ক্স খুটি ভেঙ্গেছে ৮৪টি, ট্রান্সফরমার বিকল ৬২টি
ক্স প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
ক্স ৪৮ ঘন্টায়ও পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়নি
ক্স আন্দোলন করতে কর্মস্থল ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান ৩০ শতাংশ লাইনম্যান
কুমিল্লায়
ঘুর্ণিঝড় ‘শক্তি’র কবলে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে বৈদ্যুতিক লাইন। ঘুর্ণিঝড়ের
প্রভাবে কোথাও বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে। আবার কোথাও
ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে তার ছিঁড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ
বিপর্যয় ঘটে পুরো জেলা জুড়ে। ৪৮ ঘন্টায়ও শতভাগ বিদ্যুৎ লাইন সংস্কার করতে
পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি সমিতির ৩০ শতাংশ লাইনম্যান আন্দোলন
করতে ঢাকায় যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামতে হিমশীম খাচ্ছে
সমিতিগুলো।
জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতের ৪টি
সমিতির অধীনে কুমিল্লা মহানগরীসহ ১৭টি উপজেলা এবং পাশর্^বর্তী ২টি জেলার
আরও ২টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে আসছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত অনুমান
১১টায় প্রবল বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাসে কুমিল্লা জেলার প্রায় সকল উপজেলার
বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো জেলা। প্রথম
২৪ ঘন্টায় জেলার ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এতে
জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোনের চার্জ বন্ধ
হয়ে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১, ২, ৩
ও ৪ এর সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে ঘুর্ণিঝড়ে ৮৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে।
ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে ৬২টি এবং প্রায় সাড়ে ৪শ স্থানে বিদ্যুতের তাঁর
ছিঁড়ে গেছে। এছাড়াও দুইশতাধিক স্থানে পোল হেলে যাওয়া, শতাধিক স্থানে ক্রস
আর্ম ভেঙ্গে, দেড়শতাধিক স্থানে ইনসুলেটর ও ৩ শতাধিক স্থানে মিটার ভেঙ্গে
বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। প্রাথমিক ভাবে অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতির
আশঙ্কা করছেন সমিতিগুলো।
কুমিল্লার চারটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির
মহাব্যবস্থাপকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১
এর অধীনে চারটি উপজেলায় ২৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১৯টি ট্রান্সফরমার
বিকল হয় এবং ১৫৫ স্থানে বিদ্যুতের তাঁর ছিড়ে যায়। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ
হয় চান্দিনা উপজেলায়। শুধুমাত্র ওই উপজেলায় ৮টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে
গেছে। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে ৬টি উপজেলায় ৭টি বৈদ্যুতিক
খুঁটি ভেঙ্গে এবং ১৩টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ৬টি উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৩টি বৈদ্যুতিক
খুঁটি ভেঙ্গে এবং ১৮টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সমিতির অধীনে ১৮০টি
স্থানে বৈদ্যুতিক তাঁর ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কুমিল্লা পল্লী
বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর অধীনে ৩টি উপজেলায় ৯টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১২টি
ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৭৬টি স্থানে বৈদ্যুতিক তাঁর ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ
বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের
বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান- বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত (শনিবার রাত সাড়ে ৭টা) আমাদের এলাকায়
বিদ্যুৎ আসেনি। মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে আগেরদিন। ফ্রিজ থেকে পানি বের
হয়ে সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চান্দিনা উপজেলার সব্দলপুর গ্রামের
বাসিন্দা সোহেল রানা জানান- বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ
ছিল না। সন্ধ্যায় একটু উঁকি দিয়ে ঘন্টাখানেক ছিল। তারপর সেই বিদ্যুৎ আসে
শুক্রবার বিকেলে। ততক্ষণে আমার হেচারীর শতশত মুরগীর ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
কুমিল্লা
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়-
ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ লাইন নির্মাণ নিজেদের লাইনম্যান সংকট থাকায় বহিরাগত
লোকজন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি সমিতিতে ১-২শ লাইনম্যান নিয়োজিত।
কিন্তু আন্দোলন করতে তারা ঢাকায় আছে ৩০ শতাংশ। এই বিপর্যয়ে লাইনম্যানের
অনেকটা সংকটে রীতিমতো হিমশীম খেতে হচ্ছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ
সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু রায়হান জানান- ঘুর্ণিঝড়ে বৈদ্যুতিক
লাইন অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঝড়ের রাত থেকেই আমাদের লোকজন কাজ করছে।
বর্তমানে আমাদের সবগুলো লাইনই চালু আছে, তবে বিভিন্ন সেকশন বন্ধ থাকায় কিছু
কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।