বৃহস্পতিবার
ভোর থেকেই কুমিল্লাজুঁড়ে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাসাবাড়ি থেকে
হোটেল, রেঁস্তোরা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং শিল্প, কারখানায় গ্যাস সরবরাহ
একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নায় দিনভর চরম ভোগান্তিতে
পড়েন মানুষ। রান্নাবান্না করতে না পেরে বাসিন্দারা বিভিন্ন হোটেল ও
রেঁস্তোরায় চড়া দামে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেছে লাইনে দাঁড়িয়ে। সেখানেও
ভোগান্তির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে গ্যাস সংকটে বিপাকে পড়েন
সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সিএনজি চালিত বিভিন্ন পরিবহনের চালক। গ্যাস সংকটে
তৈরি হয় দীর্ঘ লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার পর গ্যাস না পেয়ে চালকদের
হতাশ হয়ে ফিরতে দেখো গেছে। এছাড়াও গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে জ্বালানি
গ্যাসের উপর নির্ভর কুমিল্লা ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরীসহ জেলার বিভিন্ন ছোট,
বড় শিল্পকারখানায় পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। কুমিল্লায় বাখরাবাদ গ্যাস
ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প
খাতে সর্বত্রই একই ভোগান্তি। বিশেষ করে কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের
এলাকাগুলোতে এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
তবে কুমিল্লার বাখরাবাদ
গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিপণন বিভাগ জানায়, গ্যাসের এ সংকট
বৃহস্পতিবার নয়, বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার গ্যাস
সংকটের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করে কুমিল্লায়। মূলত বঙ্গোপসাগরের উত্তাল
ঢেউয়ের কারণে চট্টগ্রামের মহেশখালীতে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস)
সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখো দেয়। উত্তাল
ঢেউয়ের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বোঝাই কার্গো জাহাজগুলো সরবরাহ
কেন্দ্র পর্যন্ত ভিড়তে না পারায় চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। তবে
সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলেই গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেই এক সংকট কেটে যাবে।
সে জন্য শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, বাগিচাগাঁও, রাজগঞ্জ,
পুলিশ লাইন, অশোকতোলা, ছোটরা, আশ্রাফপুর, চর্থা, মুন্সেফবাড়িসহ নগরীর
প্রত্যেকটি আবাসিক এলাকার বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংকট তৈরি হয়। একই অবস্থার
দেখা দেয় শহরতলীর আশাপাশ এবং উপজেলা শহরগুলোতেও।
গস্যার সংকটের কারণে
মানুষ লাড়কির চুলায় রান্নার কাজ সারতে দেখা গেছে। আর যাদের লাড়কির চুলা নেই
ওই সকল বাসিন্দাদের লাইনে দাঁড়িয়ে হোটেল ও রেঁস্তোরা থেকে খাবার সংগ্রহ
করতে হয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, হঠাৎ গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
চুলায় এক ফোটা আগুনও জ্বলছে না। তাই বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার সংগ্রহ
করতে গিয়ে সেখানেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত দামে
খাবার কিনতে হয়েছে। হোটেল মালিকরা সংযোগ বুঝে বাড়তি দামে খাবার বিক্রি
করেন।
অন্যদিকে গ্রাস সংকটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক,
কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর ও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের
পাশসহ জেলার সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা দেয় গ্যাসে চালিত
বিভিন্ন পরিবহনের।
চালকরা জানান, গ্যাস ছাড়া তেলে গাড়ি চািলানো সম্ভব না। কারণ তেলে দাম অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়ে গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
কুমিল্লার
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লিমিটেডের বিক্রয় প্রকৌশলী মো.
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির
প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে সর্বত্রই একই
ভোগান্তি। বিশেষ করে কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে এই সংকট তীব্র
আকার ধারণ করেছে। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে চট্টগ্রামের মহেশখালীতে
এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লায়
গ্যাসের তীব্র সংকট দেখো দেয়। আশা করছি শুক্রবার সকাল কিংবা শুক্রবারের
মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ আবারও স্বাভাবিক হবে।