর শেখ জুয়েল অসুস্থবোধ করলে তাকে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে জুয়েলকে হাসপাতাল নিয়ে আসে। জুয়েলকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, 'শেখ জুয়েল একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। তার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন। তবে থানা পুলিশের প্রতি যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেটি ঠিক নয়।  আমাদের থানায় প্রতিটি সিসি ক্যামেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে সেটি দেখলেই বলা যাবে। জুয়েলের হৃদরোগের হিস্ট্রিও রয়েছে। '
তবে জুয়েলের বিরুদ্ধে থানায় কোন মাদকদ্রব্য আইনে মামলা কিংবা অভিযোগ নেই বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান। 
শেখ জুয়েলের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল-আমিনের নেতৃত্বে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি (এসআই আল-আমিন) জানান, জুয়েলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আটক করার পর শেখ জুয়েলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী শিল্পী বেগম। তিনি বলেন, গতকাল দুপুরের পর জানতে পারি, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। থানায় গিয়ে দেখা করি। তিনি সুস্থ ছিলেন। আমাকে বলেন, “আমি কিছু করিনি, আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা কর।” এরপর খবর পাই তিনি মারা গেছেন। একজন সুস্থ মানুষ এভাবে মারা যেতে পারে না। তাকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে।’
এদিকে পুলিশ হেফাজতে শেখ জুয়েলের মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামনে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। তবে জুয়েলের মৃত্যুর পর তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে টানাটানি।  বিএনপি নেতা ও সমর্থকরা বলছে বর্তমানে জুয়েল বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে মুরাদনগর উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে বলা হচ্ছে জুয়েল যুবলীগ কর্মী ছিল। 
তবে জুয়েলের মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল রাতে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেনের (কায়কোবাদ) ছোট ভাই কাজী শাহ আরফিন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মুরাদনগরের বাঙ্গরা থানায় পুলিশের হেফাজতে বিএনপির একজন কর্মী নিহত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না। একটি স্বাধীন দেশের থানায় বিনা অপরাধে এভাবে একজন নাগরিকের মৃত্যু শুধু অমানবিকই নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অপব্যবহার ও দমননীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ন্যায়বিচারের নামে যদি মানুষ হত্যা হয়, তাহলে সেটাকে বিচার নয়, বর্বরতা বলা হয়। এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক পরিচয়ের শাহেদুল আলম শাহেদ নামে এক ব্যক্তি জুয়েলের মৃত্যু সম্পর্কে ফেসবুক পোস্টে লিখেন, 'বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ হেফাজতের যুবদল নেতা রুবেলের বড় ভাই বাঙ্গুরা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জুয়েলের মৃত্যু। মুরাদনগর উপজেলার বাংগড়া বাজার থানার বাংগড়া গ্রামের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী ও বাংলা ইউনিয়ন যুবলীগের ৩ নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ জুয়েল পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হওয়ার পর  তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ আনলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।  নিহত জুয়েলের স্ত্রী বারবার চেষ্টা করেও তাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়।  তিনি আরো দাবী করেন তার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় কোন রকমের মামলা ছিল না।  তার পরেও পুলিশ নির্যাতনের জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে।  তিনি অনতিবিলম্বে দোষী পুলিশের শাস্তি দাবি করেন।'












সর্বশেষ সংবাদ
ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু
জেলা পুলিশের বক্তব্যঃ অপপ্রচার না করার অনুরোধ
দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে -মনিরুল হক চৌধুরী
সিএনজি ড্রাইভার আলম মিয়া র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার
হোটেলে যাওয়া হলো না নাছির উদ্দিনের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু
কুমিল্লার ১৪৯ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার
মডার্ন হাই স্কুলের শিক্ষক প্রবীর রঞ্জনসহ গ্রেপ্তার ৭
গোমতী নদীর বেঁড়িবাঁধের ওপরউচ্ছেদ অভিযান
দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে -মনিরুল হক চৌধুরী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২