ব্রাহ্মণপাড়া
বন্যায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ফসলের প্রায় শতভাগ বিনষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে
ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা। উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার
কৃষক। এর ফলে পরবর্তী চাষাবাদ নিয়ে কৃষকেরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত গ্রামের কৃষক আলী হোসেন (৫০) তিনি এ
বছর ৬২ শতাংশ জমিতে আউশ ধান, ৪৫ শতাংশ জমিতে রোপা আমন ও ১৯ শতাংশ জমিতে
আগাম জাতের সবজির করেছিলেন। বন্যার কারণে তাঁর সব ফসলই পানিতে ডুবে পচে
নষ্ট হয়ে যায়।
আলী হোসেন ভারাক্রান্ত মনে বলেন, সংসারে স্ত্রী,
ছেলেমেয়েসহ মোট ৭ জন সদস্য। এই জমির ফসল দিয়েই তাঁদের সারা বছরের খাবার
জোটে। তিনি জানেন না এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠবেন এবং ভবিষ্যতে
পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গেরস্ত। এ জন্য সরকারি
বা বেসরকারি কোনো সাহায্যও পাই না। সব মিলিয়ে বিপদে আছি। এ ছাড়া জমিতে পলি
পড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে চাষাবাদ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।’
শুধু আলী হোসেন নন,
বন্যায় ব্রাহ্মণপাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর ৩০ হাজার কৃষক। সিদলাই ইউনিয়ন
পোমকাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, তিনি ৪৮ শতাংশ জমিতে রোপা আমন
ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। কিন্তু বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধানের সব
চারা পচে গেছে। একই ইউনিয়নের বেড়াখোলা গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম বলেন, ৯০
শতাংশ জমিতে আধা-পাকা আউশধান ছিলো জমির ফসল পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। এখন
আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। এখন আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
ব্রাহ্মণপাড়া
সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক বলেন,বন্যার কারণে তাঁর ইউনিয়নে
প্রায় ৩৫ শত কৃষকের ধানি জমি ও আগাম জাতের বিভিন্ন সবজির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অকল্পনীয়।
ব্রাহ্মণপাড়া
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,ব্রাহ্মণপাড়া এ বছর গোমতী ও সালদানদী ভাঙা পড়ে
বন্যায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের শতভাগ ফসল বিনষ্ট হয়েছে। টাকার হিসাবে ক্ষতির
পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা। উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে মোট ৩০ হাজার কৃষক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।এর মধ্যে উপজেলায় আউশধান পাকা-আধা পাকা ১৪ হাজার ৫ শত
কৃষকের ৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, রোপা আমন ধানের বীজতলা ৮ হাজার ২৫০ জন
কৃষকের প্রায় ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, রোপা আমন ধান ২৫ শত ৮০ জন কৃষকের
ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা, সবজি ও রবি ফসল ৩ হাজার ৮৪০ জন কৃষকের
ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আউশ
ধান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ
মাসুদ রানা বলেন, এবছর বন্যায় ব্রাহ্মণপাড়ায় ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি
আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বীজ ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য তাঁদের তালিকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকেরা
যাতে স্বল্প সুদে কৃষিঋণ পেতে পারেন, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।