আবু হোরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা সময়কে গালি-গালাজ করো না। কারণ, আল্লাহ স্বয়ং সময়। (সহিহ মুসলিম:
২২৪৬)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তারা যুগ বা কালকে গালি দেয়, অথচ আমিই
যুগ বা কাল। আমার হাতেই কালের পরিবর্তনের ক্ষমতা। দিন-রাত্রির পরিবর্তন
আমিই করে থাকি। (সহিহ বুখারি: ৪৮২৬)
এই হাদিসগুলোর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী
(রহ.) বলেন, ‘আল্লাহই সময়, যুগ বা কাল’ এই কথাগুলো হাদিসে রূপক বা প্রতীকী
অর্থে বলা হয়েছে। আরবরা কোনো বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, মৃত্যুবরণ, বার্ধক্য,
ধনসম্পদের ক্ষতি বা এ ধরনের কোনো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে কাল বা সময়কে
গালমন্দ করত। যেমন বলত, ‘ধিক এই সময়কে!’ ‘অশুভ সময়!’ ইত্যাদি।
তাই
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সময়কে গালি দিও না, আল্লাহই তো সময়।
অর্থাৎ, তোমরা সেই সত্তাকে গালি দিও না যিনি বিপদাপদ ঘটান। যখন তোমরা
বিপদের জন্য সময়কে গালি দাও, তখন সেই গালি আসলে আল্লাহর ওপর পড়ে যায় — কারণ
তিনিই এসব ঘটনার মূল কর্তা ও সৃষ্টিকর্তা। কাল বা সময় নিজে কোনো কাজ করে
না। বরং সেটিও আল্লাহর সৃষ্ট সৃষ্টিজগতের একটি অংশ মাত্র। (শরহু মুসলিম
লিন-নববী)
এসব হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি, সময় আল্লাহ তাআলার
সৃষ্টি। সময়ের কোনো ক্ষমতা নেই। সময় ভালো বা মন্দ হতে পারে না। একইভাবে সময়
শুভ বা অশুভও হতে পারে না। তাই ভালো কিছু ঘটলে সময়কে ধন্যবাদ জানানো বা
শুভ মনে করার কিছু নেই, খারাপ কিছু ঘটলে সময়কে গালি দেওয়া বা অশুভ মনে
করারও কিছু নেই। বরং ভালো মন্দ যাই ঘটুক আমাদের কর্তব্য আল্লাহ তাআলার দিকে
ফেরা, তার শুকরিয়া আদায় করা ও সাহায্য প্রার্থনা করা।
আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন,কোনো কিছুকে অলুক্ষুণে মনে করা শিরক। কোনো কিছুকে অশুভ মনে করা শিরক,
কোনো কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে
কুধারণা জন্মে না, তবে আল্লাহ ওপর ভরসার মাধ্যমে আল্লাহ তা দূর করে দেন।
(সুনানে আবু দাউদ: ৩৯১২)
ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত
নয়, যে ব্যক্তি (কোন বস্তু, ব্যক্তি, কাজ বা কালকে) অশুভ বলে মানে অথবা
যার জন্য অশুভ লক্ষণ পরীক্ষা করে দেখা হয়, যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে অথবা
যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয়। যে ব্যক্তি জাদু করে অথবা যার নির্দেশে জাদু
করা হয়। (তাবরানি: ১৪৭৭০)