দুই দিন আগে এক কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। রমজানের আগের দিন শনিবার বিকেলে কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। লেবুর হালি যেখানে ছিলো ৪০ টাকা সেই লেবু আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হালি। পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে হঠাৎ করেই কুমিল্লার বাজারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরণের পণ্যের দাম। যদিও মুরগী ও গরুর মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে কিছু পণ্যের দাম বাজার ভেদে ভিন্নতাও দেখা গেছে। তবে সয়াবিন তেলের অভাব লক্ষ্য করা গেছে সব বাজারেই। বিশেষ করে ৫ লিটার ও ৮ লিটারের বোতলাজত সয়াবিন তেল বাজার থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা ৫ লিটারের সয়াবিন দোকানীদের কাছে বিক্রি করছেন না। আবার দুই লিটারের বোতলের সাথে তাদের কাছ থেকে আটা-ময়দা-ডাল কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুমিল্লার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়- তিন দিনের ব্যবধানে বেড়েছে লেবু-শসাসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির দাম। এবার অনেকটাই স্থিতিশীল ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও চিনির দর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লেবুর। পবিত্র মাহে রমজানের রোজাদারদের জন্য শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। রমজান ঘিরে লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে লেবুর দামও বেড়েছে।
তবে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম কিছুটা স্বাভাবিকই আছে- ছোলা বুট ১১০ টাকা, খেসারি ১১৫, মটর ৬৫ টাকা, মসুর ডাল মোটা ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৩০ টাকা কেজি। খোলা খেজুর ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি এবং কিছুটা উন্নতমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। অপরদিকে ‘আজওয়া’ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়ার সবজির মধ্যে টমেটো ২০ টাকা, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, ক্যাপসিকাম ১০০ টাকা, বিটরুট ১০০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন- ডিমের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বাজারে বর্তমানে লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা ডজন দরে। আগে এর দাম ছিলো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। এছাড়াও হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা হালি। কোয়েল পাখির ডিম ১৫ টাকা হালি। বাজারে ব্রয়ালর মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি, সোনালী মুরগী ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে।
শনিবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর সর্ববৃহত রাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য পণ্যের তুলনায় লেবু ও শসার দাম বেশি। কোথাও এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, কোথাও ৬০ টাকায়। আবার আকারে কিছু বড় এক হালি লেবুর দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকাও হাঁকছেন কোনো কোনো দোকানী। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই লেবুর দাম চড়া।
রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন, এখন তো লেবুর সিজন না। বর্ষায় আসবে লেবু সিজন। অনেক দিন ধরেই লেবুর দাম চড়া। বাজারে লেবু কম, চাহিদা বেশি। এজন্য দামও একটু বেশি। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম স্বাভাবিকই আছে।
বাজার করতে আসা সালাহউদ্দিন নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, শসা ও লেবুর দাম খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন। চাহিদা বেশি থাকায় তারা ইচ্ছে করেই রাতারাতি ২০-৩০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত তিন দিন যাব কুমিল্লা নগরীর অন্তত চারটি বাজার ঘুরে কোথাও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দেখা মিলেনি। কোনো কোনো দোকানে একেবারেই তেল মিলছে না। কেউ কেউ বিক্রি করছেন খোলা তেল। কারো কারো কাছে মিলছে এক দুই লিটারের বোতল। ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্তত ৩ মাস ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বোতলজাত তেলের লেভেলে ১৭৫ টাকা কেজি লেখা থাকে। সেই তেল বোতল থেকে বের করে ‘খোলা’ হিসেবে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন তারা।
সেই তথ্যের সূত্র ধরে নগরীর বাদশা মিয়া বাজারে গিয়ে বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই খোলা তেল বিক্রি করছেন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। বিষয়টি যাচাই করতে রাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে জানা গেলো আরেক তথ্য। বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিলাররা আমাদেরকে ৫ লিটারের বোতল দেন না। ২লিটার এক লিটারের বোতল আছে। এগুলো কিনতে হলেও সাতে চাল-ডাল আটা-ময়দা কিনতে হয় বাধ্যতামূলক। এগুলো আবার আলাদা বিক্রি করতে হয়। আজকে যে তেল এনেছি- সাথে চাল ও ডাল আনতে হয়েছে। না হয় তেল বিক্রি করে না। শুধু আমি না, সব দোকানিকেই এই শর্তে তেল কিনতে হবে। তবে এসব তেল আমরা গায়ের রেটেই বিক্রি করছি।
কুমিল্লার বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, অনেক ক্রেতাই তেল কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। সরবরাহ কম থাকায় তারা সয়াবিন তেল ক্রেতাদের দিতে পারছেন না। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তাও বলতে পারছেন না।