রক্ত
দিতে চাইলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। সমকামী বা বহুগামী হলে
চলবে না। প্রতি দু’বার রক্ত দেওয়ার মধ্যে অন্তত তিন মাস বিরতি থাকতে হবে।
রক্ত দিতে চাইলে সুস্থ লোকের মধ্যে যেসব গুণ বা শর্ত থাকতে হবে তা হলো Ñ
* রক্তদাতার শারীরিক ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি হতে হবে।
* বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
* রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১২ গ্রাম/ডিএল বা তার বেশি থাকতে হবে।
* নাড়ির গতি ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে।
* ঔষুধ সেবন ছাড়া রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকতে হবে।
* শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ থেকে মুক্ত হতে হবে।
* শরীরের যে স্থান থেকে সুই দিয়ে রক্ত নেওয়া হয় সে স্থান চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে।
* পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করে নিতে হবে যে রক্তদাতা রক্তবাহিত রোগমুক্ত।
*
রক্তদাতার বাহুর বা নিম্ন বাহুর সম্মুখভাগ সুইয়ের আঘাতজনিত-চিহ্ন মুক্ত
থাকতে হবে। কেননা সুইয়ের আঘাতগ্রস্ত লোক পেশাদার রক্তদাতা বা স্বতঃপ্রণোদিত
ব্যথানিবারণী ঔষুধ গ্রহণকারী নেশাগ্রস্ত বলে চিহ্নিত।
যেসব রোগ থাকলে রক্তদাতাকে সারাজীবন রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ঃÑ
ক্যান্সার,
হৃদরোগ, রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, অকারণে ওজন কমতে থাকলে, ইনসুলিন-নিয়ন্ত্রিত
ডায়াবেটিস থাকলে, হেপাটাইটিস-বি থাকলে, ক্রনিক নেফ্রাইটিসে আক্রান্ত হলে,
এইডস সংক্রমিত হলে, বিপজ্জনক আচরণে অভ্যস্ত হলে, যকৃতের রোগী, যক্ষ্মার
রোগী, নালিহীন গ্রন্থি আক্রান্ত রোগী, সিজোফ্রেনিয়া (মানসিক ভারসাম্যহীন),
লেপ্রসি, মৃগী রোগী, হাঁপানি, পলিসাইথেমিয়া ভেরা প্রভৃতি রোগ থাকলে।
সাময়িকভাবে যারা রক্ত দিতে পারবে না ঃÑ
গর্ভপাত
হলে Ñছয় মাসের জন্য; রক্ত গ্রহণকারী Ñ ছয় মাসের জন্য; সার্জারি গ্রহণকারী
Ñ১২ মাসের জন্য; বুকের দুধ খাওয়ানো মা Ñ১২ মাসের জন্য (শিশুর জন্মের পর
থেকে); টাট্টোমার্কধারী Ñছয় মাসের জন্য: চিকিৎসাসম্পন্ন ম্যালেরিয়ার রোগী
Ñতিন মাসের জন্য (এনডেমিক এরিয়ায়); টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগী Ñ১২ মাসের জন্য
(রোগমুক্তির পর); বিভিন্ন টিকা গ্রহণকারী Ñ১৫ দিনের জন্য; হেপাটাইটিসে
আক্রান্ত পরিবারের সদস্য Ñ১২ মাসের জন্য; রেবিস ভ্যাকসিন-১২ মাসের জন্য
(টিকা নেওয়ার পর); হেপাটাইটিস ইমিউনগ্লোবিউলিন Ñ১২ মাসের জন্য।
খেয়াল
রাখতে হবে, ত্বকের যে স্থানের শিরা থেকে রক্ত নেওয়া হবে, সে স্থানের
কেন্দ্র থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার এলাকা পর্যন্ত জীবাণুবিধ্বংসী দ্রবণ দিয়ে
পরিষ্কার করে নিতে হবে। সুই শিরায় প্রথম প্রচেষ্টায়ই ঢোকাতে হবে। রক্ত
পরিমাণমতো নেওয়ার জন্য রক্তদাতাকে আরামদায়ক ডোনার চেয়ারে বা মাথার নিচে
বালিশ দিয়ে শুইয়ে রক্ত সংগ্রহ করতে হবে, একটি আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে। রক্ত
দেওয়া শেষ হওয়ার পর রক্তদাতার প্রতি কিছুক্ষণ যত্নসহ নজর দিতে হবে এবং
অন্তত পাঁচ মিনিট চেয়ার বা বিছানায় শুইয়ে রাখতে হবে রক্তদাতা সম্পূর্ণ
সুস্থবোধ করলেও। কারণ এ পাঁচ মিনিট তাকে গিডিনেসের মতো একটি বৃহৎ
প্রতিক্রিয়া থেকে সুরক্ষা করে। তারপর আরও ১০ মিনিট একটি রিফ্রেশমেন্ট কক্ষে
আরাম-আয়েশে তরল পানীয় গ্রহণ করতে হবে রক্তদাতাকে। খেয়াল রাখতে হবে, শিরায়
সুই ঢোকানোর স্থানে রক্তক্ষরণ বা ত্বকে বিক্রিয়া হচ্ছে কি না, হলে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। খুব বেশি ব্যথা অনুভূত হলে বরফ লাগাতে হবে।
রক্ত দেওয়ার দিন বেশি করে পানীয় পান করতে হবে এবং বেশি পরিশ্রমের কাজ থেকে
বিরত থাকতে হবে।
এ জন্য সামগ্রিক রক্তদান পর্বটি একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হওয়া অপরিহার্য।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ