ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত আপাতত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বুধবার এই যুদ্ধ ষষ্ঠ দিন পার করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
আর তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বিশ্ববাণিজ্যে। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে ১০ ডলারের বেশি। বাড়ছে পরিবহন ব্যয়। আর তার প্রভাব পড়ছে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যে।
বিমান পরিবহনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের এই আকাশপথও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে ঘুরপথে বিমান পরিচালনা করতে হচ্ছে অনেক এয়ারলাইনসকে। এতে সময় ও খরচ দুটিই বেড়েছে।যুদ্ধের অবসান বা যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিনিয়ত পাল্টাপাল্টি হামলা হচ্ছে। রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, কিন্তু ইসরায়েল তাতে সম্মতি দেয়নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অবিলম্বে তেহরান ফাঁকা’ করার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় সেখানকার নাগরিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তেহরানে প্রায় এক কোটি মানুষ বসবাস করে।
তারা কোথায় যাবে। অপেক্ষাকৃত ধনী ও সচ্ছল ব্যক্তিরা অন্য কোথাও যেতে পারলেও বেশির ভাগ মানুষের সেই সংগতি নেই। ট্রাম্প এমনও বলেছেন, ‘ইরানের আকাশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে, খামেনি কোথায় আছেন জানি, কিন্তু এখন মারব না।’ ট্রাম্পের এমনই আরো কিছু বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, এ ধরনের মন্তব্য করে ট্রাম্প বস্তুত ‘আগুনে ঘি ঢালছেন’। তাঁর মতে, এ ধরনের বক্তব্য সংঘাতকে আরো তীব্র ও বিস্তৃত করবে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। আর তেমনটি হলে ইরানের সমর্থনে রাশিয়া ও চীন এগিয়ে আসতে পারে। সেটি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাকেই প্রবল করবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলমান। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব এবং অবরোধের কারণেও বিশ্ববাণিজ্য ধুঁকছে। তার পরে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ। আর এখন ইসরায়েল-ইরান ব্যাপকতর পাল্টাপাল্টির কারণে বিশেষজ্ঞদের ধারণা বিশ্ববাণিজ্যে অনেক বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বিশ্বব্যাপী যত জ্বালানি তেল পরিবহন হয়, তার ২০ শতাংশের মতো পরিবহন হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। সেটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের কারণে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলো যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে তারও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে জ্বালানির ওপর।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এই যুদ্ধের অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি ব্যাহত হতে পারে। আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে। শিল্প, কৃষি, পরিবহন নানা ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে পারে। প্রভাব পড়তে পারে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে থাকা শ্রমবাজারে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে ইরানে এক হাজার ৪০০ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় কমে যেতে পারে। এই অবস্থায় নতুন কর্মী প্রেরণও ব্যাহত হতে পারে। শুধু জ্বালানি তেল নয়, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে। ফলে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।
আমরা চাই, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ হোক। জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের এ ক্ষেত্রে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাব কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, সে ব্যাপারে এখন থেকেই পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।